মির্জা জাকির, চাঁদপুর ॥ অর্থমন্ত্রী আবুুল মাল আবদুল মুহিত বলেছেন, দেশের প্রবৃদ্ধি বাড়াতে হলে পুরুষের পাশাপাশি নারী শক্তিকে কাজে লাগাতে হবে। বর্তমানে বাংলাদেশের প্রবৃদ্ধির হার ৬ শতাংশের বেশি। এ প্রবৃদ্ধির হারকে ৮-১০ শতাংশে উন্নীত করতে হলে পুরুষের পাশাপাশি দেশের ৫০ ভাগ নারীকে কাজে লাগাতে হবে। নারীদেরকে উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে সম্পৃক্ত করে কাঙ্খিত লক্ষ্যে পৌঁছার জন্য এগিয়ে যেতে হবে।

তিনি গত শনিবার দুপুরে কচুয়া উপজেলার হাসিমপুর ড. মনসুর উদ্দীন মহিলা কলেজের কৃতী ছাত্রী সংবর্ধনা ও স্মৃতিচারণমূলক অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন। ড. মুহাম্মদ মনসুর উদ্দীনের স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে অর্থমন্ত্রী বলেন, তিনি (ড. মনসুরউদ্দীন) ১৯৪৯-১৯৫১ সাল পর্যন্ত আমার শিক্ষক ছিলেন। তাঁর কাছ থেকে আমি জ্ঞান আহরণের শিক্ষা পেয়েছি। তিনি শুধু শিক্ষকই ছিলেন না, একনাগাড়ে লোকসাহিত্যিক, প্রাবন্ধিক, গল্পকার, সম্পাদক, লোক বিজ্ঞানী, বাংলা সাহিত্যের গবেষক ও একজন কবি ছিলেন। ড. মনসুর উদ্দীন পাবনার মানুষ হলেও চাঁদপুরের কচুয়ায় তাঁর নামে এ কলেজ প্রতিষ্ঠা করায় তাঁর সুযোগ্য জামাতা এনবিআর চেয়ারম্যান গোলাম হোসেন তথা কচুয়াবাসীর কাছে আমি কৃতজ্ঞ।
অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে বাণিজ্যমন্ত্রী তোফায়েল আহমেদ বলেন, জিএসপি বন্ধ থাকায় পণ্য রপ্তানিতে কোনো সমস্যা হয়নি। ইতোমধ্যে জিএসপি পেতে সরকারের পক্ষ থেকে সব ধরনের শর্ত পূরণ করা হয়েছে। আশা করছি আগামী বছরের মধ্যে আমরা জিএসপি সুবিধা পাবো। যদি না পাই, তবে রাজনৈতিক ষড়যন্ত্রই হবে এর একমাত্র কারণ। জিএসপি সুবিধা বাতিল করলেও আমেরিকার বাজারে আমরা ৭ বিলিয়ন ডলারের সামগ্রী রপ্তানি করি। আমেরিকায় আমাদের পণ্য বাজার উন্মুক্ত রয়েছে। তিনি আরো বলেন, তৈরি পোশাক খাতকে অগ্রাধিকার দিয়ে রপ্তানি করে আমরা বৈদেশিক আয় বৃদ্ধি করেছি। শুধুমাত্রা তৈরি পোশাক খাতে রপ্তানি করে ২০১২-১৩ অর্থ বছরে ২২ বিলিয়ন ডলার থেকে ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ২৪.৫০ বিলিয়ন ডলারে উন্নীত করেছি। এ খাতে কর্ম পরিবেশ অতীতের যে কোনো সময়ের চেয়ে ভালো।
অনুষ্ঠানে ত্রাণ ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া (বীর বিক্রম) বলেছেন, সরকারের অনুদান ছাড়াও যে ভালো কিছু করা যায় ড. মনসুরউদ্দীন মহিলা কলেজ তার জ্বলন্ত উদাহরণ। আমি আশাবাদী কলেজ পরিচালনা পর্ষদ, অভিজ্ঞ শিক্ষক মণ্ডলী, শিক্ষার্থী ও অভিভাবকের অব্যাহত প্রচেষ্টায় ভবিষ্যতে এ কলেজে শতভাগ সাফল্যের ধারাবাহিকতা বজায় থাকবে। সাফল্যের ধারাবাহিকতার এক পর্যায়ে এ কলেজটি একদিন মহিলা বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত হবে। আর বিশ্ববিদ্যালয়ে রূপান্তরিত করতে সরকারের পক্ষ থেকে সবধরনের সহযোগিতা করা হবে।
