আমতলী প্রতিনিধি : আমতলী-সুবন্ধি প্রকল্পে ৭’শ ৫১ কোটি টাকা বরাদ্দ একনেকে অনুমোদন হওয়ায় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে আনন্দ র‌্যালী করেছে সচেতন নাগরিকরা। বুধবার বেলা ১১ টায় র‌্যালীটি অনুষ্ঠিত হয়। র‌্যালীতে উপজেলার কয়েকশত সচেতন নাগরিক অংশগ্রহন করেছেন।

জানা গেছে, ১৯৮২ সালে আমতলীর চাওড়া ও পায়রা নদীর ভয়াবহ ভাঙ্গনের হাত থেকে আমতলী শহরকে রক্ষায় সংযোগস্থল আমতলী চৌরাস্তায় পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ নির্মাণ করে। কালের বিবর্তনে চাওড়া নদী মরা নদীতে পরিনত হয়। ত্রিভুজ আকৃতির ৩০ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ২০০ মিটার প্রস্থ এ নদীটি উপজেলার হলদিয়া, কুকুয়া, চাওড়া, আমতলী সদর ইউনিয়ন ও পৌরসভার ২৫টি গ্রামের উপর দিয়ে প্রবাহিত। নদীর ভৌগলিক অবস্থানের কারনে সুবন্ধি অংশে বাঁশবুনিয়া নদী, ঘুঘুমারী অংশে টিয়াখালী ও আমতলীর অংশে পায়রা নদীর সাথে সংযোগ রয়েছে।

প্রাকৃতিক জলোচ্ছাস ও লবনাক্ততার হাত থেকে মানুষ ও সম্পদ রক্ষায় ২০০৯ সালে বাঁশবুনিয়া নদীর একাংশ সুবন্ধি নামক স্থানে পানি উন্নয়ন বোর্ড বাঁধ নির্মাণ করে। কিন্তু এতে পানি প্রবাহ বিঘ্নিত হয়। ২০১৫ সালে চাওড়া ও সুবন্ধি নদীর পানি প্রবাহ নিশ্চিত করতে বিশ্ব ব্যাংকের অর্থায়নে সুবন্ধি বাধে দু’ব্যান্ডের স্লুইজ নির্মাণ করা হয়। এদিকে ১৯৬৭ সালে জুলেখা খালে পাঁচ কপাট ও উত্তর টিয়াখালী খালে পাঁচ কপাট এবং ঘুঘুমারিতে এক কপাটের স্লুইজ নির্মাণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। সুবন্ধির তিনটি জলকপাট থেকে পানি নিস্কাসনের কারনে নদীর ১০ কিলোমিটার পর্যন্ত পানি’র স্বাভাবিক প্রবাহ রয়েছে। কিন্তু উত্তর টিয়াখালী ও ঘুঘুমারি খালের জল কপাট এবং জুলেখার খালের লক্ষী নামক স্থানে তিনটি বাঁধ, উত্তর টিয়াখালী স্লুইজের আউরা বৈরাগী নামক স্থানে বাঁধসহ খালের বিভিন্ন স্থানে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ করে পানি প্রবাহ বন্ধ করে রেখেছে প্রভাবশালীরা। অপরদিকে সুবন্ধি নদী সংলগ্ন নাচনাপাড়া ও আমতলী খালসহ ১০টি খাল প্রভাবশালীরা অবৈধ ভাবে বাঁধ দিয়ে মাছ চাষ এবং খাল দখল করে স্থায়ী বাড়ী ঘর নির্মাণ করছেন। এতে নদীর পশ্চিম, দক্ষিণ ও পুর্ব দিকের পানি প্রবাহ বন্ধ হয়ে গিয়েছে। ফলে ২০ কিলোমিটারের কচুরীপানা আটকে জনদুভোর্গ চরম আকার ধারন করেছে।

নদীর দু’পাড়ের মানুষ স্বাভাবিক জীবন যাপন করতে পারছে না। কচুরীপানার কারনে পানি নষ্ট হয়ে দুর্গন্ধ ছড়াচ্ছে। এতে পরিবেশ দুষিত হয়ে মারাত্ত্বক আকার ধারন করেছে। ওই খালের পানি ব্যবহার অযোগ্য হয়ে পরেছে। এ খালের দু’পাড়ের প্রায় লক্ষাধীক মানুষের জনদুর্ভোগে পরিনত হয়। ফলে খালের পানি প্রবাহ নিশ্চিতকরন ও অবৈধভাবে দখল খাল মুক্ত করার দাবীতে বিভিন্ন সংগঠন, গণমাধ্যম কর্মী ও স্থানীয়রা আন্দোলন করে আসছে। লাখো মানুষের দুর্ভোগ লাঘবে চাওড়া নদীর পানি নিষ্কাশন ও কচুরীপানা অপসারনে ২০১৬ সালে বরগুনা পানি উন্নয়ন বোর্ড ৭’শ ৫১ কোটি টাকার আমতলী-সুবন্ধি মেগা প্রকল্প অনুমোদনের জন্য কারিগরি প্রতিবেদন পানি উন্নয়ন বোর্ডের প্রধান কার্যালয় জমা দেয়। কারিগরি প্রতিবেদন জমা দেয়ার পাঁচ বছর পরে আমতলী-সুবন্ধি প্রকল্প প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে গত ৪ জানুয়ারী জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভায় (একনেক) অনুমোদন হয়।

একনেকে প্রকল্প অনুমোদন হওয়ার খবর আমতলীতে ছড়িয়ে পড়লে সাধারণ মানুষের মাঝে স্বস্থি ফিরে এসেছে। এ প্রকল্প অনুমোদন দেয়ার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে অভিনন্দন জানিয়ে আমতলী উপজেলা সচেতন নাগরিক আনন্দ র‌্যালী করেছে। র‌্যালীতে উপজেলার কয়েকশত সচেতন নাগরিক অংশগ্রহন করেছেন। আমতলী উপজেলা নাগরিক ফোরাম ও উপজেলা আওয়ামীলী সভাপতি অ্যাডভোকেট এমএ কাদের মিয়ার সভাপতিত্বে র‌্যালী পূর্ব সমাবেশে বক্তব্য রাখেন, আমতলী সরকারী কলেজের অবসরপ্রাপ্ত সহকারী অধ্যাপক মোঃ আবুল হোসেন বিশ্বাস, বিএম কলেজের সাবেক এজিএস গাজী রফিকুল ইসলাম, পৌর আওয়ামীলীগ সাধারণ সম্পাদক কাউন্সিলর জিএম মুছা, উপজেলা আওয়ামীলীগ সাংগঠনিক সম্পাদক আলমগীর কবির মোল্লা, এনএসএস নির্বাহী পরিচালক অ্যাডভোকেট শাহাবুদ্দিন পান্না, প্রেসক্লাব সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ নুহু-উল আলম নবীন, আমতলী উপজেলা উদীচী শিল্পীগোষ্ঠীর সভাপতি অশোক কুমার মজুমদার, আমতলী সাংবাদিক ইউনিয়ন সভাপতি মোঃ জসিম উদ্দিন সিকদার প্রমুখ।

(এন/এসপি/জানুয়ারি ১২, ২০২২)