স্টাফ রিপোর্টার : বড় অঙ্কের ঋণ ফেরত না পাওয়ায় কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। নির্দেশনা মতে, ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া ঋণসুবিধা কোনোভাবেই ব্যাংকের মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি হবে না। এর আগে যেটা ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত দেওয়া যেত। চলতি বছরের ১ এপ্রিল থেকে নতুন এ নির্দেশনা কার্যকর হবে।

রবিবার (১৬ জানুয়ারি) বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকিং প্রবিধি ও নীতি বিভাগ-বিআরপিডি এ সংক্রান্ত নির্দেশনা দিয়ে বাণিজ্যিক ব্যাংকের প্রধান নির্বাহীদের কাছে পাঠিয়েছে।

এ নির্দিশনায় বড় অঙ্কের ঋণ বিতরণের ক্ষমতাও কমানো হয়েছে। আর্থিক ঝুঁকি কমাতেই মূলত এ বিধিনিষেধ দিয়েছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক।

নতুন নির্দেশনায় বলা হয়েছে, মোট ঋণের ৩ শতাংশের কম খেলাপি ঋণ থাকলে এসব ব্যাংক তাদের মোট ঋণের ৫০ শতাংশ বড় অঙ্কের ঋণ দিতে পারবে। ঋণের ৩ শতাংশের বেশি এবং ৫ শতাংশের কম খেলাপি ঋণ থাকলে সে ব্যাংক মোট ঋণের ৪৬ শতাংশ বড় ঋণ দিতে পারবে। এর আগে মোট ঋণের ৫ শতাংশ পর্যন্ত খেলাপি ঋণ থাকলে ৫৬ শতাংশ বড় অঙ্কের ঋণ দিতে পারতো ব্যাংক।

কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্দেশনায় আরও বলা হয়, মোট ঋণের ৫ শতাংশের বেশি এবং ১০ শতাংশের কম খেলাপি ঋণ থাকলে সে ব্যাংক মোট ঋণের ৪২ শতাংশ বড় অঙ্কের ঋণ দিতে পারবে। এর আগে ৫২ শতাংশ বড় অঙ্কের ঋণ দিতে পারতো। ১০ শতাংশের বেশি কিন্তু ১৫ শতাংশের কম খেলাপি ঋণ হলে ৩৮ শতাংশ বড় অঙ্কের ঋণ দিতে পারবে সেই ব্যাংকটি। এর আগে ৪৮ শতাংশ বড় অঙ্কের ঋণ দিতে পারতো ব্যাংক।

এছাড়াও কোনো ব্যাংকের মোট ঋণের ১৫ শতাংশের বেশি এবং ২০ শতাংশের কম খেলাপি ঋণ হলে সে ব্যাংক ৩৪ শতাংশ বড় অঙ্কের ঋণ দিতে পারবে। এর আগে যেটা ৪৪ শতাংশ ছিল। আর ২০ শতাংশের বেশি খেলাপি ঋণ থাকলে ৩০ শতাংশ বড় অঙ্কের ঋণ দিতে পারবে সেই ব্যাংক। এর আগে ৪০ শতাংশ বড় অঙ্কের ঋণ দিতে পারতো। এক্ষেত্রে ১০ শতাংশ করে কমানো হয়েছে।

নির্দেশনা মতে, একক কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা গ্রুপকে প্রদত্ত ঋণসীমা কমেছে ১০ শতাংশ। এক্ষেত্রে কোনোভাবেই ঋণসুবিধা ব্যাংকের মূলধনের ২৫ শতাংশের বেশি হবে না। আগে যেটা ৩৫ শতাংশ ছিল।

ব্যাংকের মূলধনের মধ্যে কোনো ব্যক্তি বা গ্রুপকে ১৫ শতাংশ নগদ আকারে দেওয়া যাবে। এর আগে নগদ ঋণ ১০ শতাংশ দেওয়ার নিয়ম ছিল। কোনো ব্যাংকের মূলধনের ২০ শতাংশ বড় অঙ্কের ঋণ দেওয়ার নিয়ম থাকলেও এখন দেওয়া যাবে ১০ শতাংশ। ব্যাংক পরোক্ষভাবে এটি (ব্যাংক গ্যারান্টি, এলসি, চেক ইস্যু) ১০ শতাংশ কমিয়েছে। ফলে তাৎক্ষণিকভাবে ব্যাংকের ওপর দায় পড়বে না।

তবে সরকারি খাতের বড় বড় প্রকল্প এ নীতিমালার আওতার বাইরে থাকবে। আবার ইন্টারন্যাশনাল ব্যাংক ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (আইবিআরডি), ইন্টারন্যাশনাল ফাইন্যান্স করপোরেশন (আইএফসি), এশিয়ান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এডিবি), আফ্রিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এএফডিবি), ইউরোপিয়ান ব্যাংক ফর রিকনস্ট্রাকশন অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (ইবিআরডি), ইন্টার-আমেরিকান ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইএডিবি), ইউরোপীয় বিনিয়োগ ব্যাংক (ইআইবি), ইউরোপীয় বিনিয়োগ তহবিল (ইআইএফ), নর্ডিক ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংক (এনআইবি), ক্যারিবিয়ান উন্নয়ন ব্যাংক (সিডিবি), ইসলামিক ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (আইডিবি) এবং কাউন্সিল অব ইউরোপ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংকের (সিইডিবি) ক্ষেত্রে এ নীতিমালা কার্যকর করা যাবে না।

(ওএস/এএস/জানুয়ারি ১৭, ২০২২)