মাগুরা প্রতিনিধি : মানুষটা ভালো ছিল। কিন্তু বিয়ের দু’বছরের মাথায় মানুষটি এভাবে পাল্টে যাবে তা কখন কল্পনাও করেনি। ঢাকার একটি ডায়াগনস্টিক সেন্টারে কাজ করত সে। ভালোই দিন কাটছিল তাদের। কিন্তু সেখান থেকে চাকরি চলে গেলে শুরু হয় বিপত্তি। বাড়িতে ফিরে এসে তার স্বামী মিলন হোসেন বেকার ঘুরে বেড়াতে থাকে।

যৌতুকের জন্য শুরু হয় নির্যাতন। সন্তানের কথা চিন্তা করে শত নির্যাতন সহ্য করে ঘর আকড়ে ধরে থাকতে চেয়েছিলাম। এ কারণে বিভিন্ন সময় স্বামীর নির্যাতনের পরও বিষয়টি পরিবারের কাউকে বলিনি। স্বামীর বিরুদ্ধে কারো কাছে কোন অভিযোগ করিনি। কিন্তু এভাবে চলতে থাকলে কবে তারা আমাকে একদিন মেরে ফেলবে। বৃহস্পতিবার কথা গুলো মাগুরা সদর হাসপাতালের বেডে বসে বলছিলো যৌতুকের জন্য নির্মম নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ আছিয়া বেগম (২৫)।

জানা গেছে, মাগুরা সদর উপজেলার শ্রীরামপুর গ্রামের মৃত সিরাজুল ইসলামের কন্যা আছিয়া বেগমের সাথে একই গ্রামের আব্দুস সালাম মোল্যার ছেলে মিলন হোসেন (৩২) এর সাথে ২০০৬ সালে বিয়ে হয়। তাদের নাঈম ফেরদৌস নামে একটি ৪ বছরের একটি ছেলে রয়েছে।

আছিয়া বেগম অভিযোগ করেন, বিয়ের পর স্বামী মিলন হোসেন ২০০৮ সাল থেকে যৌতুকের জন্য তার উপর বিভিন্ন সময় নির্যাতন চালিয়ে আসছে। বোনের সুখের কথা ভেবে তার ভাই রেজাউল ইসলাম বিভিন্ন সময় মিলনকে আর্থিকভাবে সাহায্য করে আসছে। এমনকি তাদের সংসারের ব্যয়সহ ছেলের লেখাপড়ার খরচও তার ভাই বহন করছে। কিন্তু এতেও সন্তুষ্ট হতে না পেরে তার উপর নির্যাতন অব্যাহত রাখে স্বামী মিলন। সম্প্রতি সদর উপজেলার ইছাখাদা গ্রামের একটি মেয়ের সাথে তার স্বামী মিলনের প্রেমের সম্পর্ক গড়ে উঠেছে। তিন চার দিন আগে বিষয়টি জানতে পেরে এর প্রতিবাদ করলে তার স্বামী, শশুর বাড়ির লোকজন তাকে বাঁশের লাঠি দিয়ে এলোপাতাড়ি পিটিয়ে শরীরের বিভিন্ন অংশে মারাত্মক জখম করে। পরে খবর পেয়ে তার ভাই রেজাউল ইসলাম তাকে উদ্ধার করে মাগুরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করে।

আছিয়া বেগম জানান, শ্বশুরবাড়ির লোকজন তাকে হত্যার উদ্দেশেই তার নির্মম নির্যাতন চালোনো হয় । হাসপাতালে ভর্তি হবার পর স্বামীর বাড়ির লোকজন সেখানে এসে সন্তানকেও তার কাছ থেকে নিয়ে গেছে। সন্তানকে তার কাছে ফিরিয়ে দেয়ার আকুতি জানান তিনি।

নির্যাতনের শিকার গৃহবধূ আছিয়ার ভাই রেজাউল ইসলাম জানান, এ বিষয়ে মাগুরা সদর হাসপাতালে মহিলা ও শিশু বিষয়ক মন্ত্রনালয় কর্তৃক স্থাপিত ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেলের প্রোগ্রাম অফিসার লাবনী রায়ের সাথে আইনি সহায়তার জন্য যোগাযোগ করা হয়েছে। তার বোন একটু সুস্থ হলে উঠলে তাদের সহায়তায় আদালতে নারী নির্যাতন মামলা দায়ের করা হবে।
এ বিষয়ে আছিয়ার স্বামী মিলন হোসেনের সাথে যোগাযোগ করা হলে স্ত্রী আছিয়া বেগমের উপর নির্যাতনের বিষয়টি অস্বীকার করে বলেন, ‘স্বামী স্ত্রীর মধ্যে ভুল বোঝাবুঝি হয়েছে।,

মাগুরা ওয়ান স্টপ ক্রাইসিস সেলের প্রোগ্রাম অফিসার লাবনী রায় বলেন, ‘পরিবারের সদস্যরা চাইলে নির্যাতনের শিকার গৃহবধূকে যথাযথ আইনী সহায়তা দেয়া হবে।’

(ডিসি/এএস/সেপ্টেম্বর ২০, ২০১৪ )