সমরেন্দ্র বিশ্বশর্মা, কেন্দুয়া : সরকারের সঠিক পৃষ্ঠপোষকতার অভাবে কেন্দুয়া উপজেলার ১৪ নং মোজাফরপুর ইউনিয়নের মোজাফরপুর গ্রামের ও বলাইশিমুল ইউনিয়নের লস্করপুর গ্রামের মৃতশিল্প আজ বিলুপ্তির পথে। আর এ কারণে মোজাফরপুর গ্রামের মৃৎশিল্পী কল্পনা, স্বরসতি, প্রিয়বালা ও নিখিল পালদের জীবন সংসার চলে খেয়ে না খেয়ে। এই শিল্প আজ হুমকির মুখে পড়েছে। বাজারে এই শিল্পের তেমন কদর না থাকায় পৈত্রিক পেশা ছেড়ে অনেকেই অন্য পেশায় চলে যাচ্ছেন পেটের তাগিদে। 

মঙ্গলবার সরেজমিন গিয়ে কথা হয় মোজাফরপুর গ্রামের সুধাংসু পালের স্ত্রী স্বরসতি পাল জানান, আমার ৪ মেয়ে ছিল, তাদেরকে বিয়ে দিয়ে আজ আমরা নিঃস্ব। আমরা এই গ্রামে ৮/৯ ডা পরিবার হাড়িপাতিল ঢাকনা, দইয়ের বাসুন ও মাটির কলস সহ অন্যান্য জিনিস বানাই। মাটি কিইন্যা আইন্যা অনকে খাডা খাটনির পর আমাদের পুরুষ মানুষরা এই সব জিনিস পত্তর গ্রামে গ্রামে ঘুইরা ঘুইরা ধান চাওল দেয়া বিক্রি করে। তারা বাজারেও যায়। কয়েক বছর আগে এই মাডির জিনিসের যে কদর আছিন, এখন সিলভার ষ্টিলের বাসন পত্রের কারনে আমরার মাডির বাসুনের কদর কইম্যা গেছে। যে কারণে আমরা খাইয়া না খাইয়া কোন মতে আমরার সংসার চালাই।

গ্রামের নিখিল পাল জানান, এক টেলাঘারি মাটির দাম ৬শ টেহা। এই মাডি গুইল্যা কাইট্যা পরিপাডি করতে অয়। বাড়ির মেয়ে ছেলেরা এই মাডি দেয়া অনেক খাডা খাটনি কইরা বাসুন বানাইয়া রইদে শুকাইয়া তার পর পুড়তে ওয়। বাসুক কুসন আমরা গ্রামে গ্রামে নিয়া ও আমরা বাজারে বিক্রি করি। কিন্তু যে দামে বিক্রি ওয় খাডা খাটনির খরচ তাতে মিডেনা।

প্রিয়বালা ও আরতি পাল জানান, দিন দিনই মাডির বাসুন বানানুর দিন কইম্যা যাইতাছে। করোনার সময় আমরা খুব কষ্ট করছি। কিন্তু সরকারের তরফ থাইক্যা কোন রকম সায্য সহযোগিতা আমরারে কেউ করছেনা। কত কষ্ট কইর‌্যা যে সংসার চালাইছি তা প্রকাশ করা সম্ভব না। আমরা সরকারের প্রধনমন্ত্রী শেখ হাসিনার কাছে সায্য চাই। যাতে আমরারে সায্য দেয়া এই মাডির শিল্পডা টিহাইয়া রাহে। সরকারের তরফ থাইক্যা আমরারে বিনা সুধে ঋণ দিলে আমরার কাজ কাম কইর‌্যা বাসুন টাসুন বানাইয়া সংসার চালাইতে খুব সুন্দর ওইব।

মৃৎশিল্পীদের দূরবস্থার বিষয়ে জানতে চাইলে উপজেলা সমাজসেবা কর্মকর্তা ইউনুস রহমান বলেন, করোনাকালীন সময়ে তাদেরকে কোন প্রনোদনা দিতে পারিনি। তবে কামার, কুমার, তাতি ও নাপিত তাদের বিষয়ে জরিপ চালিয়ে তাদের তথ্য সংগ্রহ করে উর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষ বরাবর পাঠানো হয়েছে। এখন তাদেরকে কিভাবে পুর্নবাসন করা হবে সেরকম নির্দেশনা এখনও আমরা পাইনি। নির্দেশনা পেলেই প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেয়া হবে।

(এসবি/এসপি/জানুয়ারি ১২, ২০২২)