আন্তর্জাতিক ডেস্ক : বোর্নিও দ্বীপের পূর্ব প্রান্তের একটি স্থানকে নতুন রাজধানী হিসেবে বেছে নিলো ইন্দোনেশিয়া। এটি দেশটির ইস্ট কালিমানতান প্রদেশে অবস্থিত। স্থানীয় সময় মঙ্গলবার (১৮ জানুয়ারি) দেশটির হাউজ অব রিপ্রেজেন্টেটিভে জাকার্তা থেকে বোর্নিও দ্বীপে রাজধানী স্থানান্তর করার একটি বিল পাস হয়। এবার জাকার্তার পরিবর্তে ইন্দোনেশিয়ার নতুন রাজধানী হচ্ছে ‘নুসান্তারা’।

ইন্দোনেশিয়ার সমগ্র দ্বীপপুঞ্জের নৃ-তাত্ত্বিক জাতিগোষ্ঠীকে বোঝাতে নুসান্তারা নামকরণ করা হয়েছে রাজধানীটির। দেশটির জাতীয় উন্নয়ন পরিকল্পনা মন্ত্রী সুহার্সো মনোয়ারফা বলেছেন, প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো এ নামের প্রস্তাব করেন।

জনাকীর্ণ, দূষিত এবং ধীরে ধীরে সাগরে তলিয়ে যাওয়া রাজধানী জাকার্তাবাসীকে মুক্তি দিতেই ইন্দোনেশিয়ার রাজধানী স্থানান্তরের সিদ্ধান্ত নেওয়ার কথা এর আগেই জানিয়েছিলেন দেশটির প্রেসিডেন্ট জোকো উইদোদো।

ইস্ট কালিমানতান প্রদেশের নুসান্তারা নামের এই নতুন রাজধানী, জাকার্তা থেকে উত্তর-পূর্বে দুই হাজার কিলোমিটার দূরে অবস্থিত। বর্তমানে কেন্দ্রীয় সরকার পরিচালনা, ব্যবসা-বাণিজ্য, অর্থনীতি এবং বিভিন্ন সেবামূলক কাজ পরিচালনার মূল কেন্দ্র জাকার্তা। তবে ইন্দোনেশিয়ার ৩৪টি প্রদেশের সমতুল্য নুসান্তারার একটি প্রাদেশিক পর্যায়ের প্রশাসনও থাকবে বলে জানা গেছে।

নতুন রাজধানীর উন্নয়ন কাজের জন্য আইনটি পাসের দুই মাসের মধ্যে নুসান্তারা নগরী প্রধান কর্তৃপক্ষ নিয়োগ দেওয়া হবে। এই কর্তৃপক্ষই বছরের শেষের দিকে কাজ শুরু করবে।

আইনের সর্বশেষ খসড়া অনুযায়ী, নতুন রাজধানীর প্রস্তুতি, উন্নয়ন এবং স্থানান্তরকে গুরুত্ব দিয়ে ১০ বছরের জাতীয় অগ্রাধিকার কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়েছে। দেশটির সরকারের বরাদ্দকৃত জায়গায় বিদেশি রাষ্ট্রের দূতাবাস, বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংগঠনের প্রতিনিধি অফিস এই ১০ বছরের মধ্যে তাদের সব ধরনের স্থাপনাসহ অন্যান্য জিনিস স্থানান্তর করতে পারবে।

দেশটির প্রেসিডেন্ট উইদোদো ২০১৯ সালের শেষ দিকে তার দ্বিতীয় মেয়াদ শুরু করার পরেই রাজধানী স্থানান্তরের পরিকল্পনা ঘোষণা করেছিলেন। কিন্তু কোভিড-১৯ মহামারির কারণে পিছিয়ে পড়ে সেই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের কাজ।

রাজধানী পরিবর্তনের এই উচ্চাকাঙ্খী পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য ইন্দোনেশিয়া সরকারকে ৪৬৬ ট্রিলিয়ন রুপিয়া (প্রায় ৩৩ বিলিয়ন মার্কিন ডলার) খরচ করতে হবে। যদিও জাকার্তায় এক ট্রাফিক ব্যবস্থা নিয়ন্ত্রণেই বছরে একশ ট্রিলিয়ন রুপিয়া খরচ হয়ে যায় দেশটির। দেশটির সরকারি তহবিল থেকে ব্যয় হবে এই অর্থ।

জানা গেছে, যানজটের কারণে বেহাল অবস্থা বর্তমান রাজধানী জাকার্তার। তবে রাজধানী সরিয়ে নেওয়ার পেছনে আরও নানাবিধ কারণ রয়েছে। প্রায় অর্ধেক জাকার্তার বর্তমান অবস্থান সমুদ্রপৃষ্ঠের নিচে। সেখানকার বহু মানুষ জলাভূমিতে বসবাস করছেন। জাকার্তা নগরীর বেশ কিছু এলাকা ২৫ সেন্টিমিটারের বেশি তলিয়ে যায় প্রতিবছর। মূলত জাকার্তা শহরটি জাভা সাগর পরিবেষ্টিত এবং এটির মধ্য দিয়ে ১৩টি নদী বয়ে গেছে। নিক্কেই এশিয়া।

(ওএস/এসপি/জানুয়ারি ১৮, ২০২২)