সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া : নেত্রকোণার কেন্দুয়া উপজেলার ১৩টি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে আগামী ৫ জানুয়ারি। নির্বাচনকে সামনে রেখে সকল চেয়ারম্যান মেম্বার প্রার্থীরাই নিজ নিজ কৌশলে প্রচার প্রচারনা চালিয়েছে। ১৩টি ইউনিয়নের মধ্যে বেশ কয়েকটিতে নৌকার ভোটে ভাগ বসাতে চায় স্বতন্ত্র এবং আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থীরা।

ইতিমধ্যে ১৬ জন বিদ্রোহী প্রার্থীকে আওয়ামীলীগ থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। আশুজিয়া ইউনিয়ন পরিষদের নির্বাচনে আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী হয়েছেন, উপজেলা আওয়ামীলীগের সহ-সভাপতি আবু তাহের। তার প্রতীক ঘোড়া। ইতিমধ্যে তাকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়েছে। নৌকা মার্কার প্রার্থী আশুজিয়া ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি মোঃ মঞ্জুর আলী এবং আবু তাহের একই গ্রামের বাসিন্দা। এই দুই প্রার্থীর ভোট হবে সিংহেরগাঁও সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় কেন্দ্রে। আবু তাহের নৌকার ভোটে ভাগ বসাতে ওই কেন্দ্রটিকে ঝুঁকিপূর্ণ দাবি করে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন।

মঞ্জুর আলী পাল্টা অভিযোগ করে বলেন, ওই কেন্দ্রটি তার বাড়ির সন্নিকটে। ওই কেন্দ্রে আবু তাহের নিজেই প্রভাব বিস্তার করবে।

অপর দিকে স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান মোঃ রফিকুল ইসলাম, তিনিও নৌকার ভোটে ভাগ বসাতে চান। তাকেও দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। কান্দিউড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী তাপস ব্যানার্জীর ভোটে ভাগ বসাতে চান আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী মোঃ মাহবুব আলম বাবুল। তিনি তার এলাকাকে ঘোড়া মার্কার পক্ষে ঐক্যবদ্ধ করেছেন বলে দাবি করছেন।

স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ কামরুজ্জামান তালুকদার মাখন, আনারস প্রতীক নিয়ে নির্বাচনে তৎপর রয়েছেন। তিনিও নৌকার ভোটে ভাগ বসাতে চান। বলাইশিমুল ইউনিয়নে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী আব্দুর রহিম উদ্দিন আহমেদের ভোট ব্যাংকে ভাগ বসাতে চান, জাতীয় পার্টির মনোনীত লাঙল প্রতীকের প্রার্থী আব্দুল আউয়াল মন্ডল। এছাড়া আওয়ামীলীগের মনোনয় চেয়ে নৌকা পাননি উপজেলা আওয়ামীলীগের সদস্য মোঃ ফজলুর রহমান তিনিও নৌকা ভোটে ভাগ বসাতে তৎপর। তবে ফজলুর রহমানকে দল থেকে ইতিমধ্যে বহিস্কার করা হয়েছে।

ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি আলী আকবর তালুকদার মল্লিক বর্তমান চেয়ারম্যান চশমা প্রতীক নিয়ে গোপনে গোপনে ভোট সংগ্রহে বেশ তৎপর রয়েছেন। রোয়াইলবাড়ি ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা মার্কার প্রার্থী শেখ নাজমুল হকের ভোট ব্যাংকে ভাগ বসাতে চায় আওয়ামীলীগের বিদ্রোহী প্রার্থী ঘোড়া প্রতীকের মোঃ লুৎফুর রহমান আকন্দ। তাকে ইতিমধ্যে দল থেকে বহিস্কার করা হলেও তিনি নির্বাচনী প্রচারনা থেকে সরে দাড়াননি। এছাড়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সংস্কৃতি বিষয়ক সম্পাদক বর্তমান চেয়ারম্যান এস.এম.ইকবাল রুমিও নৌকার ভোটে ভাগ বসাতে তৎপর রয়েছেন। তাকে দল থেকে বহিস্কার হলেও তিনি নৌকা মার্কার প্রার্থীকে প্রতিদ্বন্ধিই মনে করছেন না। মোজাফরপুর ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী জাকির আলম ভ‚ঞার বিপক্ষে অবস্থান নিয়ে দল থেকে বহিস্কৃত হয়েছেন, কেন্দুয়া উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাধারন সম্পাদক নূরুল আলম মোঃ জাহাঙ্গীর চৌধুরী।

