অরিত্র কুণ্ডু, ঝিনাইদহ : এক প্রবাসী নারীর সাথে প্রেমের ও বিয়ের অভিনয় করে তার জমানো টাকা লুটে নিয়েছে জিয়া নামে এক গ্যারেজ মালিক। সৌদি প্রবাসী ঐ নারী দেড় বছর ধরে গৃহকর্মীর কাজ করে কথিত স্বামী জিয়ার হাতে তুলে দিয়েছেন জীবনের সকল আয় উপার্জন। জিয়া সেই টাকা নিয়ে আবার জড়িয়েছেন নতুন সম্পর্কে, করেছেন বিয়ে। ঝিনাইদহ পৌর এলাকার শিকারপুর (শেখ পাড়া) গ্রামের নফর আলী সর্দারের মেয়ে রিনা বেগম (৩৯) নামে এক প্রবাস ফেরত নারী আদালতে দায়ের করা মামলায় এমনই বর্ননা করেছেন। 

ঝিনাইদহ নারী ও শিশু স্পেশাল ট্রাইবুনালে দায়ের করা এক মামলার আর্জিতে উল্লেখ করা হয়, প্রবাস ফেরৎ রিনা বেগমের ১৮ বছর বয়সী একটি মেয়ে ও ১৬ বছর বয়সী একটি ছেলে সন্তান রয়েছে। প্রায় কুড়ি বছর আগে তার বিয়ে হয় কালীগঞ্জ উপজেলার মির্জাপুর গ্রামে। দুই সন্তান রেখে স্বামী প্রবাসে পাড়ি জমিয়ে আর ফিরে আসেনি। ফলে অভাবের সংসারে এক ছেলে ও মেয়েকে নিয়ে কষ্টেই কাটছিল রিনা বেগমের সংসার। ছেলেকে ঝিনাইদহ শহরের বাইপাস সড়কে জিয়ার গ্যারাজে কাজ করতে দেন। এখান থেকেই রিনা বেগমের সাথে পরকীয়া সম্পর্ক তৈরি করেন জিয়া। জিয়া শহরতলীর কালীচরণপুর ইউনিয়নের হাটবাকুয়া গ্রামের সিরাজ উদ্দিন মুন্সির ছেলে। সম্পর্ক তৈরী হওয়ায় তারা ঝিনাইদহ শহরের হোটেল রেডিয়েশন ইনন’এ নোটারি পাবলিকের মাধ্যমে বিয়ে করেন। বিয়ের পর ঝিনাইদহ ও ঢাকার বিভিন্ন হোটেলে রাত কাটাতো রিনা ও জিয়া। এক পর্যায়ে সৌদি আরবে চলে যায় রিনা বেগম। ৩ বছর বিদেশ থেকে এসে রিনা বেগমের নতুন করে আবার যোগাযোগ হয় জিয়ার। জিয়ার পরিবার ও অন্যান্য আত্মীয় স্বজনের কাছে রিনা বেগমকে স্ত্রী হিসাবেই পরিচয় দিত। বিদেশে থেকে ইসলামী ব্যাংকের মাধ্যমে জিয়ার নামে দেড় বছরে ২ লাখ ৭৭ হাজার টাকা পাঠিয়েছে রিনা বেগম। সেই টাকা রিনা বেগমের ছেলে মেয়েকে না দিয়ে নিজেই আত্মসাত করেছে জিয়া। টাকা আত্মসাতের পর রিনা বেগমের সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দেয় প্রতারক জিয়া। গত বছরের ৮ ডিসেম্বর দেশে ফিরে আসেন রিনা বেগম। বাড়ি ফিরে রিনা জানতে পারে খালাতো বোন নুপুরের সাথে পরকীয়া সম্পর্কে জড়িয়ে পড়েছে জিয়া। নুপুর কুষ্টিয়া জেলার হরিনারায়ণপুর গ্রামের আজিজের মেয়ে। নুপুরের আগের সংসারে দুটি বাচ্চা রয়েছে। খোঁজ নিয়ে জানাগেছে, জিয়া মোট বিয়ে করেছেন ৪টা। এর মধ্যে ৩টায় পরকীয়ার বিয়ে। খালাতো বোন নুপুরকে বিয়ে করার পরে বিভিন্ন সালিশ দরবারে বসতে হয়েছে।

রিনা বেগম জানান, তিনি দেশে ফিরে এসে জিয়ার সাথে যোগাযোগ করে টাকা ফেরত চাইলে তিনি অস্বীকার করেন। অস্বীকার করেন তাদের সম্পর্ক। রিনা বেগম অভিযোগ করেন, তার পাঠানো টাকাতেই বাইপাসে নতুন গ্যারাজ করে জিয়া। বাধ্য হয়ে তিনি আদালতে মামলা দায়ের করেছেন। আদালতের নির্দেশে পিবিআইয়ের পরিদর্শক আব্দুর রব মামলার তদন্ত করেছেন। প্রতারক জিয়ার প্রথম স্ত্রীর ঘরে ৩ সন্তান, দ্বিতীয় স্ত্রীর ঘরে ২টি প্রতিবন্ধি সন্তান রয়েছে। দ্বিতীয় স্ত্রী বর্তমানে ঝিনাইদহ শহরে হোটেলে কাজ করে খায়। প্রথম ও দ্বিতীয় পক্ষের কোন স্ত্রীর ভরণপোষণ দেয় না জিয়া। প্রথম স্ত্রী বেবী অভিযোগ করেন, তার স্বামী দুঃচরিত্রের লোক। ঘরে স্ত্রী থাকার পরও নারী দেখলে সেই পাগল হয়ে যায়। তার প্রথম ৩ স্ত্রী এই নারী লোভী ব্যক্তির বিচার দাবি করেছেন।

(একে/এসপি/জানুয়ারি ১৯, ২০২২)