তারেক হাবিব, হবিগঞ্জ : হবিগঞ্জ সদর উপজেলার গোপায়া ইউনিয়ন পরিষেদে জন্ম নিবন্ধন সনদের বাণিজ্যে মেতেছেন ইউপি সচিব ও চেয়ারম্যান। শুধু জন্ম নিবন্ধন বাণিজ্যই নয় অভিযোগ আছে টাকা পেলেই দেয়া হয় মনগড়া তথ্য সম্বলিত জন্ম সনদ। ভূয়া সনদ বাণিজ্যের পাশাপাশি পরিষদে আসা সাধারণ মানুষের কাছ থেকে গ্রহন করা হয় সরকারি ফিসের পরিবর্তে ১৫০-২০০ টাকারও বেশি। সাম্প্রতিকালে বিদ্যালয়ে ছাত্রছাত্রীদের ইউনিক আইডি সংক্রান্ত কাজে জন্ম নিবন্ধন সনদ বাধ্যতামূলক। এই সুযোগকে কাজে লাগিয়ে অভিভাবকদের কাছ থেকে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছেন ইউপি সচিব স্বপ্না রাণী রায় ও তার সহযোগীরা।

এছাড়া জন্ম নিবন্ধন সনদ নিতে আসা লোকজনদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার ও হয়রানি করার অভিযোগও রয়েছে এই ইউপি সচিবের বিরুদ্ধে। স্থানীয় সরকার বিভাগ সূত্রে জানা যায়, জন্মের ৪৫ দিন থেকে ৫ বছর পর্যন্ত কোনো শিশুর জন্ম নিবন্ধন সনদের ফি ২৫ টাকা এবং বয়স ৫ বছরের বেশি হলে ৫০ টাকা নিবন্ধন ফি নেওয়ার সরকারি নিয়ম রয়েছে। কিন্তু ইউপি সচিব স্বপ্না রাণী রায় সরকারি নিয়মের তোয়াক্কা না করে সনদ ফি বাবদ জনপ্রতি ৩০০ থেকে ৫০০ টাকা নিচ্ছেন। দৈনিক বাংলা৭১ এর হাতে আসা কয়েকটি জন্ম নিবন্ধনের তথ্য পর্যালোচনা দেয়া যায় কোনটা বহিতে নিবন্ধন আছে আবার কোনটার অনলাইন যাচাইয়ের তথ্য আসে ভিন্ন আরেকটার।

২০১২ সালের ৭নং বহি অনুযায়ী ১০০৬১২নং নিবন্ধনের তথ্যানুসারে ওই ইউনিয়ন পরিষদ থেকে জন্ম নিবন্ধন সনদ গ্রহন করেন জামাল উদ্দিন নামে এক ব্যক্তি। জীবিকার তাগিতে পাসপোর্ট তৈরি করে পাড়ি জমান লিবিয়ায়। জন্ম নিবন্ধন ও জাতীয় পরিচয়পত্র এবং পাসপোর্টের তথ্যানুসারে তার জন্ম তারিখ ১০ জানুয়ারি ১৯৯২। প্রবাসে দীর্ঘদিন থানার পর সাম্প্রতিককালে অবৈধ পথে প্রবেশ করেন ইউরোপের দেশ ইতালীতে তবে ইতালীতে স্থায়ী সুযোগ সুবিধা নিতে প্রয়োজন হয় অপ্রাপ্ত বয়সের সনদ। এক দালালের মাধ্যমে কৌশলে পূর্বের জন্ম সনদের তথ্য গোপন করে মোটা অঙ্কের টাকার বিনিময়ে গত ৩১ আগস্ট ২০২১ তারিখে ১৩ নং রেজিস্টারের মাধ্যমে ২০০৪৩৬১৪৪২২১১৬১১৩ ক্রমিক নাম্বারে প্রায় ১২ বছরের ব্যবধানে একই ব্যক্তিকে অন্য আরেকটি জন্ম সনদ প্রদান করেন সচিব স্বপ্না রাণী রায়। সেখানে তার জন্ম তারিখ উল্লেখ করেন ২৯ মে ২০০৪।

অনুসন্ধানে আরও জানা যায়, টাকার বিনিময়ে স্কুল পড়ুয়া ছাত্রীদের বয়স বাড়িয়ে তথ্য গোপন করে জন্ম সনদ তৈরি করে বাল্য বিবাহে সরাসরি সহযোগিতা করে ওই চক্রটি।

এ ব্যাপারে গোপায়া ইউনিয়নের সদ্য বিদায়ী চেয়ারম্যান মো. আক্তার হোসেনর মোবাইল ফোনে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, আপনার সাথে ফোনে কথা বলব না, সরাসরি কাল অফিসে আসেন তার পর দেখি।

উপ-পরিচালক (স্থানীয় সরকার) মোহাম্মদ নাজমুল হাসান জানান, বিষয়টি খতিয়ে দেখতে হবে। কোন রেফারেন্সের মাধ্যমে বার বার সংশোধন করা হয়েছে। তবে কোন অনিয়ম করা হয়ে থাকলে দ্রুত তার ব্যবস্থা নেয়া হবে।

(টিএইচ/এএস/মার্চ ০২, ২০২২)