রিপন মারমা, কাপ্তাই, (রাঙামাটি) : কাপ্তাই জোনের উদ্যোগে কাপ্তাই হ্রদে মনোরম নৌকা বাইচ প্রতিযোগীতা কাপ্তাই হ্রদের স্বচ্ছ জলরাশিতে স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়ন্তী ও পার্বত্য শান্তি চুক্তির দুই যুগ পূর্তি এবং বঙ্গবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকী গ্রাম বাংলার ঐতিহ্যবাহী নৌকাবাইচ প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়।

শনিবার (১৮ডিসেম্বর) দুপুরে পার্বত্য চুক্তির দুই যুগ পূর্তি উপলক্ষে কাপ্তাই সেনা জোনের উদ্যোগে এই প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। নৌকাবাইচে জেলা বিভিন্ন প্রান্ত থেকে নৌকা নিয়ে হাজির হয় প্রতিযোগীরা। ঐতিহ্যবাহী এ নৌকাবাইচ দেখতে কাপ্তাই হ্রদের তীরে ভিড় করে হাজারো নারী-পুরুষ।রাঙামাটি জেলার বিভিন্ন স্থান থেকে নৌকা নিয়ে বাইচে যোগ দেন নারী ও পুরুষের ৩০ টি দল। হ্রদের স্বচ্ছ জলে বৈঠার তালে তালে এগিয়ে যায় প্রতিযোগিরা। আর এসময় হাজারো নারী-পুরুষ করতালির মাধ্যমে তাদের উৎসাহ দেয়। এই নৌকাবাইচকে ঘিরে কাপ্তাইয়ে পাহাড়ি-বাঙালি এক মিলনমেলা উৎসবে পরিণত হয়।

অনেকেই বোট-নৌকা নিয়ে হাজির হন নৌকা বাইচ দেখতে। শুধুমাত্র শহর থেকেই নয়; দূর গ্রাম থেকে পাহাড়ি নারী-পুরুষ নৌকাবাইচ দেখতে ভিড় করে।তাদের হর্ষোধ্বনি ও উল্লাসে এ সময় প্রতিযোগীরা বৈঠার তালে তালে এগিয়ে যায়। গ্রাম বাংলার এই ঐতিহ্যবাহী খেলায় মুগ্ধতা প্রকাশ পায় তাদের চোখে-মুখে।

বিলাইছড়ি থেকে আসা সূচরিতা বলেন, নৌকাবাইচ খেলা দেখতে এসেছি। পাড়া থেকে কয়েকটা বোট এসেছে। আমরা খুবই উপভোগ করি নৌকাবাইচ। আমাদের পাড়া থেকে নৌকা বাইচে বিভিন্ন ইভেন্টে কয়েকটি দল অংশ নিয়েছে। সবাই খুবই মজা করছি।

উক্ত পুরস্কার বিতরণ অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন,রাঙামাটি রিজিয়নের কমান্ডার বিগ্রেডিয়ার জেনারেল ইফতেকুর রহমান পিএসসি।প্রধান অতিথি বক্তব্যে তিনি বলেন,জাতি ধর্ম- বর্ণ নির্বেশেষে পাহাড়ি- বাঙালি আমরা সবাই বাংলাদেশের নাগরিক।তিনি আরোও বলেন, আমরা সবাই মিলে বাংলাদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাবো আজকের শান্তি চুক্তি দুই যুগ পার হল। চুক্তির ফলে পাহাড়ি-বাঙালির সম্প্রীতির সাথে বসবাস করছে। এই সম্প্রীতির বহিঃপ্রকাশ হলো এই আয়োজন।চ্যাম্পিয়ন হওয়ার বড় বিষয় নয়, যারা চ্যাম্পিয়ন হতে পারেননি তারা নিরাশ হওয়া কারণ নেই।আমরা দেখেছি প্রতিযোগি সবাই কত সুন্দর এবং সুশৃংখল ভাবে চেষ্টায় করেছে সবাই। যারা প্রতিযোগি অংশগ্রহণ করেছেন এবং যারা অনেক দুর থেকে কষ্ট করে নৌকা বাইস প্রতিযোগিতা উপভোগ করার জন্য এসেছেন তাদেরকে সেনাবাহিনীর পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাই।চুক্তির বর্ষপূর্তিতে হাজার হাজার সাধারণ পাহাড়ি-বাঙালি এই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছেন।

পুরুষ দলে চ্যাম্পিয়ন হয় কাপ্তাই নতুন বাজার দল এবং নারী দলে চ্যাম্পিয়ন হয় রাঙামাটি সদরের খিল্লামুরা দল। নৌ বাইচ শেষে প্রধান অতিথি বিজয়ীদের হাতে পুরস্কার তুলে দেন।

এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন,কাপ্তাই জোনের জোন কমান্ডার লেঃ কর্নেল আনোয়ার জাহিদ, বানৌজা শহীদ মোয়াজ্জেম ঘাঁটির অধিনায়ক মোঃ মনিরউদ্দীন মল্লিক, কাপ্তাই ডিজিএফআই অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোহাম্মদ আলী আক্কাস, বিলাইছড়ি জোনের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল মোঃ ইসরাত হাসান, জীবতলী ৭ আরই ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল ফেরদৌস হাসান, রাঙামাটি ১১ ইবি অধিনায়ক লেঃ কর্ণেল আশিকুর রহমান, রাঙামাটি জেলা পরিষদ সদস্য অংসুইছাইন চৌধুরী, কাপ্তাই উপজেলা চেয়ারম্যান মোঃ মফিজুল হক, উপজেলা নির্বাহী অফিসার মুনতাসির জাহান, কাপ্তাই থানার ওসি মোঃ নাসির উদ্দীন, চন্দ্রঘোনা থানার ওসি ইকবাল বাহার চৌধুরী, কর্ণফুলী সরকারি কলেজের অধ্যক্ষ এএইচএম বেলাল চৌধুরী, বিএসপিআই অধ্যক্ষ আব্দুল মতিন হাওলাদার, কাপ্তাই উপজেলা আওয়ামীলীগ সাধারন সম্পাদক ইব্রাহিম খলিল, কাপ্তাই ৪নং ইউপি চেয়ারম্যান প্রকৌশলী আব্দুল লতিফ, ২নং রাইখালী প্যানেল চেয়ারম্যান এনামুল হক, ৩নং চিৎমরম নবনির্বাচিত চেয়ারম্যান ওয়েশ্লিং মং মারমা সাংবাদিক সহ বিভিন্ন ব্যাক্তিবর্গ।

(আরএম/এএস/ডিসেম্বর ১৮, ২০২১)