শেরপুর প্রতিনিধি : আমাগরে এহন বাঁইচা থাহাই দায়। শরীলে আর কুলায় না। বইন্য আত্তির (বন্য হাতি) আত (আক্রমন) থাইক্ক্যা ঘরবাড়ী আর ক্ষেতের ফসল বাঁচানোর চিন্তায় আইত জাইগ্যা (রাত জেগে) পাহাড়া দিতে দিতে অসুস্থ অইয়া পড়ছি। আমগরে এলাকার হক্কল মাইনষের অবস্থাই অহন কাহিল।

একরাশ দুঃখ আর হতাশার সাথে কথাগুলো বললেন নাকুগাঁও গ্রামের কৃষক রুস্তম আলী (৫২)। কথাগুলো বলার সময় চোখগুলো যেন কোটর থেকে ঠিকরে বের হচ্ছিল। কপালে বলিরেখার ভাঁজ। দেখলেই বোঝা যায়, অজানা আশংকা তার চোখে মুখে। এই কৃষক জানান, নয়াবিল ইউনিয়নের বেশ কয়েকটি গ্রামের মানুষ বন্যহাতির আক্রমণ থেকে ক্ষেতের ফসল রক্ষার চিন্তা ও রাত জেগে পাহাড়া দিতে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়েছে। হাতির আক্রমণ থেকে গ্রামবাসী ও ক্ষেতের ফসল রক্ষার জন্য প্রশাসনের সহযোগীতা ও ক্ষতিগ্রস্ত কৃষকদের ক্ষতিপূরণ দাবী করেন তিনি।

শেরপুরের নালিতাবাড়ী উপজেলার সীমান্তবর্র্তী গ্রামগুলোতে গত কয়েকদিন ধরে বন্য হাতির বন্যহাতির উৎপাত শুরু হয়েছে। কৃষকদের বোরো ধান ক্ষেতে বন্য হাতির দল তান্ডব চালিয়ে ফসলের ব্যাপক ক্ষতি করে চলেছে। ২৫ এপ্রিল শুক্রবার ভোরে এবং ২৪ এপ্রিল বৃহস্পতিবার রাতে পাহাড় থেকে নেমে লোকালয়ে নেমে আসে বন্যহাতির দল। এসব বন্যহাতি নালিতাবাড়ীর খলচান্দা, আন্ধারুপাড়া, দাওধারা-কাটাবাড়ি, নাকুগাঁও এলাকায় বেশ কয়েক একর জমির পাকা বোরো ধান খেয়ে ও পা দিয়ে মাড়িয়ে সাবাড় করে দিয়েছে। এসব এলাকার কৃষকরা এখন বন্যহাতি আতংকে দিন কাটাচ্ছেন।

স্থানীয় এলাকাবাসীরা জানায়, বন্যহাতির আক্রমণ থেকে রক্ষা পেতে বেশ কিছুদিন ধরে সীমান্ত এলাকায় বসবাসকারী গারো, কোচ, বর্মন অধিবাসী ও কৃষকরা রাতভর বাড়িঘর ও আবাদি বোরো ধানের ক্ষেত পাহাড়া দিয়ে আসছেন। কিন্তু শুক্রবার ভোর ৪ টার দিকে এবং বৃহস্পতিবার গভীর রাতে বন্যহাতির দল কৃষকদের আধাপাকা বোরো ধানের ক্ষেতে আক্রমণ চালায়। এসময় নালিতাবাড়ীর নয়াবিল ইউনয়নের নাকুগাঁও গ্রামের রুস্তম আলী, শরাফত আলী, নিরঞ্জন দিও, হারুন মিয়া সহ বেশ কয়েকজন কৃষকরে ১০/১২ একর জমির আধা পাকা বোরো ধান খেয়ে সাবাড় করে দেয় বন্যহাতির দল।

খলচান্দা গ্রামের বাসিন্দা মলিন্দ্র কোচ (৩৫) জানান, ওই গ্রামে বৃহস্পতিবার গভীর রাতে প্রায় ৫০/৬০টি বন্যহাতি হঠাৎ তান্ডব চালিয়ে তার নিজের ৪ কাঠাসহ শ্রী সতীষ কোচের ৬ কাঠা, হরিচন কোচের ৪ কাঠা, আন্ধারুপাড়া গ্রামের ইন্তজ আলীর ১৫ কাঠা, মহর আলীর ১১ কাঠা ও ফুরকান আলীর ৫ কাঠা জমির আধা পাকা খেয়ে সাবার করেছে। এছাড়া শুক্রবার ভোরে নাকুগাঁও গ্রামের নুরু মিয়া, বুদু মিয়া, গারো কৃষক মিস্টার রাংসা ও ফিলোমিনা মারাকের ক্ষেতের ধান খেয়ে ও পায়ে মাড়িয়ে সাবাড় করেছে।

নয়াবিল ইউনিয়নের চেয়ারম্যান নূর রহমান জানান, এখনও পাহাড়ের জঙ্গলে ৫০/৬০ টি বন্যহাতি অবস্থান করছে। হাতিগুলো রাতের বেলায় লোকালয়ে হানা দেয়, আর দিনের বেলায় জঙ্গলে গিয়ে অবস্থান নেয়। অনেক চেষ্টা করেও হাতিগুলোকে এই এলাকা থেকে সানো যাচ্ছেনা। নালিতাবাড়ী ট্রাইবাল ওয়েলফেয়ার এসোসিয়েশন-টিডাব্লিউএ সভাপতি লুইস নেংমিনজা বলেন, গাড়ো পাহাড়ে বন্যহাতি তান্ডব চালিয়ে জান মালের ক্ষতি সাধন করলেও মশাল জ্বালিয়ে হাতি তাড়াতে সরকারিভাবে কেরোসিন তেল বরাদ্দ পাইনি।

শেরপুর বন বিভাগের নালিতাবাড়ী উপজেলার বাতকুচি বিট কর্মকর্তা আমিনুল ইসলাম জানান, বন্যহাতি আতংকে তিনি অফিস ছেড়ে অন্যত্র রাত্রি যাপন করতে বাধ্য হচ্ছেন। বন্যহাতির এ দলটি বেশ কিছুদিন ধরেই সীমান্ত এলাকার গভীর জঙ্গলে অবস্থান করে রাতের আধারে লোকালয়ে নেমে এসে তান্ডব চালাচ্ছে। হাতির দল ক্ষেতের আধা পাকা ধান খেয়ে, পায়ে দলিয়ে নষ্ট করছে। এখন এ অঞ্চলে বন্য হাতি ও জননিরাপত্তা ব্যবস্থাপনা জরুরী হয়ে পড়েছে বলে তিনি অভিমত প্রকাশ করেন।


(ওএস/এটি/এপ্রিল ২৫, ২০১৪)