নওগাঁ প্রতিনিধি : নওগাঁর রাণীনগর উপজেলার প্রায় ২শ’ ১২বছরের পুরনো বাঁশবাড়ীয়া সরকারী প্রাথমিক বিদ্যালয়ের এখন বেহালদশা। নানান সমস্যায় চলছে বিদ্যালয়ে শিক্ষা দান। নতুন ভবনের সঙ্গে লাগানো পুরনো একটি ভবনকে ১২ বছর আগে পরিত্যক্ত ঘোষণার পরও অদ্যাবধী সেটি অপসারণ করা হয়নি। অপসারণ না করায় যে কোন সময় ভেঙ্গে বড় ধরনের দুর্ঘটনার আশঙ্কা করছেন, বিদ্যালয়ের শিক্ষক, ছাত্র-ছাত্রী, অবিভাবক ও সচেতন মহল।

এ ছাড়াও বিদ্যালয়ের ছোট একটি খেলার মাঠে বছরের ৬ থেকে ৭ মাস জলাবদ্ধতা থাকায় শিক্ষার্থীরা কোন খেলা খেলতে পারে না। সমস্যাগুলো একাধিক বার তুলে ধরলে বছর খানেক আগে তদন্তের পর সংশ্লিষ্ট বিভাগে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করেনি। তবে সংশ্লিষ্ট বিভাগ বলছে বিদ্যালয়ের সকল সমস্যা সমাধানের প্রক্রিয়া চলছে এবং দ্রত সমাধান করা হবে।

জানা গেছে, বাঁশবাড়ীয়া গ্রামের কৃষক সুধীর চন্দ্র প্রাং এলাকার শিশুদের শিক্ষা ও জ্ঞান অর্জনের জন্য প্রথমে ৬ শতক জমি দান করেন। ১৮০২ সালে বাঁশবাড়ীয়া প্রাথমিক বিদ্যালয়টি প্রতিষ্ঠা করা হয়। এরপর প্রতিষ্ঠানটি খুঁড়ে খুঁড়ে চললেও স্বাধীনতার পর ১৯৭৪ সালে সারা দেশের মত একই সঙ্গে প্রতিষ্ঠানটি জাতীয়করণ করা হয়। ১৯৮২ সালে চার কক্ষ বিশিষ্ট নির্মাণ করা হয় নতুন ভবন। ১৯৯৯ সালের দিকে ওই ভবনটি ফাটল দেখা দিলে ২০০০/০১ সালে ওই ভবনের দক্ষিণ পার্শ্বে চার কক্ষ বিশিষ্ট নতুন আরেকটি ভবন নির্মাণ করা হয়। এরপর পুরনো ভবনটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করা হয়। কিন্তু দীর্ঘ ১২ বছর পেরিয়ে গেলেও ওই পুরনো ভবনটি অপসারণ করা হয়নি।

এ ছাড়াও প্রায় ২শ’ জন শিক্ষার্থীর তুলনায় আসন (বেঞ্চ) সংখ্যা কম থাকা ও খেলার মাঠে ৬ থেকে ৭ মাস জলাবদ্ধতা থাকায় হাঁটু পানিতে মাছের জন্ম হয়। স্থানীয় লোকজন ওই খেলার মাঠে জাল দিয়ে মাছ ধরতে আসে প্রায়শঃ। এতে শিক্ষার পরিবেশ মারাত্মকভাবে বিঘিœত হয়ে আসছে। স্কুলের পঞ্চম শ্রেণীর শিক্ষার্থী রানা ও শ্রাবন্তী রাণী জানায়, পরিত্যক্ত ভবনের খুলে পরা জানালা, টিন পাঠ দানের কক্ষে রাখতে শিক্ষকরা বাধ্য হন। তাদের শ্রেণীতে ২৪ জন শিক্ষার্থী। ছোট শ্রেণী কক্ষে ব্রেঞ্চ আছে ৯টি। সবাই উপস্থিত হলে প্রতিদিনই তাদের ছোট্ট বেঞ্চে ৩জন করে বসতে হয়। এতে তাদের খুব অসুবিধা হয়।

শিক্ষার্থীর অভিভাবক গোপাল চন্দ্র ও সুবল প্রামানিক জানান, নিষেধ করা সত্ত্বেও বিদ্যালয় চলাকালে কোমল মতি অনেক শিক্ষার্থী পরিত্যক্ত ভবনের ভেতর গিয়ে খেলা করে। এতে তারা শিক্ষার্থীদের নিয়ে চিন্তাই থাকেন সবসময়। বছরের কয়েক মাস মাঠে হাঁটু জল থাকায় মাছের জন্ম হয়। সেখানে অনেকই মাছ ধরেন। দুর্ঘটনার আশঙ্কায় অনেক অভিভাবক তাদের শিক্ষার্থীদের গ্রামের এই বিদ্যালয়ে ভর্তি করাতে চাচ্ছেন না। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সাজেদুর রহমান জানান, পরিত্যক্ত ভবনের দেওয়াল প্রায় সবখানেই ছোট বড় ফেটে গেছে। ইট, টিন খুলে পরে যায়। যে কোন সময় দেওয়াল ভেঙ্গে বড় ধরনের ক্ষতি করতে পারে। আর বিদ্যালয়ে আগের চেয়ে বর্তমানে শিক্ষার্থীদের সংখ্যা বেশি হওয়ায় আসনের সমস্যা হয়।

রাণীনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মনিরুল ইসলাম পাটোয়ারী জানান, ইতোমধ্যে পরিত্যক্ত ভবনটি অপসারণের জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে। এ ছাড়াও শ্রেণীকক্ষ সংকট নিরসনে বিদ্যালয়ের নতুন ভবন নির্মাণ ও খেলার মাঠ ভরাটসহ সার্বিক উন্নয়ন করা হবে। বিদ্যালয়ের শিক্ষক, শিক্ষার্থী, অবিভাবক ও সচেতন মহল দ্রুত পরিত্যক্ত ভবন অপসারণ করে একটি নতুন ভবন নির্মাণ, প্রয়োজনীয় ব্রেঞ্চ সরবরাহ, পড়াশুনা ও খেলার মাঠটি দ্রুত উপযোগি করে গড়ে তোলার দাবি জানান।

(বিএম/এটিআর/সেপ্টেম্বর ১৯, ২০১৪)