নিজস্ব প্রতিবেদক, কুমিল্লা : কুমিল্লায় কোরবানী ঈদকে সামনে রেখে গরু মোটা তাজাকরণ খামারীরা এখন ব্যস্ত সময় কাটাচ্ছেন। কোরবানীর হাটে পশু তোলার আগে তাদের মোটা-তাজা করণে এবছর ভিন্ন কৌশল অবলম্বন করছেন কুমিল্লার গো-পালকরা। জেলার বাণিজ্যিক ভিত্তিক ও কৃষক পর্যায়ের খামারীরা কোরবানি ঈদের ৩-৪ মাস আগ থেকে গরু মোটা-তাজা করার কাজ শুরু করলেও ঈদের ৩-৪ সপ্তাহ আগ থেকে গরু দ্রুত মোটা-তাজা ও ওজন বৃদ্ধিতে ব্যবহার করা হচ্ছে বিষাক্ত স্টেরয়েড।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, গরু মোটা-তাজা করণ প্রক্রিয়ার প্রথম ধাপের শুরু দিকে গরুর শরীরে শক্তি, হজম ক্ষমতা ও রোগ-প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধির লক্ষ্যে খড়-ভূষি-গুড়-ইউরিয়া-খৈল পানির সাথে পরিমিত পরিমাণে ভিটামিন ওষুধ খাওয়ানো হয়। কিন্তু ওই প্রকল্পের শেষের দিকে (ঈদের ৩-৪ সপ্তাহ পূর্ব থেকে বিক্রি পর্যন্ত) পশুকে দ্রুত মোটাতাজা করতে স্টেরয়েড, ডেক্রামিথাসন, কোর্টিসল, বিটামিথাসন, হাইড্রোকর্টিসন ও প্রেডনিসলনের মতো মারাত্মক হরমোন ব্যবহার করা হচ্ছে।

দ্রুত গরুকে মোটাতাজা করতে এসব ইনজেকশন একটি ষাঁড় বা গরুর সহন ক্ষমতার তুলনায় ৫ থেকে ১০ গুণ বেশী দেয়া হয় বলে জানান কুমিল্লার পশুবিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকেরা। স্টেরয়েড জাতীয় ওষুধ প্রয়োগে পশুর চামড়ার ভেতরে বাড়তি পানি ও চর্বি জমে বেশি মোটা দেখা যায়। এতে পশু মোটা হলেও গোশত ওজনে কম ও স্বাদহীন হয়ে পড়ে। জবাইয়ের পর গোশতে জমাট রক্ত, কালচে দাগ দেখা যায়। কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে অতিরিক্ত লাভের আশায় কুমিল্লার কিছু অসাধু খামারী ও ব্যবসায়ীরা বাড়ন্ত, অল্পবয়সী, চিকন ও কঙ্কালসার গরু ক্রয় করে হরমোন ইনজেকশন ও ট্যাবলেট খাইয়ে গরু মোটাতাজা করে পশু হাটে বিক্রি করার প্রক্রিয়ায় নেমেছে।

প্রতিটি স্টেরয়েড গ্রুপের ট্যাবলেটের পাশাপাশি বিভিন্ন হরমোন ইনঞ্জেকশন ব্যবহার করা হচ্ছে। ২৫ টাকা দামের প্রতিটি ইনঞ্জেকশন একটি গরুকে প্রতিদিন ১-২ বার দেওয়া হয়।

জানা যায়, চোরাচালানের মাধ্যমে ভারত, মিয়ানমার, থাইল্যান্ডসহ বিভিন্ন দেশ থেকে ডেক্সমেথাসন বা ওরাডেক্সন স্টেরয়েড-জাতীয় সস্তা ট্যাবলেট এখন কুমিল্লা মহানগরীসহ বিভিন্ন উপজেলার ভেটেরিনারী ওষুধ দোকান গুলোতে পাওয়া যাচ্ছে। প্রতিটি গরুকে এর যে কোনো একটির পাঁচটি ট্যাবলেট প্রতিদিন খাইয়ে থাকেন। এসব ওষুধ খাওয়ালে অল্প দিনের মধ্যে অস্বাভাবিক মোটা মনে হলেও পশু জবাইয়ের পর সে তুলনায় গোশত পাওয়া যায় না। ওষুধ বা ইনঞ্জেকশন ব্যবহারের ২১ দিনের মধ্যে গরু বিক্রি করে দিতে হয় না হলে ওই গরু মারা যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে বলে জানান খামার ব্যবসায়ীরা।

কুমিল্লার পশুবিশেষজ্ঞ ও চিকিৎসকেরা জানান, সরকার পশুর জন্য হরমোন ব্যবহার নিষিদ্ধ করেছে। এ আইন কার্যকর করতে পারলে হরমোনের ব্যবহার কমতে পারে। এর পাশাপাশি বিকল্প কী ব্যবহার করা যায় সেটিও আমাদের ভাবতে হবে। যেসব উপাদান পশুর প্রোটিন বৃদ্ধি করে এবং মানুষের জন্য ক্ষতিকারক নয়, তা ব্যবহার করা যেতে পারে। স্টেরয়েড ব্যবহৃত গরুর মাংস খাওয়ার পর মানুষের কিডনি, লিভার, অন্ধত্ব, পুরুষত্ব ও মাতৃত্বহীনতা, ক্যান্সারসহ বিভিন্ন স্পর্শকাতর অঙ্গে রোগ সৃষ্টি করে। ফলে মানুষের শরীরে রোগপ্রতিরোধ ক্ষমতা কমে গিয়ে বিভিন্ন প্রাণঘাতী রোগের সৃষ্টি হতে পারে।

(এইচকেজে/এএস/সেপ্টেম্বর ১৮, ২০১৪)