পাথরঘাটা প্রতিনিধি : বৃহস্পতিবার গভীর রাতে সুগ্ধানদীতে অভিযান- ১০ লঞ্চে ভয়াবহ অগ্নিকান্ডের সময় নদীতে ঝাপদিয়ে বেঁচে গেলেন বরগুনার পাথরঘাটার সাংবাদিক বিনয় ভূষন কর্মকার / খোকনএর পরিবারের ৩ সদস্য। 

তারা হলেন, খোকন কর্মকারের স্ত্রী মাধবী কর্মকার,মেয়ে দেবস্মিতা ও পুত্র শুভ কর্মকার। তারা অগ্নিকান্ডের সময় দ্বিতীয় তলার ২০৮ নং কেবিনে অবস্থান করছিল।

ফিরে আসা সদস্যরা জানান, রাত ৩ টার পূর্বেই বরগুনার উদ্দেশ্যে ঢাকা থেকে ছেড়ে আসা অভিযান-১০ লঞ্চটিতে আগুন লাগে। লঞ্চযাত্রীদের চিৎকারে হঠাৎ দেবস্মিতার ঘুমভেঙেযায়।মেয়ে শব্দশুনে প্রথমে তার মাকে ঘুমথেকে ডেকে তোলে। পরে মায়ের কথা অনুযাই দেবস্মিতার ভাই শুভ কর্মকারকে ঘুম থেকে জাগায়।

শুভ কেবিনের দরজা খুলে ইঞ্জিন রুম বরাবর নীচ তলা থেকে দোতলায় ধোয়া ও আগুনের কুন্ডলী দ্বিতীয় তলায় উঠতে দেখতে পায়। রুমথেকে বেরহয়ে দৌড়ে নীচ তলায় গিয়ে ইঞ্জিন রুমের ভিতর আগুন জ্বলতে দেখে রুমে ফিরে এসে তাঁর মাকে জানায় মা তারাতারি ব্যাগনিয়ে বের হও নদীতে ঝাপদিতে হবে না হলে বাঁচা যাবেনা। শুভর মা মাধবী শুভকে বলেন নদীতে ঝাপদিলেওতো বাঁচবনা। ছেলে মাকে বলে মা আগুনে পুরে মরার চেয়ে নদীতে ঝাঁপদেয়া ভাল।

তখন কেবিন থেকে ব্যাগ নিয়ে তিনজন বেরহয়ে লঞ্চের ডেকের সামনে যাত্রী ওঠা নামার স্থানে চলে আসে, প্রথমে শুভ তার বোন সাতার না জানা দেবস্মিতাকে নিয়ে ও ব্যাগ নিয়ে নদীতে ঝাপদিয়ে বহুকষ্টে সাতরে তীরে উঠতে সক্ষয় হয়। তীওে উঠে মাকে নদীতে ঝাপদিতে বার বার তাগিদ দেয়।

তীর থেকে বহুদুরে লঞ্চ বিকল হয়ে অবস্থান করায় প্রথমে সাহস হয়নি শুভর মায়ের। পরে লঞ্চ তীরের কাছাকাছি পৌছলে ওই লঞ্চ থেকে নদীতে ঝাপদেয় এবং সাতার কাটা যাত্রীদের সহযোগীতায় তীরে পৌছায় এবং প্রানে রক্ষা পায়।
প্রানে বেঁচে যাওয়া অন্যান্য সদস্যরা জানান, তীরে ফেরা যাত্রীদের অনেকের স্বজন খুঁজে না পাবার আর্তনাদে স্থানীয় গ্রামবাসীরা আমাদের কাছে ফিরে এসে হারিকেন, টর্চলাইট ও মোবাইল টর্চ দিয়ে রাতের আধারে আলোদেয় যাতে যাত্রীদের একটু সুবিধা হয় । তারা জানান স্থানিয়দের আন্তরিকতার কোন কমতি ছিলনা।

লঞ্চ যাত্রীদের অনেকেই বলেন, রাত আড়াইটার দিকে প্রথমে আগুনলাগে। রাত তিনটার সময় তা ভয়াবহতায় রূপনেয়। যখন লঞ্চে আগুন লাগল তখন লঞ্চ চালকরা কেনযাত্রী বোঝাই লঞ্চটি নিয়ে তীরে পৌছায়নি। তীরে থামালে হয়ত এতগুলো মানুষের প্রান হানী ঘটত না। আগুন লাগা সম্পর্কে কেন যাত্রী সাধারনকে অবহিত করেন নি। অগ্নি নির্বাপক যন্ত্র কতটা কাজ করেছিল। অনেকে বলেন অগ্নিনির্বাপক ব্যাবস্থা ছিলই না।

তাদের আরও অভিযোগ লঞ্চে ওঠা নামার পথে মালের বস্তাদিয়ে ভরা থাকে এতেকরে দুর্যোগের সময় যাত্রী সাধারনের ওঠা নামায় বড় সমস্যার সৃষ্টি হয়। লঞ্চের ষ্টাফ কাওকে ওই সময় কোন সহযোগীতে করতে দেখতে পাননি আগত অন্যান্য যাত্রীরা। নদীতে ঝাপদেবার জন্য কোন ধরনের বয়া সরবরাহ করেননি লঞ্চ কতৃপক্ষ। যাদের কাছে কয়েক শতযাত্রী নিরাপদ মনে করেন কিন্তু কতটা নিরাপদ তা প্রমান করে দিলেন চালকগন। তাদের ব্যবহারে বা আচরনে আদৌ সন্তুষ্ট নন। এদের বিচারের আওতায় আনার জন্য সকল যাত্রী সাধারন উর্ধতন কতৃপক্ষের দৃষ্টি আকর্ষন করছেন। এদের বিরুদ্ধে ব্যাবস্থা নেয়ার জন্য।

(এটি/এসপি/ডিসেম্বর ২৫, ২০২১)