আয়শা সিদ্দিকা আকাশী : খুকুমনি, নাম শুনলেই মনে হয় খুব আদুরে নাম, বড় আহ্লাদে ভরপুর। কিন্তু এই খুকুমনির ছোট্ট বেলা থেকেই অভাবের সংসারে বড় হওয়া। প্রতি পদে পদে অভাবের সাথে করতে হয়েছে যুদ্ধ। সেই যুদ্ধে আজ সে জয়ী। মুদি দোকান করে আজ সে সফল ব্যবসায়ি।

পরিশ্রমি খুকুমনি মাদারীপুর শহরের ২নং শকুনি এলাকার মৃত আ. আজিজ বেপারীর মেয়ে। বাবা ডিসি ব্রীজ এলাকায় ছোট একটি মুদির দোকান দিয়ে তাবিজ, মাছ ধরার বর্শিসহ নানা ছোট ছোট জিনিস বিক্রি করতো। বেচে থাকার জন্য দুমুঠো খাবার যোগার করতে হিমশিত খেতে হতো আজিজ বেপারীকে। মেয়েকে একটু সুখের রাখার জন্য বিয়ে দেয় একই গ্রামের বাকপ্রতিবন্ধী বাবুল মুন্সির সাথে। কিন্তু এক অভাবের সংসার থেকে বের হয়ে আরেক অভাবের মধ্যে গিয়ে পড়ে খুকুমনি। স্বামী বাকপ্রতিবন্ধী হওয়ায় তেমন কোন কাজ কর্ম পায়না। যখন যা পায় তাই করে। কিন্তু এতে করে সংসারের অভাব যায়না।

অভাবের সংসারে জন্ম নেয় দুই মেয়ে এক ছেলে। বড় মেয়ে ফারজানার বয়স বর্তমানে প্রায় ১৫ বছর। কয়েক ক্লাস পড়ার পর টাকার অভাবে তাকে পড়াশুনা ছাড়তে হয়। ছেলে মিরাজ দশম শ্রেণীতে পড়ে। ছোট মেয়ে রুপালী ৪র্থ শ্রেণীতে পড়ে।

এই অবস্থায় সন্তানদের ভবিষ্যতের কথা চিন্তা করে শহরের ডিসিব্রীজ এলাকায় ছোট একটি দোকান ভাড়ার করে ব্যবসা শুরু করে খুকুমনি। মাত্র চার থেকে পাচ হাজার টাকা দিয়ে চিপস, বিস্কুট, চকলেট, পান সুপারি নিয়ে ব্যবসা শুরু করে।

এ নিয়ে লোকজন নানা কথা বললেও খুকুমনি সেসব কথাই নিজ ব্যবসা থেকে সরে আসেনি। একটু একটু করে পরিশ্রম করতে থাকে নিজের দোকানটাকে প্রতিষ্ঠিত করতে।

প্রতিদিন শুরু হয় খুকুমনির জীবন যুদ্ধ। ভোরে উঠে সংসারের রান্নাবান্নাসহ যাবতীয় কাজ শেষ করে দোকান খুলে বসে সে। স্বামী ভ্যানগাড়ি চালানোর অবসরে দোকানে সময় দেয়। ছেলে-মেয়েও দোকানে বসে। তিন ছেলে মেয়ে, স্বামীসহ প্রতিদিন সংগ্রামে নামে খুকুমনি।

এভাবেই কয়েক বছর যেতেই খুকুমনি একটু একটু করে দোকানে মালপত্র বাড়িয়েছে। বর্তমানে প্রায় ৩০ হাজার টাকার মাল রয়েছে। লাভও হয় বেশ ভালোই। খুকুমনি স্বপ্ন দেখছেন বড় মেয়েকে বিয়ে দেয়া ও ছোট দুই ছেলে-মেয়েকে পড়াশুনা করে মানুষ করা। সেই লক্ষ্যে খুকুমনি দিনরাত পরিশ্রম করে যাচ্ছে। লাভ কম হলেও সে স্বপ্ন দেখছে একদিন এই দোকান বড় হবে। সেই দোকানে সব ধরণের মনোহারির জিসিনপত্র থাকবে।

এ ব্যাপারে খুকুমনির সাথে কথা বললে সে জানায়, ছোট বেলা থেকেই অভাবের মধ্যে বড় হয়েছি। স্বামী কথা বলতে পারেনা। তাই তেমন কোন কাজও পায়না। ছেলেমেয়েদের কিভাবে মানুষ করবো, এই চিন্তা আমাকে সারাক্ষণ ভাবাতে থাকে। ভাবি আমার মতো আমার সন্তানরা যেন কষ্টে না থাকে। তাই মাত্র ৪ হাজার টাকা নিয়ে একটি মুদি দোকান শুরু করি। অনেক পরিশ্রম করে আজ দোকানে প্রায় ৩০ হাজার টাকার মাল করেছি। সংসারেও অনেকটাই অভাব দুর হয়েছে। লোকলজ্জার ভয়ে যদি ঘরে বসে থাকতাম। তাহলে না খেয়ে অনেক কষ্টে দিন কাটাতে হতো। মানুষের হাজার কথাকে উপেক্ষা করে আজ আমি সফল ব্যবসায়ি। দিনরাত পরিশ্রম করে আমি একজন সফল নারী ব্যবসায়ি বলে নিজেকে গর্ববোধ করি। সেই সাথে গ্রামের সহজ-সরল নারীদের বলবো ঘরে বসে না থেকে কাজ করো। টাকা আয় করো। এতে নিজেদের আত্মসম্মান বাড়বে। সেই সাথে সংসারের অভাব দুর হবে।

(এএসএ/এটিআর/সেপ্টেম্বর ২১, ২০১৪)