পৌষ পার্বণ

গীতা রাণী ঘোষ
স্মরিলে শৈশবের পৌষ পার্বণ
মন যে আজ করে কেমন।
আমন ধান উঠলে ঘরে
গ্রামবাসিরা পিঠা উৎসব করে।
কৃষাণী আতব ধান ভানে তরস্ত, কিষাণ লাকড়ি যোগাতে ব্যস্ত।
আগুন পোহাতে পুকুর পাড়ে,
ছেলেরা লড়া বনের পুঁঞ্জি গড়ে। বোরোর আগেই বাড়ন্ত খোরাক
তবু ধানের টাকায় নতুন পোষাক,
তিল্লা-বাতাসা, গুর, তেল,
কদমা, কমলা, নারকেল।
ঘর-দোর ঝাড়া-মুছা
খারে সিদ্ধ কাপড় কাচা।
ঢেঁকিতে চাল কোটার তাড়া
চলে নগর কির্তনের মহড়া।
দুধ- নারিকেলের খিস্যা
মাসের রসবরা বুড়োদের আশা।
মুগের পাক্কন, তকতি পিঠা,
পোয়া, পুলি, পাটিসাপটা।
সংক্রান্তির আগ রাতে নেই তো ঘুম,
ঘরে ঘরে পিঠা তৈরীর ধুম।
বিকালে চুলায় আগুন উঠে,
গরম পিঠা ছেলে-পুলেই প্রথম লুটে।
নতুন পোষাকে মাথা রেখে,
আধুঘুমে ভোরের অপেক্ষায় থাকে।
অতি ভোরে কাঁপতে কাঁপতে ছোটে,
সংক্রান্তির স্নান সারতে পুকুর ঘাটে।
সরিষার তেল মেখে গায়,
স্নান সারে অবলীলায়।
পুঁঞ্জি জ্বেলে আগুন পোহায়,
মহিলারা প্রভাতি গান গায়।।
সূর্য উঠলে নেমন্তন্ন খাওয়া শুরু
হৈ হুল্লুরে দিনটা কাটে পুরো।
বিকেলে নগর কির্তন সেরে
রাতে ছেলে-বুড়ো লুট নিয়ে ফেরে।
হারিয়ে যাওয়া সংস্কৃতি
এখন কেবলি স্মৃতি।