রেলমন্ত্রী মুজিবুল হক বলেছেন, মানুষ জন্ম-মৃত্যুর মাঝের সময়ে দেশ ও জাতির কল্যাণে কিছু অবদান রেখে যায়। যার ফলে পরবর্তী প্রজন্ম তাদেরকে আমরণ স্মরণীয় করে রাখে। এমনি এক ব্যক্তি লোক সাহিত্যিক ড. মনসুর উদ্দীন। তাঁর সুযোগ্য জামাতা জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ গোলাম হোসেন এ কলেজটি প্রতিষ্ঠা করে ড. মনসুর উদ্দীনের নামকে বাঙালি জাতির কাছে আরো হাজার বছর মনে রাখার ব্যবস্থা করেছেন। অজপাড়াগাঁয়ে স্থাপিত ড. মনসুর উদ্দীন কলেজটি প্রতিষ্ঠার পর থেকে শতভাগ সাফল্যের হ্যাট্রিক করেছে। এটি বিরল দৃষ্টান্ত। অনুষ্ঠানের সভাপতি সাবেক স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী ড. মহীউদ্দীন খান আলমগীর এমপি বলেন, আমি ড. মুহম্মদ মনসুর উদ্দীনের সরাসরি ছাত্র। তাঁর নামে স্থাপিত বেসরকারি উদ্যোক্তাদের প্রচেষ্টায় প্রতিষ্ঠিত কলেজটির সাফল্যে আমি গর্বিত। ঐক্যবদ্ধ ও আন্তরিক প্রয়াস যে কোনো বাধাকে অতিক্রম করতে পারে এর উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত এ কলেজটি। সুনির্দিষ্ট কর্মকৌশল হচ্ছে যে কোনো বিষয়ে প্রধান নিয়ামক ও উপাদান। তিনি আরো বলেন, ড. মনসুর উদ্দীন কলেজের প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ও এনবিআর চেয়ারম্যান মোঃ গোলাম হোসেনের উদ্যোগকে পাথেয় হিসেবে গ্রহণ করে প্রতিটি উপজেলায় এরূপ প্রতিষ্ঠান গড়ে তুললে দেশের সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। তিনি অধ্যাপক ড. মনসুরউদ্দীন রচিত ‘হীরামনির’ অনুপ্রেরণা শিক্ষার্থী তথা সুধীজনের মধ্যে ছড়িয়ে দিতে উদাত্ত আহ্বান জানান।
অনুষ্ঠানের শুরুতে স্বাগত বক্তব্যে কলেজ পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি ও জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের চেয়ারম্যান মোঃ গোলাম হোসেন বলেন, দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ায় শত প্রতিকূলতার মধ্যেও সরকারের প্রভাবশালী ক’জন মন্ত্রীর আগমন কলেজ কর্তৃপক্ষ ও কচুয়াবাসীকে কৃতজ্ঞ করেছে। তিনি আরো বলেন, কলেজটি সম্পূর্ণ বেসরকারি অর্থায়নে ধনাঢ্য কিছু ব্যক্তির সহায়তায় পরিচালিত হয়ে আসছে। কলেজ থেকে ছাত্রীদের বই, পোশাক, এমনকি ১শ’ ২০জন ছাত্রীর থাকা ও খাওয়ার সুবিধা দেয়া হচ্ছে।
সংবর্ধনা অনুষ্ঠানে লোক সাহিত্যিক ড. মনসুর উদ্দীনের জীবনালেখ্য নিয়ে সেমিনারে স্মৃতিচারণ করে প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন বাংলা একাডেমীর সাবেক চেয়ারম্যান সেলিনা রহমান ও কুষ্টিয়া ইসলামী বিশ^বিদ্যালয়ের অধ্যাপক ড. আবুল আহসান চৌধুরী। অনুষ্ঠান শেষে অতিথিবৃন্দ কৃতী শিক্ষার্থীদের মাঝে পুরস্কার বিতরণ করেন। বিকেলে দেশবরণ্যে লোকশিল্পী আব্দুল বারী ছিদ্দিকী ও তার মেয়ে সায়মা ছিদ্দিকী বাউল লোকগীতি ও বাউল সংগীত পরিবেশন করেন। এদিকে দুর্যোগপূূর্ণ আবহাওয়া উপেক্ষা করে সকাল থেকে হাজার হাজার জনতা ড. মনসুর উদ্দীন মহিলা কলেজে সমবেত হয়। বৃষ্টির কারণে অতিথিদের আগমন বিলম্বিত হওয়ায় সকাল ১০টার স্থলে দুপুর ১২টায় অনুষ্ঠান শুরু হয়।

(এমেজ/এসসি/২১সেপ্টেম্বর২০১৪)