শাহ্ আলম শাহী, দিনাজপুর : নিন্মপদস্থ কর্মচারীকে যৌন হয়রানির ঘটনায় অবশেষে বাংলাদেশ গম ও ভুট্রা গবেষণা ইনষ্টিটিউট (বিডাব্লুউএমআরআই) এর হিসাব বিভাগের ভারপ্রাপ্ত হিসাব রক্ষক মো.শহিদুল ইসলামকে জেল-হাজতে পাঠিয়েছে আদালত।

নিন্মপদস্থ কর্মচারীকে যৌন হয়রানী’র দায়েরকৃত মামলায় আজ মঙ্গলবার বিকেলে দিনাজপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন স্পেশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জামিন নিতে গেলে বিচার শরিফুদ্দিন আহমেদ বাংলাদেশ গম ও ভুট্রা গবেষণা ইনষ্টিটিউট (বিডাব্লুউএমআরআই) এর হিসাব বিভাগের ভারপ্রাপ্ত হিসাব রক্ষক মো.শহিদুল ইসলামকে জেল-হাজতে প্রেরণের নিদের্শ দেয়।

দিনাজপুরের নশিপুরস্থ বাংলাদেশ গম ও ভুট্রা গবেষণা ইনষ্টিটিউট(বিডাব্লুউএমআরআই) হিসাব বিভাগের ভারপ্রাপ্ত হিসাব রক্ষক মো.শহিদুল ইসলামের বিরুদ্ধে সম্প্রতি একই বিভাগের কর্মরত এক নারী কর্মচারী যৌন হয়রানী ও ভয়ভীতি দেখিয়ে অশ্লীল ছবি ধারণ করে ব্লাকমেইল করার অভিযোগ তুলে থানায় মামলা করেছে। এ ঘটনার পর অভিযুক্ত শহিদুল ইসলাম দীর্ঘদিন পলাতক থাকলেও কর্তৃপক্ষ তার বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থাই নেয়নি।পরে ভারপ্রাপ্ত হিসাব রক্ষক মো.শহিদুল ইসলাম উচ্চ আদালত থেকে অন্তবর্তীকালীন জামিন নিয়ে দিনাজপুরে ফিরে কর্মস্থলে যোগদেন।
আজ মঙ্গলবার দিনাজপুর নারী ও শিশু নির্যাতন দমন স্পেশাল জেলা ও দায়রা জজ আদালতের জামিন নিতে গেলে বিচার শরিফুদ্দিন আহমেদ তাকে জেল-হাজতে প্রেরণের নিদের্শ দেন।

মামলার সংক্ষিপ্ত বিবরণে জানা যায়, দিনাজপুরে নশিপুরস্থ বাংলাদেশ গম ও ভুট্রা গবেষণা ইনষ্টিটিউট (বিডাব্লুউএমআরআই) দিনাজপুর কোতয়ালী থানায় দায়েরকৃত মামলার নথি সুত্রে জানা গেছে, গাইবান্ধা জেলার পলাশবাড়ি এলাকার স্থায়ী বাসিন্দা নুরুজ্জামানের ছেলে, বর্তমানে দিনাজপুর শহরের ঘাসিপাড়া এলাকার জনৈক আইনজীবী’র বাসার ভাড়াটিয়া বাংলাদেশ গম ও ভুট্রা গবেষণা ইনষ্টিটিউট (বিডাব্লুউএমআরআই) এর হিসাব বিভাগের ভারপ্রাপ্ত হিসাব রক্ষক মো.শহিদুল ইসলাম একই বিভাগে কর্মরত জনৈক নারী কর্মচারীকে বিভিন্ন সময় কুপ্রস্তাব দেয়া, পরিধান কাপড় ধরে টানা হ্যাচড়া ছাড়াও ওই নারী কর্মচারীর শরীরের স্পর্শকাতর স্থানে হাত দেয়া এবং ভয়ভীতি দেখিয়ে জোরপূর্বক ধর্ষণের চেষ্টা করে আসছিলো। এরইমধ্যে ভারপ্রাপ্ত হিসাব রক্ষক মো.শহিদুল ইসলাম জোরপূর্বক ভাবে ওই নারী কর্মচারী’র কিছু নগ্ন ছবি মোবাইল ফোনে ধারণ করে। পরে ওই ছবি সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে ফাস করে দেয়ার ভয় দেখিয়ে বেশ কয়েকবার ধর্ষণের অপচেষ্টা চালায়। কুচরিতার্থ হাসিল না হওয়ায় বিডাব্লুউএমআরআই এর হিসাব বিভাগের ভারপ্রাপ্ত হিসাব রক্ষক মো.শহিদুল ইসলাম গত ০৯ সেপ্টেম্বর’২০২১ সন্ধায় ওই নারী’র উপশহরস্থ বাড়িতে গিয়ে ১২ লাখ টাকা চাঁদা দাবি করে। ১২ লাখ টাকা না দিলে তার মোবাইল ফোনে ধারণকৃত নগ্ন-অশ্লীল ছবিগুলো ইন্টারনেট এবং ফেসবুকে ছেড়ে দেয়ার হুমকি দেয়।এ সময় ওই নারী কর্মচারী চিৎকার করলে আশপাশের লোকজন ছুটে আসে। সেসময় শহিদুল হুমকি দেয় যে ১২ লাখ টাকা না দিলে তার মোবাইল ফোনে ধারণকৃত নগ্ন-অশ্লীল ছবিগুলো ইন্টারনেট এবং ফেসবুকে শুধু ছেড়ে দিবে না ওই নারীকে ধর্ষনের পর হত্যা করে লাশ গুম করবে।

