জে. জাহেদ, চট্টগ্রাম : শুধু ঢাকা-চট্টগ্রামের মহাসড়ক নয়। এসব মহাসড়কের নিয়ম ভেঙ্গে বন্দর নগরীর অলিগলিতেও দাপিয়ে বেড়াচ্ছে ছোট বড় লোহার স্ক্র্যাপ বহনকারী চৌদ্দ কিংবা ষোল চাকার ড্রাম ট্রাক। খোলা ট্রাকে থেকে লোহার পিন্ড ছিটকে পড়লেই ঘটছে মারাত্মক দুর্ঘটনা। বাড়তি ওজনে সড়কে চলতে গিয়ে গাড়িতে ঝাঁকুনি লাগলেই মাটিতে পড়ছে লোহার বস্তু। ফলে, সড়কে চলাচলকারী অন্য গাড়ির চাকাও ছিদ্র করছে প্রতিনিয়ত।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রাম শহরের পাশের কয়েকটি উপজেলা এলাকা হতে বেসরকারি ইস্পাত কারখানার জন্য দেশের বাইরে থেকে আমদানীকৃত কাঁচামাল চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হয়ে খোলা ট্রাক, ড্রাম ট্রাকসহ নানা বাহনে করে পণ্যগুলো আনা-নেয়া করা হয়।

এছাড়াও সকাল থেকে বিকেল জুড়ে আবার কর্ণফুলী উপজেলায় অবস্থিত বিভিন্ন মিল-কারখানা থেকে স্ক্র্যাপ বহরকারী ট্রাক সকাল থেকে রাত অবধি শহরে প্রবেশ করতে দেখা যায়। মইজ্জ্যারটেকে প্রায় এ দৃশ্য দেখা যায়। এ সময় ঘটে নানা দুর্ঘটনা। সড়কে ট্রাফিক পুলিশের নীরবতায় দিন দুপুরে আনা নেওয়া হচ্ছে এসব স্ক্র্যাপ। যেন দেখার কেউ নেই।

বিপদজনক এসব স্ক্র্যাপ লোহা বা ধারালো পণ্য গাড়িতে বহনের সময় তা ঢেকে আনা নেওয়ার নিয়ম থাকলেও প্রকৃতপক্ষে সংশ্লিষ্টরা তা মানছেন না। আর এভাবে আনা নেয়ার ফলে ধারালো পণ্যগুলো বাইরে পড়ার কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে মোটরসাইকেল আরোহী এবং সাধারণ পথচারী।

সা¤প্রতিক সময়ে ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে প্রায়ই যানবাহনের চাকা ছিদ্র হয়ে দুর্ঘটনা ঘটছে। এসব দুর্ঘটনার কারণ খুঁজতে গিয়ে গাড়ির চালক, হেলপার ও মালিকরা দেখেন অধিকাংশ দূর্ঘটনা ঘটছে গাড়ির চাকায় ধারালো কিছু ঢুকে যাওয়ায়। এতে তাদের মনে ক্ষোভ জন্মালেও এ অবস্থা থেকে পরিত্রাণের উপায় খুঁজে পাচ্ছে না।

চট্টগ্রাম আন্তঃজেলা বাস মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক কফিল উদ্দিন বলেন, এভাবে ঝুঁকিপূর্ণভাবে কোনো পণ্যই বহন করা উচিত নয়। ড্রাম ট্রাক বলেন খোলা ট্রাক বলেন এসবে কোনো নিয়মের তোয়াক্কা না করে, না ঢেকে পণ্য নেয়া হয়, এতে যেকোন সময় দুর্ঘটনার আশংকা থাকে।

সংশ্লিষ্ট সূত্রে জানা যায়, চট্টগ্রামের বেশ কয়েকটি বেসরকারি ইস্পাত কারখানার জন্য বাইরে থেকে আমদানীকৃত কাঁচামাল চট্টগ্রাম বন্দরে খালাস হয়ে খোলা ট্রাক, ড্রাম ট্রাকে করে পণ্যগুলো আনা নেয়া করে। বিপদজনক এসব স্ক্র্যাপ লোহা বা ধারালো পণ্য গাড়িতে বহনের সময় তা ঢেকে আনা নেওয়ার নিয়ম থাকলেও প্রকৃতপক্ষে সংশ্লিষ্টরা তা মানছেন না। আর এভাবে আনা নেয়ার কারণে ধারালো পণ্যগুলো বাইরে পড়ার কারণে ঝুঁকিতে রয়েছে মোটরসাইকেল আরোহী এবং সাধারণ পথচারীরা।

এক বেসরকারি ইস্পাত কারখানার পরিচালক তপন কুমার সেন বলেন, শুধু আমরা নই আরও অন্যান্য প্রতিষ্ঠানও খোলা ড্রাম ট্রাকে স্ক্র্যাপ, লোহা বহন করছে। এই স্ক্র্যাপ, লোহা বাইরে পড়ার কোন কারণ নাই। তারপরও বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।

জানা যায়, সাম্প্রতিক সময়ে ইস্পাত শিল্পের বৈপ্লবিক অগ্রগতি হয়েছে। গত ১০ বছরে ইস্পাতের চাহিদা বেড়েছে তিনগুণেরও বেশি। বরাবরের মতোই ইস্পাত শিল্পের নেতৃত্ব চট্টগ্রামের হাতেই। ইস্পাতের বৃহৎ কারখানাগুলোর বেশিরভাগও চট্টগ্রামে। তম্মধ্যে নগরীর নাছিরাবাদ, জেলার ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়ক লাগোয়া সীতাকুণ্ড, শীতলপুর, কুমিরা, জোরারগঞ্জ এলাকায় রয়েছে বিএসআরএম, কেএসআরএম, একেএস, জিপিএইচ, এসএআরএম, আরএসআরএমসহ বড় বড় ইস্পাত শিল্পের কারখানা। দেশের মোট ইস্পাত উৎপাদনের ৮০ শতাংশই উৎপাদিত হয় চট্টগ্রামের কারখানাগুলোতে। বর্তমানে বছরে প্রায় ৪০ লাখ টন স্ক্র্যাপ আমদানি হয়ে থাকে।

(জেজে/এএস/জানুয়ারি ০১, ২০২২)