তারেক হাবিব, হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার সেকান্দরপুরে শ্মশান ও আখড়ার জায়গায় বন্দোবস্ত বাতিলের দাবিতে আদালতে মামলা দায়ের করেছেন গ্রামবাসী। ওই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা রবীন্দ্র দাশসহ শতাধিক ব্যক্তি বাদী হয়ে হবিগঞ্জ সিনিয়র সহকারী জজ আদালতে মামলাটি দায়ের করেন। মামলায় বিবাদী করা হয়, হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক, অতিরিক্ত জেলা প্রশাসক, উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা এবং সহকারী কমিশনার (ভূমি) বানিয়াচংসহ আরও অনেককে। আদালত দীর্ঘ শুনানী শেষে মামলাটি আমলে নিয়ে কেন শ্মশান ও আখড়ার জায়গা কেন বন্দোবস্ত দেয়া হলো এই মর্মে কারণ জানতে চেয়েছেন।

মামলা সুত্রে জানা যায়, হবিগঞ্জ জেলা প্রশাসক কার্যালয়ের থেকে তথ্য গোপন করে ভুমিহীন পরিচয়ে ৭৩ শতাংশ খাস জমি বন্দোবস্ত নেন স্থানীয় আকল দাশ ও তার সহযোগীরা। পরপর পরিচয় গোপন করে একই পরিবারের ৫জনের নামে বন্দোবস্থ নেয়ার তথ্য পাওয়া যায়।

মামলা সুত্রে জানা যায়, স্থানীয় সেকান্দরপুর গ্রামে প্রায় ২ হাজার হিন্দু সম্প্রদায় লোকের বসবাস। কৃষি-হাল, চাষ ই তাদের প্রধান পেশা। তবে বিশাল পরিমাণের জনসংখ্যা থাকলেও একটি মাত্র শ্মশান, আখড়া এবং কালী মন্দির। সম্প্রতি স্থানীয় আকল দাশ, প্রজেন নামে কয়েকজন ব্যক্তি তথ্য গোপন করে গ্রামবাসীর একমাত্র উপাসনালয়ের জায়গাটি হাতিয়ে নেয়ার চেষ্টা করছে বলে জানা যায়।

তথ্যানুসন্ধানে জানা যায়, ভূমিহীন পরিচয়ে ২০০৩ সালে পরিত্যাক্ত ৭৩ শতাংশ জায়গা বন্দোবস্থ গ্রহন করেন ওই গ্রামের আকল দাশ নামে এক ব্যক্তি। তবে একই পরিবারের ভিন্ন লোকের নাম ব্যবহার করে পর পর ৩টি জায়গা বন্দোবস্থ গ্রহন করায় বিষয়টি নজরে আসে স্থানীয় গ্রামবাসীদের।

অভিযোগ আছে, আকল দাশের আপন ভাতিজা প্রত্যুস দাশ এর আগে গত ৩ বছর আগে ৫০ শতক জায়গা বন্দোবস্থ নিয়ে স্থানীয় হলিমপুর গ্রামের জিন্দাপীর মিয়ার পুত্র মানিক মিয়া নামে এক ব্যক্তির কাছে বিক্রি করে দেন। যদিও বন্দোবস্থ শর্তে জায়গা হস্তান্তর বা মালিকানা পরিবর্তনের কোন নিয়ম নেই। আকল দাশের অন্য আরেক আপন ভাই রাসমোহন দাশের নামে ৪২ শতক জায়গা বন্দোবস্থ নিয়ে সেখানে মাছ চাষ করেন তারা। একই জায়গার পাশে আবারও তথ্য গোপন করে ৭৫ শতাংশ জায়গা বন্দোবস্থ গ্রহন করেন আকশ দাশ।

সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, উপজেলার সেকান্দরপুর মৌজার ১/২ খতিয়ানের ৭৬০, ৭৫১ আরএস ১৪৬০, ১৪৬৯ দাগের প্রায় ৭৫ শতাংশ জায়গা দীর্ঘদিন যাবৎ পরিত্যাক্ত অবস্থায় আছে। জাগায়টির পাশেই গ্রামের একমাত্র শ্মশান, কালীমন্দির এবং দীর্ঘদিনের ব্যবহৃত আখড়া। আকল দাশ ভূমিহীন হিসেবে স্থায়ী বন্দোবস্থ নিলেও সেখানে মাছ চাষের চেষ্টা করে আসছেন তিনি। তাছাড়া তিনি ভূমিহীন নন, আত্মীয় স্বজন, স্ত্রী-পুত্র ধন-সম্পদ নিয়ে বেশ সুখেই আছেন তিনি। ওই গ্রামের বীর মুক্তিযোদ্ধা বুলু দাশ জানান, আকল দাশের পরিবার প্রতারণার মাধ্যমে শ্মশানের জায়গাটি বন্দোবস্থ নিয়েছে। দীর্ঘদিন যাবৎ গ্রামবাসী ধর্মীয় কাজে জায়গাটি ব্যবহার করে আসছে।

বিনয় তালুকদার নামে আরেক ব্যক্তি জানান, আকল দাশ প্রতারণার মাধ্যমে তথ্য গোপন করে সরকারী জায়গা বন্দোবস্থ নেন। পরে তিনি ওই জায়গা আবার বিক্রি করে দেন, যা নিয়ম বহিভূর্ত।

কৃপেন্ড দাশ জানান, আকল দাশ সরকার থেকে বন্দোবস্থ নিয়ে জায়গা বিক্রি করে দেন। একই পরিবারের ৩জন লোক পরপর ৩টি জায়গা বন্দোবস্থ নিয়েছেন এবং এগুলো বিক্রি করে দিয়েছেন।

এদিকে, জায়গাটি উদ্ধারে গ্রামবাসী ঐক্যবন্ধ হয়ে শীঘ্রই বৃহৎ আন্দোলন গড়ে তুলবে বলে জানা গেছে।

বানিয়াচং উপজেলার সহকারী কমিশনার ভুমি জানান, এ রকম কোন নোটিশ এখনও তার কাছে পৌছায়নি। পৌছলে ব্যবস্থা নেয়া হবে। এর আগে, বন্দোবস্ত বাতিলের দাবিতে গণস্বাক্ষর সংগ্রহ করেছেন স্থানীয়রা। এর আগে বন্দোবস্ত বাতিল ও তার প্রতিকার চেয়ে স্থানীয় অক্কুর দাশ বাদী হয়ে সিলেট বিভাগীয় কমিশনার, ভূমি মন্ত্রণালয় এবং জেলা প্রশাসক বরাবরে লিখিত অভিযোগও দায়ের করেন।

(টিএইচ/এসপি/ফেব্রুয়ারি ১৬, ২০২২)