সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি : চতুর্থ দফায় গত ২৬’শে ডিসেম্বর সিরাজগঞ্জের চৌহালী উপজেলার সাতটি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হয়ে গেল। এর মধ্যে চৌহালী উপজেলা আওয়ামীলীগের সাংগঠনিক আওতাধিন পাচঁটি ইউনিয়নের তিনটিতেই পরাজিত হয়েছে নৌকা প্রতিকে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থীরা। পরাজয়ের জন্য সরাসরি উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক সরকারকে দায়ি করেছেন পরাজিত প্রার্থী, সমর্থক ও আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মিরা। নির্বাচনকালিন ও নির্বাচন পরবর্তী সময়ে রহস্যজনক ও বিতর্কিত ভূমিকার জন্য ফারুক সরকারের বিরুদ্ধে জেলা ও উপজেলা আওয়ামীলীগ বরাবর মৌখিক অভিযোগ দিয়ে লিখিত আকারে বিষয়টি কেন্দ্রীয় আওয়ামীলীগেকে জানানোর প্রস্তুতি নিচ্ছেন পরাজিত প্রার্থীরা।

চৌহালী উপজেলা আওয়ামীলীগ, বিভিন্ন ইউনিয়নে পরাজিত প্রার্থী ও নেতা-কর্মিদের সাথে কথা বলে জানা যায়, ২৬ শে ডিসেম্বরের নির্বাচনে চৌহালী উপজেলার ঘোড়জান ইউনিয়ন পরিষদে চেয়ারম্যান পদে স্বতন্ত্র প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক সরকারের বোনজামাই রমজান আলী। এই রমজান আলীকে নৌকা প্রতিকে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন প্রত্যাশি হিসেবে প্রার্থী তালিকায় প্রথমে রাখতে জালিয়াতির আশ্রয় নেন ফারুক সরকার। নিজের প্রভাব খাটিয়ে ঘোড়জান ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান মুন্টুর স্বাক্ষর না নিয়ে অপর একজন সহ-সভাপতির স্বাক্ষরে কেন্দ্র বরাবর তালিকা প্রেরন করেন। কিন্তু নানা বিতর্কে জড়িয়ে বহিস্কার হওয়া, এক সময়ের বিএনপি নেতা রমজান আলী মনোনয়ন পান নি। ঘোড়জান ইউনিয়নে নৌকা প্রতিকে আওয়ামীলীগের মনোনয়ন পান স্বচ্ছ ভাবমুর্তির ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান মুন্টু। অভিযোগ রয়েছে নিজের বোনজামাই রমজান আলীকে স্বতন্ত্র প্রার্থী হতে ইন্ধন দিয়ে পরিবারের সদস্যদের নির্বাচনী মাঠে নামান ফারুক সরকার। নির্বাচনে পরাজিত হয় নৌকা, জিতে যায় রমজান আলী। নির্বাচনের পরদিনই ফারুক সরকারের ভাতিজা রুবেল ও জুয়েল সরকার উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের সামনে নৌকা প্রতিকের পক্ষে কাজ করা সাইফুল ইসলামকে মারপিট করে। এ বিষয়ে অভিযোগ দেয়া হয় থানায়।

শুধু ঘোড়জান ইউনিয়নেই নয় নৌকা হারাতে উমারপুর ইউনিয়নেও বিতর্কিত ও রহস্যজনক ভূমিকা ছিল ফারুক সরকারের। উমারপুর ইউনিয়নে নৌকা প্রতিকে আওয়ামীলীগ মনোনীত প্রার্থী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক ও তার সমর্থকদের অভিযোগ সরাসরি বিদ্রোহী প্রার্থী আব্দুল মতিন মন্ডলের পক্ষে ছিলেন উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ফারুক সরকার। তিনি আওয়ামীলীগের নেতা-কর্মিদের বিভ্রান্ত করেছেন। নৌকা হারাতে গোপনে ইন্ধন দিয়েছেন মতিন মন্ডলকে। একই অবস্থা খাসপুকুরিয়াতেও। এখানেও নৌকা হারাতে ভ’মিকা ছিল এই ফারুক সরকারের।

ঘোড়জান ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতিকে আওয়ামীলীগ মনোনীত পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী ও ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি আক্তারুজ্জামান মুন্টু বলেন, একমাত্র ফারুক সরকার এই ইউনিয়নে নৌকা হারানোর জন্য দায়ি, তা নির্বাচনের পরদিন প্রকাশ্যে নৌকার সমর্থক সাইফুল ইসলামকে মারপিট করার মধ্য দিয়ে প্রমানিত হয়েছে। রমজানের বিরুদ্ধে কাজ করায় সাইফুলকে মারপিট করেছে ফারুক সরকারের ভাতিজারা। এ বিষয়ে জেলা আওয়ামীলীগ নেতাদের মৌখিকভাবে জানিয়েছি, শিঘ্রই লিখিত অভিযোগ দেব।

উমারপুর ইউপি নির্বাচনে নৌকা প্রতিকে আওয়ামীলীগ মনোনীত পরাজিত চেয়ারম্যান প্রাথী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুর রাজ্জাক বলেন, নিজে নৌকা প্রতিকে বিজয়ী হওয়া উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক হয়েও নৌকা ডুবিয়ে নিজের লোকদের চেয়ারম্যান বানানোর মিশনে নেমেছেন ফারুক সরকার। তিনি সরাসরি কর্মিদের বিভ্রান্ত করেছেন উমারপুরে।

অভিযোগ বিষয়ে কথা বলতে ইউপি নির্বাচনে স্বতন্ত্র প্রার্থীদের জনগনের মনোনীত প্রার্থী বলা উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ও উপজেলা চেয়ারম্যান ফারুক সরকারকে ফোন করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

তবে উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি তাজ উদ্দিন বলেন, উপজেলা চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামীলীগের সাধারন সম্পাদক ফারুক সরকারের বিরুদ্ধে প্রথম থেকেই নৌকা প্রতিকের প্রার্থীদের ক্ষোভ রয়েছে। অনেকেই বলছেন ফারুক সরকার নির্বাচনে রহস্যজনক ভুমিকা রেখেছেন। আমিও তাকে বিষয়টি বলেছিলাম, কিন্তু সে অভিযোগ অস্বীকার করেছে। বিষয়টি জেলা আওয়ামীলীগও অবগত আছে।#

(আইএইচ/এএস/জানুয়ারি ০১, ২০২২)