বাগেরহাট প্রতিনিধি : বাগেরহাট সরকারি পিসি কলেজ ছাত্র সংসদের সহ-সভাপতি (ভিপি)সরদার ইয়াছির আরাফাত নোমান ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে শ্লীলতাহানী, মারপিট করে আহত করার বিচার দাবি ও জীবনের নিরাপত্তার চেয়ে সংবাদ সম্মেলন করেছেন এক শিক্ষার্থী। 

মঙ্গলবার দুপুরে বাগেরহাট প্রেসক্লাবের সংবাদ সম্মেলন করেন সরকারি পিসি কলেজের স্নাতক (সম্মান) ইংরেজী ৪র্থ বর্ষের শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌসী। বিগত ২০০৮ সাল থেকে এক যুগেরও বেশি সময় ধরে সরকারি পিসি কলেজের ভিপি হিসেবে দায়িত্ব পালন করে চলা নোমান ও তার অনুসারীদের বিরুদ্ধে কলেজে ইয়াবা ব্যবসা, নতুন শিক্ষার্থীদের মারধর, চাঁদাবাজী, সুন্দরী শিক্ষার্থীদেরকে যৌন নির্যাতনসহ নানা অপরাধের অভিযোগ করে জান্নাতুল ফেরদৌসী বলেন, এসবের বিরুদ্ধে কেউ কথা বললে তাদের উপরও অত্যাচার করেন ভিপি নোমান। সংবাদ সম্মেলনে শিক্ষার্থীর শ্বাশুড়ী বাগেরহাট শহরের দশানী ক্রস রোডের বাসিন্দা রেহেনা চৌধুরী উপস্থিত ছিলেন। শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌসী জেলা ছাত্রলীগ নেতা হাসান চৌধুরী নয়নের স্ত্রী। হাসান চৌধুরী নয়নও সরকারি পিসি কলেজের ডিগ্রি তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী।

জান্নাতুল ফেরদৌসী সংবাদ সম্মেলন বলেন, গত ২৯ ডিসেম্বর বাগেরহাট সরকারি মহিলা কলেজ কেন্দ্রে আমার জাতীয় বিশ্ব বিদ্যালয়ের স্নাতক (সম্মান) ৪র্থ বর্ষের পরীক্ষা ছিল। পরীক্ষা শেষ করে স্বামীর (হাসান চৌধুরী নয়ন) সাথে রিকশাযোগে এসএসসি ও এইচএসসি পাসের মূল সনদ আনতে সরকারি পিসি কলেজে যাই। কলেজে গেলে ভিপি নোমানের অনুসারী আব্দুর রহমান শাহ, কাওসার, ইকবাল, বিতাসসহ কয়েকজন আমাদের রিকশা অবরোধ করে, আমাকে অকথ্য ভাষায় গালিগালাজ করে বোরকা টেনে ছিড়ে ফেলাসহ আমার শরীরেও হাত দেয়। দ্রুত রিকশা নিয়ে শহরের দশানী ক্রস রোডের বাসার সামনে আসলে সেখানে তারা এসে আমার ও আমার স্বামীর উপর হামলা করে। এসময়ে ভিপি নোমান ঘটনাস্থলে এসে আমার বুকের উপর লাথি মেরে রক্ষিতা বলে গালাগাল করে। নোমান ও তার লোকদের মারধরে আমার স্বামীর ডান পা ভেঙ্গে যায়।

এছাড়া আমার স্বামীর হাত ও মাথায় মারাত্মক আঘাত লাগে। এক পর্যায়ে তারা আমার স্বামীর ফোন, ব্যাগে থাকা নগদ টাকা ও আমার গলায় থাকা স্বর্ণের চেইন ছিড়ে নেয় তারা। এসময়ে রাস্তা দিয়ে পুলিশের গাড়ি যাচ্ছিল। সেখান থেকে পুলিশ নোমানকে আটক করে নিয়ে যায় এবং আহত অবস্থায় আমার স্বামী, শ্বাশুড়ী ও আমাকে হাসপাতালে নিয়ে যায়। আমার স্বামী এখনও বাগেরহাট সদর হাসপাতালে চিতিৎসাধীন রয়েছেন।

পরবর্তীতে আমি বাগেরহাট মডেল থানায় একটি লিখিত অভিযোগ দিলেও পুলিশ এখন পর্যন্ত কোন মামলা রেকর্ড করেনি বরং ওই দিন বিকেলেই অজানা কারণে নোমানসহ অন্যদের ছেড়ে দেয় পুলিশ। এঘটনার পর থেকে আমাকে চেপে যাওয়ার জন্য হুমকী ধামকী দিচ্ছে। আমরা যদি নোমানের বিরুদ্ধে কোন কথা বলি তাহলে আমাদের মেরে ফেলারও হুমকী দিচ্ছে। এসময়ে শিক্ষার্থী বাগেরহাট-২ আসনের এমপি শেখ তন্ময় ও জেলা আওয়ামী লীগের নেতৃবৃন্দের কাছে আমাদের জীবনের নিরাপত্তা দেয়ার দাবি জানান।

ভিপি নোমান শিক্ষার্থী জান্নাতুল ফেরদৌসী স্বামী হাসান চৌধুরী নয়নের বিরুদ্ধে ছাত্রীদের শ্লীলতাহানী ও মাদক বিক্রির অভিযোগ তুলে বলেন, এসব কারনে নয়নকে সাধারন শিক্ষর্থীরা কলেজ ক্যাম্পাস থেকে বিতাড়ন করার পর সে স্ত্রীকে সাথে নিয়ে ক্যাম্পাসে এলে সাধারন শিক্ষার্থীদের প্রতিরোধের মুখে পড়ে। আমি সেখানে ছিলাম না।

বাগেরহাট মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কেএম আজিজুল ইসলাম বলেন, জান্নাতুল ফেরদৌসের লিখিত অভিযোগ পেয়েছি। বিষয়টি তদন্ত চলছে। তদন্ত পূর্বক আইনগত ব্যবস্থা গ্রহন করা হবে।

(এসএকে/এসপি/জানুয়ারি ০৪, ২০২২)