ঠাকুরগাঁও প্রতিনিধি : নানা অনিয়ম ও দুর্নীতির আখড়ায় পরিণত হয়েছে পল্লী বিদ্যুতের ঠাকুরগাঁওয়ের পীরগঞ্জ জোনাল অফিসটি। লাইন মেরামত, মিটার ও  ট্রান্সফরমার পরিবর্তন, নতুন সংযোগ প্রদান, বিল গ্রহণ ও প্রদান, বৈদ্যুতিক মালামাল সরবরাহসহ সব ক্ষেত্রেই আদায় করা হয় অতিরিক্ত অর্থ।

তাছাড়া কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দৌরাত্ম্যে প্রতিদিনই নাজেহাল হচ্ছে পীরগঞ্জ, রানীসংকৈল ও হরিপুর উপজেলার শত শত গ্রাহক। স্বাভাবিক নিয়মে কোন সেবাই পাওয়া যায় না এখান থেকে। অথচ গ্রাহক সেবার নামে ভুয়া ভাউচারের মাধ্যমে আত্মসাৎ করা হচ্ছে হাজার হাজার টাকা।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ঠাকুরগাঁও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পীরগঞ্জ জোনাল অফিসের দুই কর্মকর্তার নেতৃত্বে গ্রাহক সেবার নামে এখানে দীর্ঘদিন ধরেই সক্রিয় রয়েছে একটি অর্থ আদায়কারী সিন্ডিকেট। সমস্যায় পড়ে কোন গ্রাহক এ অফিসে এলে তাকে পাঠিয়ে দেয়া হয় সিন্ডিকেট সদস্যদের কাছে। তারা নানা সমস্যার কথা বলে প্রথমেই গ্রাহককে ভয় দেখান। এরপর টাকার প্রস্তাব দেন, তা না হলে বিদ্যুৎ আইনের ফাঁক-ফোকড় দেখিয়ে কখন মামলা, কখন লাইন ডিসকানেক্ট, কখন জরিমানার ভয় দেখানো হয় তাদের।

এসব থেকে প্রতিকারের জন্য অফিসের কর্মকর্তাদের কাছে গেলে তারা বলেন, তারা অসহায়, তাদের করার কিছুই নেই। বরং কম-বেশী কিছু টাকা দিয়ে সমাধান করে নেয়ার পরামর্শ দেন তারা। এতে বাধ্য হয়েই টাকা গুনতে হয় গ্রাহককে। নতুন সংযোগের ক্ষেত্রে মিটার, আর্থিং রডসহ মালামাল নেই, এমন অজুহাতে সিএমও হওয়া শত শত গ্রাহককে ঘুরানো হয় মাসের পর মাস। অথচ দেড় থেকে দুই হাজার টাকা অতিরিক্ত ঘুষ দিলেই সব কিছুই পাওয়া যায় নগদে।

এছাড়া নতুন সংযোগের জন্য শুধু আবেদন করলেই হবে না। এর জন্য ওই সিন্ডিকেটের সদস্যদের সাথে চুক্তি করতে হবে। নইলে লাইন পাওয়া যাবে না।

অভিযোগ রয়েছে, পোল থেকে মিটারের দূরত্ব এবং ট্রান্সফরমারের ক্যাপাসিটিসহ অন্যান্য কাগজপত্র ঠিক থাকলে আবাসিক সংযোগপ্রতি ১২ থেকে ২০ হাজার টাকা আদায় করে সিন্ডিকেটটি। এ অর্থ অফিস কর্মকর্তাসহ সংশ্লিষ্টদের মাঝে ভাগবাটোয়ারা হয়।

একদিকে মিটার পরিবর্তন, বেশী বিল আসা, পোল পরিবর্তন, ট্রান্সফরমার পরিবর্তনসহ নানা ক্ষেত্রেই অতিরিক্ত টাকা দিতে হয় গ্রাহককে। অপরদিকে লাইন মেরামত/ রেনুভেশনের ক্ষেত্রে মালামালের সমপরিমাণ টাকা দিতে হয় দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে। অন্যথায় মেরামত বা রেনুভেশনের আওতায় আনা হয় না কোন ঝুঁকিপূর্ণ লাইনকে।

শনিবার সকালে সরেজমিন গিয়ে দেখা গেছে, পীরগঞ্জ জোনাল অফিসের ভিতরে ও সামনের চায়ের দোকানগুলোতে রেজিস্ট্রি অফিসের দলিল লেখকদের মতো করে দালালরা বসেছেন বিদ্যুতে লাইন নিতে আসা গ্রাহকদের নানা কাগজপত্র নিয়ে। আর তাদের সহায়তা করছেন পল্লী বিদ্যুতের কতিপয় অসাধু কর্মকর্তা ও কর্মচারী।

জেলার হরিপুর থেকে আসা জনৈক হবিবর রহমান জানান, বাড়ীতে বিদ্যুত লাইনের জন্য গত এক মাস থেকে ঘুরছি কিন্তু কোন কাজ হচ্ছে না। অনেক পরে বুঝলাম দালাল না ধরলে কাজ হবে না। তাই দালালের মাধ্যমে বাড়ীতে বিদ্যুতে লাইনের জন্য আবেদন করছি। জানি এতে খরচ দ্বিগুণ গুনতে হবে। কিন্তু কি করব বলেন বিদ্যুৎ তো প্রয়োজন।

আরো অভিযোগ রয়েছে, জরুরি প্রয়োজনে এ অফিসের ডিজিএম কিংবা অন্য কর্মকর্তাদের ফোনে পাওয়া যায় না।

এ ব্যাপারে ঠাকুরগাঁও পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির পীরগঞ্জ জোনাল অফিসের ডিজিএম খান মোহাম্মদ বোরহান বলেন, পীরগঞ্জ জোনাল অফিসের কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের বিরুদ্ধে আনা কোন অভিযোগই সঠিক নয়। কাজ করতে গেলে ছোটখাটো ভুলত্রুটি হতে পারে বলে তিনি মন্তব্য করেন।

(জেএবি/এনডি/সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৪)