এই ঘটনার প্রেক্ষিতে ওই নির্যাতিত নারী গত ২৬ সেপ্টেম্বর দিনাজপুর কোতয়ালী থানায় নারী ও শিশু নির্যাতন এবং চাঁদাবাজি’র একটি মামলা দায়ের করেন। মামলা দায়েরও পরও অভিযুক্ত শহিদুল বিভিন্ন ভাবে বাদীকে হয়রানী ও ভয়ভীতি প্রদর্শন করে আসছিলো। শেষে আইনজীবীকে দিয়ে ৯ ডিসেম্বর বৃহস্পতিবার আদালতের মাধ্যমে বাদিনীকে সড়ে পাঁচ লাখ টাকা ক্ষতিপূরণ দিয়েও ছাড় পেতে চায় শহিদুল। এ কারণে সাড়ে ৪ ঘন্টা কাস্টডিতে থেকেও মুসলেকার মাধ্যমে অন্তবর্তীকাল জামিন পায় তিনি। কিন্তু, বাদিনী অর্থের প্রলোভন প্রত্যাক্ষাণ করে কোন ক্রমেই তা মেনে না নিয়ে আদালতের কাছে ন্যায্য বিচারের দাবী করেন। তাই, আদালত আজ মঙ্গলবার তাকে জেল-হাজতে প্রেরণের নির্দেশ দিয়েছেন।

এ বিষয়ে মামলার বাদিনী অনুভুতি প্রকাশে জানিয়েছেন,'আমি কিছুটা হলেও আজ স্বস্তি পেলাম। এ ধরনের একজন জঘণ্য ব্যক্তি'কে বাইরে না রেখে হাজতে দিয়েছে আদালত।এতে কর্মস্থলের অনেক নারী স্বস্তি ফিরে পেয়েছে। রেহাই পেয়েছে এমন কুলাঙ্গারের থাবা থেকে।'

এ বিষয়ে বাংলাদেশ গম ও ভুট্রা গবেষণা ইনস্টিটিউট এর মহাপরিচালক ড. গোলাম ফারুকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তিনি ঢাকায় অবস্থান করছেন বলে জানান। তিনি বলেন, বিষয়টি আদালতে গড়িয়েছে।আমরা আদালতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল হয়ে আদালতের সিদ্ধান্তই মেনে নিবো। আদালতকে সহযোগিতার জন্যে প্রাতিষ্ঠানিক যা যা করণীয় সেসব পদক্ষেপ গ্রহণ করবো।

খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এ মামলার বাদী’র পক্ষে আইনজীবী ছিলেন,পিপি এ্যাডভোকেট রবিউল ইসলাম, নারী ও শিশু নির্যাতন দমন স্পেশাল পিপি এ্যাডভোকেট তৈয়রা বেগম, এ্যাডভোকেট হুসনা বেগম। এবং বিবাদীর পক্ষে আইনজীবী ছিলেন, এ্যাভোকেট একরামুল আমীন, এ্যাডভোকেট তৌহিদুল ইসলাম সরকার সহ অন্যরা।

(এস/এসপি/ডিসেম্বর ১৪, ২০২১)