মোঃ সিরাজ আল মাসুদ, টাঙ্গাইল : টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) সংসদীয় আসনে সম্পূর্ণ ইভিএম পদ্ধতিতে রবিবার (১৬ জানুয়ারি) অনুষ্ঠিত হবে। এ উপ-নির্বাচনে আওয়ামীলীগের প্রার্থী জেলা আওয়ামীলীগের সদস্য ও জেলা চেম্বর অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিটির সভাপতি খান আহমেদ শুভ(নৌকা), জাতীয় পার্টির প্রার্থী পার্টির প্রেসিডিয়াম সদস্য জহিরুল ইসলাম জহির(লাঙল), বাংলাদেশের ওয়ার্কার্স পার্টির প্রর্থী গোলাম নওজব চৌধুরী পাওয়ার(হাতুড়ি), বাংলাদেশের কংগ্রেস পার্টির প্রার্থী রূপা রায় চৌধুরী (ডাব) ও স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল ইসলাম নুরু(মোটরগাড়ি) প্রতিদ্বন্দ্বিতা করছেন।

এ উপ-নির্বাচনে মনোনয়নপত্রের সঙ্গে প্রার্থীদের জমা দেওয়া হলফনামা ঘেটে দেখা গেছে, আওয়ামীলীগের মনোনীত প্রার্থী এফবিসিসিআইয়ের পরিচালক খান আহমেদ শুভ পেশায় বেসরকারি বালু-মাটি সরবরাহকারী। তার নিজের হাতে নগদ দুই লাখ ৫৮ হাজার ৪৭৯ টাকা এবং স্ত্রীর কাছে ২৬ লাখ ৭৮ হাজার ১৬৫ টাকা রয়েছে। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে তার নিজের নামে ২১ লাখ ৪৪ হাজার ৩১০ টাকা এবং স্ত্রীর নামে দুই লাখ ৮ হাজার ৮৮০ টাকা জমা এবং স্ত্রীর নামে ছয় লাখ টাকার সঞ্চয়পত্র রয়েছে।

তার ব্যবসা থেকে বছরে ১৩ লাখ ৬৪ হাজার ৩৭০ টাকা আয় হয়। এছাড়া ব্যাংক সুদ থেকে তিনি ১৪ হাজার ৩৫২ টাকা পান। খান আহমেদ শুভর নিজের ৩০ ভরি এবং স্ত্রীর ১৫ ভরি সোনা রয়েছে। নিজের কোন স্থাবর সম্পত্তি নেই। তবে তিনি ৮১ লাখ ৮০ হাজার টাকা মূল্যের একটি জিপ এবং ৩০ হাজার টাকা মূল্যের মোবাইল ফোন ব্যবহার করেন। তার স্ত্রী ব্যবহার করেন ২০ হাজার টাকা মূল্যের মোবাইল ফোন। তার নামে অতীতে কোন মামলা হয়নি। বর্তমানেও কোন মামলা নেই। তার নামে পূবালী ব্যাংক ঢাকার মতিঝিল শাখায় ১৭ লাখ ৯০ হাজার ২৩৮ টাকা ঋণ রয়েছে।

খান আহমেদ শুভ টাঙ্গাইল-৭ (মির্জাপুর) সংসদীয় আসনের সাবেক সংসদ সদস্য এবং টাঙ্গাইল জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও জেলা আওয়ামী লীগের সভাপতি একুশে পদকপ্রাপ্ত বীরমুক্তিযোদ্ধা ফজলুর রহমান খান ফারুকের ছেলে।
জাতীয় পার্টির প্রার্থী জহিরুল ইসলাম জহির ১৫০ শতাংশ কৃষিজমির মালিক। কৃষি খাত থেকে বছরে তার এক লাখ টাকা এবং বাড়ি, দোকান ও অ্যাপার্টমেণ্ট থেকে বছরে ৪ লাখ ৮০ হাজার টাকা ভাড়া পান। তার নগদ পাঁচ লাখ টাকা এবং ব্যাংকে গাড়ি বিক্রির ১৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা রয়েছে। এছাড়া তিন লাখ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের সোনা, এক লাখ ৯০ হাজার টাকা মূল্যের আসবাবপত্র রয়েছে। ওয়ার্কার্স পার্টির প্রার্থী গোলাম নওজব চৌধুরী(পাওয়ার চৌধুরী) অতীতে একটি মামলায় অভিযুক্ত হয়েছিলেন।

