অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ : ঝিনাইদহ সদর, হরিণাকুণ্ডু ও শৈলকূপা উপজেলার বিভিন্ন ইউনিয়নে স্বতন্ত্র ও বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থীরা নির্বিঘ্নে ভোট করতে পারছে না বলে অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ করেও তারা প্রতিকার পাচ্ছেন না। ফলে ঝুঁকি নিয়ে প্রার্থীদের ভোট করতে হচ্ছে। পুলিশ অভিযোগ পেয়ে প্রতিপক্ষ প্রার্থীদের সতর্ক করলেও একই অপরাধের পুনরাবৃত্তি ঘটছে। 

সাগান্না ইউনিয়নে সোমবার স্বতন্ত্র প্রার্থী আলাউদ্দীন আল মামুনের উপর দ্বিতীয় দফায় হামলার চেষ্টা করে। খবর পেয়ে তাকে অবরুদ্ধ অবস্থায় পুলিশ ও র‌্যাব বৈডাঙ্গা বাজারের ইউনিয়ন পরিষদের ভবন থেকে উদ্ধার করে। এর আগে একই বাজারে নৌকার প্রার্থীর লোকজন তাকে হত্যার চেষ্টা করেন বলে অভিযোগ করেন আলাউদ্দীন। বাথপুকুরিয়া গ্রামে তার ৪/৫ জন কর্মীকে মারধর করা হয়। ভয়ে তার কর্মীরা ভোটের মাঠে দাড়াতে পারছেন না বলে তিনি অভিযোগ করেন।

বৈডাঙ্গা বাজারের ব্যবসায়ী সিরাজুল ইসলাম অভিযোগ করেন, তারা সোমবার সকালে শান্তিপূর্ন পরিবেশে ভোটের প্রচারণা করছিলেন। এ সময় নৌকা প্রতিকের প্রার্থীর চিহ্নিত কিছু লোক লাঠি সোটা নিয়ে তাদের উপর হামলার চেষ্টা করে। নিরুপায় হয়ে তারা ইউনিয়ন পরিষদের ভবনে আশ্রয় নেন। খবর পেয়ে পুলিশ ও র‌্যাব তাদের উদ্ধার করে। এ বিষয়ে নৌকার প্রার্থী মোজাম্মেল হক অভিযোগ অস্বীকার করে বলেন, স্বতন্ত্র প্রার্থীর কোন ভোট নেই, এ কথা বুঝতে পেরে তিনি এ সব আজগুবি অভিযোগ করছেন। তিনি বলেন র‌্যাব ঘটনাস্থলে এসে উল্টো স্বতন্ত্র প্রার্থীকে বকাঝকা করে গেছেন বলে মোজাম্মেল দাবী করেন।

এদিকে সাধুহাটী ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী কাজী নাজির উদ্দীন অভিযোগ করেন, বোড়াই গ্রামে তার নির্বাচনী অফিসে হামলা চালানো হয়েছে। তিনি পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

গান্না ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী নাসির মালিথা অভিযোগ করেন, তার প্রচার মাইক চন্ডিপুর বাজারে ভাংচুর করেছে। গ্রামে গ্রামে তার প্রচার কাজে বাধা দেওয়া হচ্ছে। নলডাঙ্গা ইউনিয়নের স্বতন্ত্র প্রার্থী সাইফুল আলম খান রিপন অভিযোগ করেন, নৌকার প্রার্থী রেজাউল করিম রেজার সমর্থকরা গড়িয়ালা গ্রামে তার প্রচার মাইকে বাধা দেয়। এ বিষয়ে তিনি সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারের কাছে অভিযোগ করেন। হরিণাকুন্ডুর শ্রীফলতলা গ্রামে নৌকা ও বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে এক রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষে ৪৫ জন আহত হন। হরিণাকুণ্ডুর রঘুনাথপুর ইউনিয়নে হুমকী পাল্টা হুমকী অভিযোগ করেছেন চেয়ারম্যান প্রার্থীরা। শৈলকূপার বিভিন্ন ইউনিয়নে নির্বাচনী আচরণ বিধি ভঙ্গ করে মটরসাইকেল শোডাউন মিছিল করা হচ্ছে। এতে জনমনে ভয় ও আতংক ছড়িয়ে পড়ে।

শৈলকূপা উপজেলার সারুটিয়া ইউনিয়নে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী এবং বিদ্রোহী প্রার্থীর সমর্থকদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় উভয় পক্ষের অন্তত পাঁচজন আহত হন। বিক্ষুব্ধ সমর্থকরা তিনটি মোটরসাইকেলে অগ্নিসংযোগ করে পুড়িয়ে দেয়। শৈলকূপার কাতলাগাড়ি বাজারে আওয়ামী লীগ মনোনীত চেয়ারম্যান প্রার্থী মাহমুদুল হাসান মামুন মোটরসাইকেল শোডাউন দিয়ে কাতলাগাড়ী বাজারে পৌঁছালে বিদ্রোহী চেয়ারম্যান প্রার্থী জুলফিকার আলী কাইসার টিপুর সমর্থকরা হামলা চালান। এতে উভয়পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ ছড়িয়ে পড়ে।

এসব বিষয়ে জেলা নির্বাচন কর্মকর্তা মোহা. আব্দুস ছালেক বলেন, আচরণ বিধি ভঙ্গ করার খবর পাওয়া মাত্রই আমি ব্যবস্থা নিতে উপজেলা নির্বাচন কর্মকর্তাদের নির্দেশনা দিচ্ছি। কেও আইন ভঙ্গ করলে ছাড় পাবে না। তিনি বলেন প্রার্থীরা যেন পুলিশ ও সংশ্লিষ্ট রিটার্নিং অফিসারকে লিখিত ভাবে জানায়।

(একে/এসপি/ডিসেম্বর ১৩, ২০২১)