গলাচিপা (পটুয়াখালী) প্রতিনিধি : পটুয়াখালীর গলাচিপায় দুটি ইট ভাটা প্রশাসনের সাথে ইঁদুর বিড়াল খেলা খেলছে। গুঁড়িয়ে দেয়ার এক সপ্তাহ পর ফের চালু করেছে ভাটার মালিক পক্ষ। এদিকে প্রাইমারি স্কুলের পাশেই চরভাদাই গ্রামের মায়ের দোয়া ব্রিক ফিল্ডের ইট পোড়ানো কাঠের ধোঁয়ায় অতিষ্ঠ চরবাদুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ২০০ শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা। এর প্রতিবাদ করার সাহস পায় না সাধারণ শিক্ষক ও অভিভাবকরা।

জানা গেছে, এ ইট ভাটাটি পরিবেশ অধিদপ্তরসহ বিভিন্ন বৈধ কাগজ পত্র না থাকার অভিযোগে উপজেলার গোলখালী ইউনিয়নের চরভাদাই গ্রামের মায়ের দোয়া ব্রিকসের এমএমবি ব্রিক ফিল্ড ও একই ইউনিয়নের গোলখালী গ্রামের সততা ব্রিকস এএনবি ব্রিকসের ইট ভাটার চিমনি ভেঙ্গে দেয়া হয়। গলাচিপা উপজেলা সহকারী কমিশিনার (ভূমি) মো. নজরুল ইসলাম গত ৩১ ডিসেম্বর ভ্রাম্যমাণ আদালতে দুটি ভাটার চিমনি ভাঙ্গাসহ দুইটি ভাটার মালিক পক্ষকে মোট তিন লাখ নগদ টাকা অর্থ দন্ড প্রদান করেন। কিন্তু এর এক সপ্তাহ যেতে না যেতেই অদৃশ্য কারণে প্রশাসনকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে আবারো কাঠ দিয়ে ইট পোড়া শুরু করে দেয় এ দুটি ইট ভাটার মালিক পক্ষ।

এদিকে এ বছর ইট পোড়ার পর আগামীতে সব ধরণের অনুমতি পত্র সংগ্রহ করবেন বলে জানিয়েছেন দুই ভাটার মালিক পক্ষ সরেজমিনে সংশ্লিষ্টদের সাথে কথা বলে এ তথ্য জানা গেছে। চরভাদাইর মেসার্স মায়ের দোয়া ব্রিকস (এমএমবির) এর অংশিদার মো. মঞ্জু ঢালী বলেন, গত চার বছর ধরে আমরা লোকসান দিয়ে আসছি। এ বছর পরিবেশ অধিদপ্তরে গেছিলাম। তারা ঝিকঝাক পদ্ধতিতে ইট পোড়ানোর কথা বলেছেন। আমরা ঝিকঝাক পদ্ধতিতে যাওয়ার জন্য কিছু ইট পুড়ছিলাম। কিন্তু গত ৩১ ডিসেম্বর এসি ল্যান্ড আমাগো ভাটার চিমনি ভেঙ্গে দেয়। এর এক সপ্তাহ পর আমরা সবাইকে অনুরোধ করে আবার ইট পোড়া শুরু করি।

প্রাইমারি স্কুলের পাশে ইট পোড়ালে শিশুদের ক্ষতি প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমাদের চিমনি যেখানে রয়েছে সেখান থেকে ক্ষতি হওয়ার সম্ভাবনা নাই। তার পরেও যদি আমাগো প্রশাসন কয় তাহলে আরো একশ ফুট সরাইয়া নিমু। একই প্রতিষ্ঠানের অপর অংশিদার পবিত্র নাগ বলেন, এ বছরই আমাদের শেষ। এর পর আমরা ঝিকঝাক ছাড়া ইট পোড়াবো না।

গোলখালী মেসার্স সততা ব্রিকসের অংশিদার শহীদ মীর বলেন, আমরা এবছরই নতুন শুরু করেছি। সত্য কথা বলতে আমাদের বৈধ কোন কাগজ পত্র নাই। ইটভাটা যদি বন্ধ হয়ে যায় তাহলে আমাদের অনেক টাকা লোকসান হয়ে যাবে।

চরবাদুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের ৫ম শ্রেণীর শিক্ষার্থী, নাজিফা, আরাফাত ও মুনিয়া জানান, ধোঁয়ার গন্ধে আমরা ক্লাশ করতে পারি না এভাবে ইট পোড়ালে আমাদের শ্বাস কষ্ট হবে। এ প্রসঙ্গে চরবাদুরা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক নুরুন্নাহার খান বলেন, আমাদের স্কুলের পাশেই ইট ভাটা। প্রতিদিন ধোঁয়াসহ নানা ধরণের সমস্যা হয়। এ ইট ভাটার ধোঁয়ায় আমাদের শিক্ষার্থীর স্বাস্থ্যের ক্ষতি হয়। আমরা এর প্রতিকার চাই। মালিক পক্ষ প্রভাবশালী হওয়ায় কোন প্রতিবাদ করতে সাহস পাই না।

এ প্রসঙ্গে পটুয়াখালী জেলা অফিসের পরিবেশ অধিদপ্তরের সহকারী পরিচালক শেখ মেহেদী বলেন, গোলখালী ইউনিয়নের চরভাদাইর মায়ের দোয়া ব্রিকস ও গোলখালী গ্রামের সততা ব্রিকসের কোন অনুমতি পত্রই নেই। অবৈধভাবে কাঠ দিয়ে ইট পোড়ালে পরিবেশের বিপর্যয় ঘটে তাই গত ৩১ ডিসেম্বর ভ্রাম্যমান আদালতের মাধ্যমে ইট ভাটা দুটির চিমনি ভেঙ্গে দেয়া হয়। অভিযানের সাত দিন পর আবার ইট পোড়ানের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, এমন হলে আমরা আবারো অভিযান চালাবো। এবার ফায়ার সার্ভিসের সহায়তা নিবো।

এ বিষয়ে গলাচিপা উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) বলেন, ইট ভাটা দুটি অবৈধভাবে চালিয়ে আসছিল। এদের জমির কাগজ ছাড়া অন্য কোন কাগজপত্র নেই। খবর পেয়ে আমরা অভিযান করে দুটির চিমনি ভেঙ্গে দেই এবং নগত অর্থ দন্ড করি। স্কুলের পাশে ইট পোড়ানো প্রসঙ্গে বলেন, এটা কোন ভাবেই সম্ভব না। পরবর্তীতে এ কাজ অব্যাহত থাকলে আমরা প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করব।

(এসডি/এএস/জানুয়ারি ১১, ২০২২)