আশুলিয়া প্রতিনিধি : শিল্পাঞ্চল আশুলিয়ার ফুটপাত যেন এক চাঁদারহাট। শুধু ফুটপাত নয়, এখন তাদের দখলে রয়েছে মহাসড়কও। এতে করে মহাসড়কে দীর্ঘ হচ্চে যানজটের সাড়ি, চরম ভোগান্তিতে পড়ছে যাত্রীসাধারণসহ পথচারীরা। বাড়ছে দুর্ঘটনাও।

ফলে পথ চলায় নেই কোনো স্বস্তি, বেড়েই চলেছে বিড়ম্বনা। শিল্পাঞ্চলবাসীর জন্য এ বিচিত্র অভিজ্ঞতা একদিনের নয়, প্রতিদিনের।

সব মিলিয়ে ত্যক্ত-বিরক্ত এই এলাকায় বসবাসরত পোশাক শ্রমিকসহ এলাকাবাসী। এ নিয়ে সমালোচনারও যেন শেষ নেই। কিন্তু কোনো পদক্ষেপেই কোনো কিছু হচ্ছে না।

আশুলিয়ার নবীনগর-চন্দ্রা মহাসড়কের নবীনগর, পল্লীবিদ্যৎ বাসস্ট্যান্ড, সম্ভার পাম্প, নতুন ইপিজেড ও বলিভদ্র বাজার এলাকার ফুটপাতের প্রায় ১৮শ থেকে ২ হাজার দোকান রয়েছে। এছাড়াও টঙ্গী-বাইপাইল-ইপিজেড সড়কের ইউনিয়ক ও জামগড়া এলাকায় রয়েছে আরও অন্তত ৫শ থেকে ৭শ দোকান ঘর। যার প্রত্যেক দোকান হতে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত চাঁদা আদায় করা হয়। গড়ে ২০০ টাকা ধরলে দিনে ৩ লাখ থেকে ৪ লাখ টাকার চাঁদাবাজি হয়। সেই হিসেবে মাসে ৯০ লাখ থেকে ১ কোটি ২০ লাখ টাকার চাঁদাবাজি হচ্ছে আশুলিয়ার এই সড়ক-মহাসড়কের অন্তত ৮-১০ টি স্থানে। লাখ লাখ টাকা বাণিজ্য করা হলেও এর সিকি অংশও সরকারের কোষাগারে যায় না। ফুটপাতে ব্যবসা করতে হলে প্রত্যেক হকারকেই ১০ হাজার থেকে লাখ টাকা পর্যন্ত এককালীন দিতে হচ্ছে।

অনুসন্ধানে জানা যায়, নবীনগর এলাকার তিন শতাধিক দোকানের টাকা তুলেন মাসুদ, মিজান ও রানা নামের তিন জন। যারা প্রতিটি দোকান থেকে ১০০ থেকে ১২০ টাকা করে নেন। বলিভদ্র এলাকার আনবিকের সামনের শতাধিক দোকান থেকে ২০০ থেকে ৩০০ টাকা করে নেন রিপন ও কামাল নামের দুইজন। যারা ধামসোনা ইউনিয়ন আওয়ামীলীগের সভাপতি লতিফ মন্ডলের লোক বলে জানা যায়।

ডিইপিজেডের পুরতান জোন এলাকা হতে বলিভদ্র বাজার পর্যন্ত তিন শতাধিক দোকান দেখাশোনা করে আতিক ও জাহাঙ্গীর নামের দুইজন। তারাও লতিফ মন্ডলের লোক বলে জানা যায়। অবশ্য এখানে টাকার তুলার দায়িত্বে রয়েছেন শামসুর নাহার নামের এক মহিলা। যিনি প্রতি দোকান হতে ৫০ থেকে ৪০০ টাকা পর্যন্ত আদায় করেন।

অন্যদিকে আশুলিয়া থানা এলাকা থেকে সম্ভার পাম্প পর্যন্ত টাকা তুলেন এক সাংবাদিক। এছাড়াও সম্ভার পাম্প হতে ডিইপিজেডের পুরাতন শাখা পর্যন্ত টাকা তুলেন আওয়াল, রাজু ও জাকির নামের তিনজন। যারা সবাই স্থানীয় প্রভাবশালী ওমর আলীর লোক বলে জানা যায়।

এ ব্যাপারে জানতে আব্দুল লতিফ মন্ডল ও শামসুর নাহারের সাথে মুঠোফোনে যোগাযোগের চেষ্টা করলে তারা উভয়ে মুঠোফোনটি রিসিভ করার পরে সাংবাদিক পরিচয় পেয়ে ব্যস্ত আছেন বলে কলটি কেটে দেন।

বেশির ভাগ হকারই টাকা দেওয়ার কথা স্বীকার করেন না। কারণ এ নিয়ে সংবাদ প্রচার হলে কয়েক দিন পুলিশের উৎপাত দোকান বসানোই অসম্ভব হয়ে পড়বে।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন হকার জানান, চাঁদার টাকা না দিলে দোকান রাখা অসম্ভব। শুধু চাঁদার টাকা নয়, বসার জন্য তাদেরকে এককালীন অগ্রিম টাকাও দিতে হয়। প্রথমে লাইনম্যানরা টাকা তুলে পরে তা ভাগাভাগি করে। তবে টাকার বড় অংশই চলে যায় প্রভাবশালীদের পকেটে। এখানে আওয়ামী লীগের এক শ্রেণির নেতারা তাদের ঘনিষ্ঠদেরকে লাইনম্যান হিসেবে নিয়োগ দেন।

আশুলিয়া থানা পুলিশ, সাভার হাইওয়ে থানা পুলিশ এবং সড়ক ও জনপদের কর্মীরা দুপুরে ফুটপাত খালি করলেও তারা চলে যাওয়ার পর হকারদের আবার বসিয়ে দেয়া হয়। বিক্রি না হলেও চাঁদা দেয়া থেকে তাদের কোনো ছাড় নেই। হকাররা চাঁদা দিতে অপারগতা প্রকাশ করলে, সেখান থেকে তাকে উঠিয়ে বসিয়ে দেয়া হয় নতুন কোনো হকারকে। তাদের কাছ থেকেও জামানতসহ নেয়া হয় নিয়মিত চাঁদা।

শিল্পাঞ্চলবাসীর প্রশ্ন, এভাবে কি আর আশুলিয়ার দীর্ঘদিনের সমস্যার সমাধান হবে? ফুটপাতে চাঁদাবাজির নেপথ্যের প্রভাবশালী মহলকে নিবৃত করবে কে? যেখানে জড়িত লাখ লাখ টাকার বাণিজ্য? এ নিয়ে জনমনে সংশয় রয়েছে।

(এসকে/এএস/জানুয়ারি ১৫, ২০২২)