বর্তমানে কোন মামলা তার নামে নেই। পেশায় তিনি কৃষিজীবী ও জোতদারী। কৃষি খাত থেকে বছরে তার ৬০ হাজার টাকা এবং ব্যবসা থেকে দুই লাখ ২০ হাজার টাকা আয় হয়।নিজের কাছে নগদ দুই লাখ টাকা এবং ব্যাংকে নিজ নামে দুই হাজার টাকা এবং স্ত্রীর নামে এক লাখ টাকা রয়েছে। তার ১০ ভরি সোনা, ৩০ হাজার টাকার ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ও ৫০ হাজার টাকার আসবাবপত্র রয়েছে। তিনি পৈত্রিক সূত্রে ৪২ শতাংশ জমির মালিক। এছাড়া পাঁচতলা ভিত্তিসহ ২ হাজার ১২০ বর্গফুটের নির্মাণাধীন ভবন ও একটি টিনশেড ঘর রয়েছে। এ আসনের একমাত্র নারী প্রার্থী বাংলাদেশ কংগ্রেস পার্টির রূপা রায় চৌধুরীর পেশা কৃষি ও গৃহিণী। তার নামে কোন মামলা নেই। কৃষি খাতে বছরে তার ২৫ হাজার টাকা আয় হয়। নিজের ২০ হাজার টাকা নগদ ও ব্যাংকে নিজ নামে এক হাজার টাকা জমা রয়েছে।

এছাড়া স্বামীর নগদ পাঁচ হাজার টাকা রয়েছে। তার স্বামীর নামে ৭৬ দশমিক ৫০ শতাংশ জমি রয়েছে।স্বতন্ত্র প্রার্থী নুরুল ইসলাম নুরু পেশায় ব্যবসায়ী। ব্যবসা থেকে তার বছরে তিন লাখ ৬০ হাজার টাকা আয় হয়। তার নগদ তিন লাখ টাকা এবং তার ওপর নির্ভরশীল ব্যক্তিদের নগদ দুই লাখ টাকা রয়েছে। এছাড়া ৯ লাখ ৫০ হাজার টাকার একটি ব্যক্তিগত গাড়ি, ৭০ হাজার টাকার ইলেক্ট্রনিক সামগ্রী ও ৫০ হাজার টাকার আসবাবপত্র রয়েছে। তার স্ত্রীর ৫০ তোলা সোনা রয়েছে।

ভোটারদের সাথে কথা বলে জানা গেছে, প্রার্থীদের এসব তথ্য বহুল প্রচার হলে সাধারণ ভোটাররা প্রার্থীদের সম্পর্কে বিস্তারিত জনতে পারতেন এবং ভোটাধিকার প্রয়োগে সিদ্ধান্ত নিতে সহজতর হত। ব্যাপক প্রচার না হওয়ায় হলফনামায় দেওয়া প্রার্থীদের তথ্য কোন কাজেই আসছে না।

সিনিয়র জেলা নির্বাচন অফিসার এএইচএম কামরুল হাসান জানান, হলফনামায় প্রদত্ত প্রার্থীদের তথ্য তারা ওয়েবসাইটে প্রকাশ করেছেন। সেখান থেকে যে কেউই সবকিছু জানতে পারছে। তিনি আরও জানান, এ উপ-নির্বাচনে সম্পূর্ণ ইলেক্ট্রনিক ভোটিং মেশিনের(ইভিএম) মাধ্যমে ভোটগ্রহন করা হবে। সেজন্য ভোটারদের ইভিএম প্রশিক্ষণে তারা বেশি সময় ব্যয় করছেন। ভোটগ্রহন অবাধ, সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ করতে নির্বাচন কমিশন দিনরাত কাজ করছে।

(এসএম/এসপি/জানুয়ারি ১৪, ২০২২)