মিঠুন গোস্বামী, রাজবাড়ী সদর : রাজবাড়ীতে দিন দিন গমচাষে আগ্রহ হারাচ্ছে চাষিরা। যদিও এটা লাভজনক ফসল। তবে কৃষকেরা বলছে উৎপাদন খরচের তুলনায় মুনাফা না পাওয়া এর অন্যতম কারণ। 

রাজবাড়ী জেলা কৃষি অফিস সূত্র জানা যায়, গত বছর জেলায় ১১ হাজার ৪৫০ হেক্টর জমিতে গম চাষ হলেও সেটা এবার নেমে এসেছে ৮ হাজার ৯৩০ হেক্টরে।

এ বছর জেলার সদর উপজেলায় ২ হাজার ৮৫০ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়েছে, যা কিনা গত বছরের চেয়ে ৪ শত হেক্টর জমিতে কম চাষ হয়েছে। এছাড়া বালিয়াকান্দিতে এ বছর ২ হাজার ১৫০ হেক্টর জমিতে চাষ হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে ৪শত হেক্টর জমিতে কম। পাংশা উপজেলায় এ বছর ১৫০০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে ১ হাজার ১৮০ হেক্টর কম আবাদ হয়েছে। কালুখালি উপজেলাতে এ বছর ১২৫০ হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে ৫৭০ হেক্টর জমিতে কম। তবে অন্য চিত্র গোয়ালন্দ উপজেলার, সেখানে এ বছর ১ হাজার ১৮০ হেক্টর জমিতে গমের আবাদ হয়েছে যা গত বছরের চেয়ে ২৩০ হেক্টর জমিতে বেশি আবাদ হয়েছে।

গত বছরের তুলনায় এবার গম চাষে লক্ষ্যমাত্রা অর্জন এর স্থলে বর্জন হয়েছে। জানা গেছে, রাজবাড়ী জেলায় দিন দিন গমের চাষ ক্রমাগতভাবে কমে যাচ্ছে।

মাটি ও আবহাওয়া উপযোগী থাকলেও উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি, এমনকি ফলন কম হওয়ার কারণে গম চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেছেন কৃষকরা। নানাবিধ কারনে এ জেলার গম চাষ হুমকির মুখে পড়েছে। বিগত দিনে জেলার গম চাষে কৃষকদের ব্যাপক আগ্রহ থাকলেও বর্তমান সময়ে গম চাষে কৃষকরা অনাগ্রহী। এ জেলার কৃষকরা মনে করেন গম চাষের চেয়ে অন্য ফসল চাষ করে তুলনামূলক ভাবে অনেক লাভবান হওয়া যায়। সে জন্য গমের পরিবর্তে অন্য ফসল চাষ করছেন।

মকছেদ সরদার নামে একজন কৃষক বলেন, আমাকে বালিয়াকান্দি উপজেলা কৃষি অফিস থেকে গমের বীজ ফ্রী দিয়েছে আমি ৩৩ শতক জমিতে কৃষি অফিসের পরামর্শ অনুযায়ী গম চাষ করেছি বর্তমানে আমার ফসলের অবস্থা খুব ভালো। আবহাওয়া স্বাভাবিক থাকলে ভালো ফলন পাবো।

কালুখালি উপজেলার মদাপুরের কৃষক রুস্তম আলী জানান, সরকারি সহযোগিতা ১৫ শতক জমিতে গম চাষ করেছেন। জমিতে এসে ফসল দেখলে মনটা জুড়িয়ে যায়। আগামী বছরে আমি সরকারি সহযোগিতা পেলে আরো বেশী জমিতে গমের চাষ করবো।

এছাড়া অন্যান্য উপজেলার একাধিক কৃষক বলেন, সরকারী ভাবে আমার সহযোগিতা পেলে ধান চাষের পাশাপাশি গম চাষ করতে পারবো। ধান চাষের উপর কৃষকদের আগ্রহ ও ফলন বৃদ্ধি করতে যেমন বিভিন্ন প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে একই ভাবে কৃষকদের গম চাষের উপর প্রশিক্ষণ প্রদান করলে গম চাষের প্রতি আগ্রহী হবেন কৃষকরা।

সাতক্ষীরা জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপ-পরিচালক এস, এম, সহীদ নূর আকবর বলেন, গম চাষের উপযোগী জমিতে উচ্চ মূল্যের সবজি চাষ হওয়ায় গম চাষ কমে যাওয়ার একটি কারণ।

তিনি আরো বলেন, কয়েকটি উপজেলায় গম চাষ কমে গেছে, প্রদর্শনী প্লাট করে কিছু কিছু চাষিদের সার ও গমের বীজ বিনামূল্যে প্রদান করা হয়েছে। তাছাড়া এ বছরে গম চাষের উপর কৃষকের প্রশিক্ষণ প্রদান করেছি। সরকারি সকল সুযোগ-সুবিধা, কৃষকদের মাঝে প্রদান করা হয়েছে।

(এমজি/এসপি/ফেব্রুয়ারি ০৯, ২০২২)