দেবেশ চন্দ্র সান্যাল


মুক্তিযুদ্ধ ধারার অনলাইন নিউজ পোর্টাল উত্তরাধিকার ৭১ নিউজের মুক্তিযুদ্ধ বিভাগে যে কোন বীর মুক্তিযোদ্ধা তাঁর যুদ্ধ কথা লিখে পাঠালে তা এই বিভাগে প্রকাশ করা হয়। আজ প্রকাশ করা হলো বীর মুক্তিযোদ্ধা দেবেশ চন্দ্র সান্যালের যুদ্ধ কথা। তাঁর বাড়ি সিরাজগঞ্জ জেলার শাহজাদপুর উপজেলার রতন কান্দি গ্রামে।

কল্যাণপুর যুদ্ধ: কল্যাণপুর সিরাজগঞ্জ জেলার বেলকুচি থানার একটি গ্রাম। এই যুদ্ধে নেতৃত্বে ছিলেন ডেপুটি
কমান্ডার (কমান্ডার হিসাবে নিয়োগ প্রাপ্ত) বাবু রবীন্দ্র নাথ বাগ্চী। কমান্ডার স্যারের নির্দেশে আমরা ১১ জন
রবীন্দ্র নাথ বাগ্চীর কমান্ডনাধীন হয়ে হেটে ভোরে বেলকুচি উপজেলার কল্যাণপুর নামক গ্রামে এক বাড়িতে আশ্রয়
নিলাম। ৫ নভেম্বর ’৭১ বাড়ির মালিক আমাদের সকালের খাবারের ব্যবস্থা করলেন। আমরা সারারাত নিদ্রাহীন
থেকেও হেটে ক্লান্ত হয়ে পড়েছিলাম। সকালের খাবার খেয়ে প্রকাশ্যে পিটি, প্যারেড করলাম। অস্ত্র পরিষ্কার করলাম।
অস্ত্রে ফুলতুরী মারলাম। একজন করে ডিউটি করতে থাকলাম। অন্যন্যরা ঘুম বা রেষ্টে থাকলাম। কল্যানপুর একটি
নিভৃত গ্রাম। আমাদের ধারনা ছিল এই গ্রামে পাকি হানাদার ও রাজাকার আসবে না। বেলা ১০টার দিকে সেন্ট্রিরত
সহযোদ্ধা রতন কুমার দাস দৌড়ে এসে জানালেন আমদের কে ধরার জন্য বেলকুচি থানা থেকে কয়েকজন পাকি
হানাদার মিলে শিয়া ও রাজাকার আসছে। বওড়া গ্রামের মধ্য দিয়ে কল্যানপুরের দিকে আসছে। দুইজন পাকিস্তানি
দালাল গামছা দিয়ে মুখ বেধে নিয়ে ছদ্দবেশে হানাদার ও রাজাকারদের পথ চিনিয়ে নিয়ে আসছে। দূর থেকে অনুমান
হলো এই দলে ৫জন মিলেশিয়া ও ৮ জন রাজাকার আছে। আমাদের কমান্ডার যুদ্ধ করার সিদ্ধান্ত নিলেন। আমরা
কল্যানপুরে রাস্তার ধারে বাংকারের মত বাঁশ ঝাড়ের মধ্যে পজিশন নিলাম। বাঁশ ঝাড়ের সামনে দিয়ে চলা রাস্তা ধরে
পাকি হানাদারেরা আসছিল। আমাদের রেঞ্জের মধ্যে আসার সাথে সাথে আমাদের কমান্ডার রবীন্দ্রনাথ বাগ্চী কমান্ড ও
ফায়ার ওপেন করলেন। এক লাফে হানাদারেরা রাস্তার উত্তর পার্শ্বে পজিশন নিল। ওরাও আমাদের লক্ষ্য করে গুলি
চালালো। আমরাও একযোগে বৃষ্টির মতো গুলি ছাড়তে থাকলাম। গোলাগুলির শব্দ পেয়ে আশে পাশে অবস্থানকারী
মুক্তিযোদ্ধা গ্রুপ আমাদেরকে সহযোগীতা করার জন্য এগিয়ে এলেন। এক ঘণ্টার অধিক সময় সম্মুখ যুদ্ধ চললো।
তারপর পাকি হানাদারেরা লাশ নিয়ে পিছিয়ে গেল। এই যুদ্ধে ১জন মিলেশিয়া ও ১জন রাজাকার মারা গিয়েছিল। যুদ্ধে
জয়ী হয়ে আমরা বিজয় উল্লাস করলাম। সকল স্তরের মানুষের আত্মবিশ্বাস দৃঢ় হলো। এক বাড়িতে খাওয়া-দাওয়া
করলাম তারপর হেটে দৌলতপুর গ্রামের সহযোদ্ধা মোঃ শামসুল হকের বাড়িতে শেল্টার নিলাম। কয়েক দিন
দৌলতপুর, তেঞাশিয়া, খুকনী, বাজিয়ারপাড়া, দরগার চর ও অন্যান্য গ্রামে থাকতে থাকলাম।

লেখক: বীর মুক্তিযোদ্ধা।