নওগাঁ প্রতিনিধি : পৌষের শেষে নওগাঁ অঞ্চলে হঠাৎ শিলাবৃষ্টিতে মৌসুমী ফলসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। বুধবার রাত ১০টার দিকে মান্দা উপজেলার ভারশোঁ, নুরুল্লাবাদ, কুসুম্বা, কাঁশোপাড়া ও বিষ্ণুপুর ইউনিয়নের ওপর দিয়ে শিলাবৃষ্টির এই তান্ডব চলে। একই সঙ্গে ঝড়ো হাওয়া ও মুষলধারে বৃষ্টি হয়েছে। এতে সবচেয়ে ক্ষতির মুখে পড়েছেন ইটভাঁটির ব্যবসায়ীরা।

স্থানীয়রা জানান, পৌষ মাসের শেষ দিকে বুধবার সন্ধ্যার আগ মুহুর্তে হঠাৎ করেই মুষলধারে বৃষ্টি শুরু হয়। আধা ঘন্টা ধরে চলে এ বৃষ্টি। এতে জনমনে স্বস্তিও ফিরে আসে। কিন্তু রাত ৯টার দিকে আবারো কালো মেঘে পশ্চিম আকাশ ঢেকে যায়। এসময় থেমে থেমে মেঘের গর্জন চলে। রাত সাড়ে ৯টার দিকে হালকা বৃষ্টিসহ শুরু হয় শিলাবৃষ্টি। রাত ১১টা নাগাদ নওগাঁ শহরের ওপর দিয়ে চলে বৃষ্টি ও শিলাবৃষ্টি। প্রায় ২০ মিনিট ধরে চলা শিলাবৃষ্টিতে আলু, সরিষা, পেঁয়াজ, বেগুন, মৌসুমী ফল বরইসহ বিভিন্ন ফসলের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। একই সঙ্গে ক্ষতি হয়েছে সুপারি ও কলাবাগান। শিলাবৃষ্টির তোড়ে বহু ঘরের ছাউনির টিন ফুটো হয়ে গেছে।

মান্দার পশ্চিম নুরুল্লাবাদ গ্রামের কৃষক মোজাম্মেল হক জানান, চলতি মৌসুমে তিনি সাড়ে তিন বিঘা জমিতে আলুর চাষ করেন। বুধবার রাতের শিলাবৃষ্টিতে তাঁর আলুর গাছ পুরোপুরি নষ্ট হয়ে গেছে। জমিতে আটকে গেছে পানি। এতে ব্যাপক ক্ষতির মুখে পড়বেন বলেও শঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।

উপজেলার নাড়াডাঙ্গা গ্রামের কৃষক হাফেজ উদ্দিন ও জামিনুর রহমান বলেন, তাঁরা দুজনেই তিন বিঘা করে জমিতে সরিষার আবাদ করেন। শিলাবৃষ্টিতে সরিষার গাছগুলো ভেঙে মাটিতে পড়ে গেছে। এতে চরম ক্ষতির মুখে পড়বেন তাঁরা।

নুরুল্লাবাদ গ্রামের দিনমজুর আব্দুল মান্নান জানান, শিলাবৃষ্টির সময় ভয়ে সন্তানদের নিয়ে চৌকির নিচে আশ্রয় নিয়েছিলাম। শিলাবৃষ্টিতে তাঁর ঘরের ছাউনিতে থাকা সমুদয় টিন ফুটো হয়ে গেছে। এগুলো মেরামত করা না হলে ঘরে বসবাস করা যাবে না। কুসুম্বা ইউনিয়নের সদস্য জাহাঙ্গীর আলম বিদ্যুৎ বলেন, শিলাবৃষ্টিতে নাড়াডাঙ্গাসহ আশপাশের কয়েকটি গ্রামে ফসলসহ ঘরের চাউনির টিন ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।

ইটভাঁটি ব্যবসায়ী খলিলুর রহমান বলেন, হঠাৎ শিলাবৃষ্টির সঙ্গে মুষলধারে বৃষ্টির কারণে তাঁর খলিয়ানে থাকা বিপুল পরিমাণ কাঁচা ইট নষ্ট হয়ে গেছে। এতে তাঁর ক্ষতির পরিমাণ দাঁড়াতে পারে ১০ লক্ষাধিক টাকা।

কুসুম্বা ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নওফেল আলী মন্ডল বলেন, একজন উপসহকারী কৃষি কর্মকর্তাসহ এরই মধ্যে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শন করেছি। শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতির কথা উল্লেখ করে তিনি বলেন বিষয়টি উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাসহ কৃষি কর্মকর্তা ও প্রকল্প বাস্তবায়ন কর্মকর্তাকে অবহিত করা হয়েছে।

উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা শায়লা শারমিন বলেন, চলতি রবি মৌসুমের ফসলখেতগুলো শিলাবৃষ্টিতে আক্রান্ত হয়েছে। ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শনসহ তালিকা তৈরির কাজ চলছে। রিপোর্ট তৈরি হলে ক্ষতির পরিমাণ সঠিকভাবে বলা যাবে।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) আবু বাক্কার সিদ্দিক বলেন, সংবাদটি জেনে ক্ষতিগ্রস্থ এলাকা পরিদর্শনসহ প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সংশ্লিষ্ট দপ্তরগুলোকে নির্দেশ দেয়া হয়েছে। পরবর্তীতে এ বিষয়ে ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(বিএস/এসপি/জানুয়ারি ১৩, ২০২২)