সবার মুখে মুখে আলোচনা আছে তিনি উপজেলা বি.এন.পির সদস্য সচিব মজিবুর রহমান মজনুর স্ত্রী স্বতন্ত্র প্রার্থী হ্যাপির ঘোড়া মার্কার পক্ষে সমর্থন দিয়েছেন। তাদের বাড়ি একই গ্রাম গগডা থাকায় তারা নৌকার বিপক্ষে ঐক্যবদ্ধ হয়েছেন বলে দাবী করছেন। পাইকুড়া ইউনিয়নে নৌকা মার্কার প্রার্থী ইসলাম উদ্দিনের ব্যাপক জনপ্রিয়তা থাকলেও তার ভোটে ভাগ বসাতে চায় স্বতন্ত্র আনারস প্রতীকের প্রার্থী মোঃ রফিকুল ইসলাম খান রফিক ও বর্তমান চেয়ারম্যান উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক যুগ্ম সাধারন সম্পাদক হুমায়ুন কবীর চৌধুরী। তিনি ঘোড়া প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। মাসকা ইউনিয়নে নৌকার প্রার্থী আ. ছালাম বাঙ্গালীর ভোট ব্যাংকে ভাগ বসাতে চান ইউনিয়ন বিএনপির সভাপতি স্বতন্ত্র প্রার্থী মোঃ রেজাউল করিম ভ‚ঞা সুমন। তাকে বি.এন.পি নেতাকর্মী ছাড়াও গোপনে গোপনে অনেক আওয়ামীলীগ নেতা সমর্থন দিয়ে যাচ্ছেন বলে নির্বাচনী মাঠে প্রচারনা রয়েছে। এছাড়া উপজেলা কৃষকলীগের সাধারণ সম্পাদক রানা আহমেদ খান পাঠান আনারস প্রতীক নিয়ে লড়ছেন। তিনিও নৌকার ভোটে ভাগ বসাতে চান।

নওপাড়া ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে উপজেলা আওয়ামীলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম তাজুর নৌকার ভোটে ভাগ নিতে চান উপজেলা আওয়ামীলীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক ২ বারের নির্বাচিত চেয়ারম্যান প্রয়াত শাহজাহান কবীরের ছেলে স্বতন্ত্র ঘোড়া মার্কার প্রার্থী এডভোকেট সারোয়ার জাহান কাউসার।

এছাড়া বর্তমান চেয়ারম্যান শফিকুল ইসলাম শফিক নৌকার বিদ্রোহী প্রার্থী হওয়ায় দুজনকেই দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। দলপা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকে উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান মোঃ নূরুল ইসলামের ছেলে শাহিন মিয়ার নৌকা প্রতীকের ভোটে ভাগ বসাতে চান স্বতন্ত্র প্রার্থী বর্তমান চেয়ারম্যান আমিনুর রহমান খান পাঠান। তাকে ইতিমধ্যে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। গন্ডা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের প্রার্থী মোঃ সঞ্জু মিয়ার ভোট ব্যাংকে হানা দিতে চান একই গ্রামের স্বতন্ত্র প্রার্থী কৃষিবিদ কল্যাণ।

এছাড়া বিদ্রোহী প্রার্থী মোঃ সিরাজুল হককে দল থেকে বহিস্কার করা হয়েছে। উপজেলা আওয়ামীলীগের সভাপতি এডভোকেট আব্দুল কাদির ভূঞা ও সাধারণ সম্পাদক পৌর মেয়র মোঃ আসাদুল হক ভূঞা অধ্যাপক অপু উকিলের নেতৃত্বে ১৩টি ইউনিয়নেই পথসভা ও উঠোন বৈঠক করে নৌকা মার্কার প্রর্থীদের বিজয়ী করার আহবান জানাচ্ছেন। তাদের প্রচারনায় ভোটাররাও উজ্জ্বীবিত। এডভোকেট আব্দুল কাদির ভূঞা বলেন, নৌকা মার্কার গ্রহণযোগ্য প্রার্থী ও এলাকার সরকারের উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড গতিশীল করতেই জনগণ স্বতঃষ্ফুর্ত হয়েই নৌকা মার্কায় ভোট দেবেন এবং ১৩টি ইউনিয়নেই নৌকা মার্কার বিজয় হবে ইনশাআল্লাহ।

(এসবি/এএস/জানুয়ারি ০৩, ২০২২)