স্টাফ রিপোর্টার : রাজধানীর সন্নিকটে সাভারের নামাবাজারে গড়ে উঠেছে বেশ কিছু ভেজাল গুড়ের কারখানা। গোখাদ্য, গরুর চর্বি ও কাপড়ের রং মিশিয়ে এসব কারখানায় তৈরি করা হচ্ছে আখ ও খেজুর গুড়। যেখানে আখ কিংবা খেজুর রসের লেশমাত্র নেই।

সাভারের এমন একটি কারখানা রুপা এন্টারপ্রাইজ। যেখানে দিনের আলোয় উৎপাদন না হলেও রাতের বেলা ধুম পড়ে ভেজাল গুড় উৎপাদনের। রাতের মধ্যেই টনে টনে ভেজাল গুড় উৎপাদন করে ছড়িয়ে দেওয়া হচ্ছে বাজারে। আর এমন গুড় কিনে নিজের অজান্তেই বিষ খাচ্ছেন ভোক্তারা। তবে জেনে বুঝে এমন গুড় বিক্রি থেকে সরে দাঁড়িয়েছেন সাভারের ব্যবসায়িরা। তাদের দাবি ভেজাল জেনে সাভারের গুড় তারা বিক্রি করেন না।

সাভার নামাবাজার এলাকায় রুপা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি গুড় তৈরির কারখানায় গিয়ে দেখা যায়, সারি সারি সাজানো আটার বস্তা। এখানে সাজানো রয়েছে গোখাদ্য চিটাগুড়, কাপড়ের বিষাক্ত রং, গরুর চর্বি আর কাগজে লাগানো এ ধরনের আঠা। এসবের সংমিশ্রণে তারা নির্দ্বিধায় তৈরি করছেন গুড়। এসব মানুষের না পশু খাদ্য দেখে বোঝার উপায় নেই। দীর্ঘদিন ধরে কিভাবে এমন ভেজাল গুড় উৎপাদন করা হয় প্রশ্ন সচেতন মহলের।

সাভারের নামাবাজার এলাকায় রাতের আধারে রুপা এন্টারপ্রাইজ নামের একটি গুড় তৈরির কারখানায় নিয়মিত উৎপাদন করা হয় ভেজাল গুড়। প্রতিষ্ঠানটির মালিকানায় রয়েছেন গৌতম সাহা নামের এক ব্যক্তি। যিনি প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কতিপয় কিছু ব্যক্তিকে ম্যানেজ করে মেতেছেন ভেজাল গুড় উৎপাদনে। এমন অস্বাস্থ্যকর ও ক্ষতিকর কেমিক্যাল দিয়ে তৈরি গুড় আবার বাজার থেকে কিনে হরহামেশাই প্রতারিত হচ্ছেন ভোক্তারা। দীর্ঘ দিন ধরে প্রশাসনের চোখ ফাঁকি দিয়ে কিভাবে এমন খাদ্য উৎপাদন হচ্ছে এমন প্রশ্ন তুলছেন সচেতন মহল। তবে ২০১৭ সালে র্যা ব অভিযান চালায় এই কারখানায়। সেসময় ২ লাখ টাকা জরিমানা করে কারখানার সমস্ত কাঁচামাল ও উৎপাদিত গুড় ফেলা হয় নদীতে। এই কারখানায় সাভার উপজেলা রাজস্ব সার্কেল (ভূমি) অভিযান চালিয়ে জরিমানা করেন। কিন্তু থেমে নেই এখানে ভেজাল গুড় উৎপাদন।

এব্যাপারে সাভার নামাবাজারের গুড় ব্যবসায়ি মৃদুল সাহা বলেন, ময়দা, চিনি, চিটাগুড় ও চর্বির সংমিশ্রণে নামাবাজারে গৌতম বাবু গুড় বানান বলে আমরা জানি। কিন্তু কোন দিন দেখি নি। ভেজাল গুড় সাভারে উৎপাদন হওয়ায় আমরা সাভারের কোন গুড়ই বিক্রি করি না। দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে আমরা নির্ভেজাল গুড় সংগ্রহ করে বিক্রি করি।

অপর ব্যবসায়ী দুলাল দাশ ৩২ বছর ধরে সাভারে গুড় বিক্রি করেন। তিনি বলেন, সাভারে গৌতমের গুড় চলে না। তিনি বাহিরে ওসব গুড় বিক্রি করেন। আমরাও জেনেশুনে এমন গুড় বিক্রি করি না। তবে তার দাবি চিনি ছাড়া কোন গুড়ই উৎপাদন হয় না। তবে আমাদের গুড় আখের রস দিয়েইতৈরি করা হয়।

এব্যাপারে রুপা এন্টারপ্রাইজের মালিক গৌতম সাহা বলেন, আমরা মুলত কারখানায় গোখাদ্য উৎপাদন করি। আমরা গুড় উৎপাদন করি না। এসব মিথ্যা কথা। গুড় উৎপাদনের ভিডিও সংরক্ষণে আছে এমন কথার জবাব না দিয়ে তিনি বিষয়টি এড়িয়ে যান।

এব্যাপারে উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. সায়েমুল হুদা বলেন, এ ধরনের খাদ্য মানবদেহে প্রবেশের ফলে ক্যানসারের মত রোগের সৃষ্টি হতে পারে, মানুষের বিভিন্ন অর্গ্যান ড্যামেজ (ধংস) হতে পারে। শিশুদের জন্য তো এমন খাদ্য মারাত্মক ক্ষতিকর। এসব খাদ্য থেকে অব্যশ্যই বিরত থাকতে হবে।

এ ব্যাপারে সাভার উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মাজহারুল ইসলাম বলেন, নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ এর ২৩ ধারায় বিষাক্ত দ্রবের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন একই আইনের ২৫ ধারায় ভেজাল খাদ্য উৎপাদন এবং ৩৩ ধারায় মানব দেহের জন্য ক্ষতিকর বিবেচনায় খাদ্য উৎপাদন নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এর ব্যতয় হলে দন্ড আরোপের বিধান রয়েছে। এছাড়াও ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ আইন ২০০৯ এর ৪২ ও ৪৩ ধারায় বিষাক্ত দ্রব্যের ব্যবহারের মাধ্যমে খাদ্য উৎপাদন কিংবা মানব দেহের ক্ষতিকর এমন কোন খাদ্য উৎপাদন করলে ২ বছর কারাদণ্ড কিংবা দুই হাহার টাকা জরিমানার বিধান রয়েছে। আমরা এই বিষয়টি ক্ষতিয়ে দেখবো। প্রমান পেলে আইনের যথাযথ প্রয়োগ করা হবে।

(টিজি/এএস/জানুয়ারি ১৫, ২০২২)