শরীয়তপুর প্রতিনিধি : চট্টগাম থেকে মংলা, সিলেট থেকে বেনাপোল ভায়া চাঁদপুর-শরীয়তপুর-মাদারীপুর। এ মহাসড়কের শরীয়তপুর অংশে সদর উপজেলার কাশিপুর থেকে টুমচর পর্যন্ত সোয়া দুই কিমি রাস্তা চলাচলের সম্পূর্ণ অযোগ্য হয়ে পড়েছে। উন্নয়নের নামে ঠিকাদারের গাফিলতির কারণে ক্ষতিগ্রস্ত এ সড়কটি আসন্ন দুর্গা পূজা ও ঈদুল আজহার আগে চলাচলের উপযোগী করে তোলার দাবি জানিয়েছে এ এলাকার মানুষ।

রাজধানীর যানজট নিরসনের জন্য চট্টগ্রাম বন্দর থেকে মংলা বন্দর, সিলেট থেকে বেনাপোল এবং চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগ থেকে বরিশাল বিভাগের সড়ক যোগাযোগে নতুন নেটওয়ার্ক সৃষ্টি করা হয় বিগত ২০০০ সালে।

চাঁদপুর-শরীয়তপুর ফেরী সার্ভিসের মাধ্যমে চাঁদপুর-শরীয়তপুর-মাদারীপুর জেলার উপর দিয়ে চালু হয় এ নতুন মহাসড়ক। ফলে ২৫০ থেকে ৩২০ কিমি রাস্তা কমে সড়ক পথে। ২০০১ সালের পর এ মহাসড়কের শরীয়তপুর অংশে কোন উল্লেখযোগ্য উন্নয়ন হয়নি। তবে বর্তমান ক্ষমতাসীন দল কয়েক বছর যাবৎ সড়ক উন্নয়নের লক্ষে কিছু কাজ হাতে নিয়েছে।

২০১৪ সালের ফেব্রয়ারী মাসে শরীয়তপুর সড়ক বিভাগ মহাসড়কের শরীয়তপুর অংশে সদর উপজেলার কাশিপুর থেকে টুমচর পর্যন্ত সোয়া দুই কিলোমিটার সড়ক প্রশস্তকরণের টেন্ডার ঘোষণা করে। রাস্তাটি ২ লেনে উন্নীত করার লক্ষে প্রায় ৭ কোটি টাকা ব্যয়ে ঢাকার জনৈক শহীদ ব্রাদার্স নামে একটি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠান কাজ করার অনুমতি পায়। শহীদ ব্রাদার্স-এর ঠিকায় পাওয়া কাজটি ক্রয় করে নেয় শরীয়তপুর জেলা যুবলীগের সভাপতি জাহাঙ্গীর মৃধা, সাধারণ সম্পাদক নুহুন মাতবর ও তাদের অপর তিন সহযোগী। গত ২৮ এপ্রিল সড়ক বিভাগ থেকে কার্যাদেশ প্রাপ্তির পর কাজ শুরু করে সাব-ঠিকাদাররা।

শরীয়তপুর সড়ক বিভাগের প্রকৌশলী ও কর্মকর্তারা দাবী করেছেন, সড়কটি অতি পুরনো এবং কাজ শুরুর পর থেকেই বর্ষাকাল এসে যাওয়ায় কাজের কিছুটা ক্ষতি হচ্ছে। তাছাড়া ২৫-৩০ মেট্রিকটন ধারণ ক্ষমতা সম্পন্ন ট্রাকগুলোর এক বন্দর থেকে অপর বন্দরে যাতায়াতের কারণে নির্মাণাধীন সড়কটি আরো বেশী সমস্যায় পড়েছে।

অপরদিকে স্থানীয়রা অভিযোগ করেছেন, শুরু থেকেই অনিয়মের আশ্রয় গ্রহণ করেছে ক্ষমতাসীন দলের প্রভাবশালী এই ঠিকাদার চক্র। কিন্তু শরীয়তপুর সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. জাকির হোসেন চ্যালেঞ্জ ছুড়ে দিয়ে বলেছেন, কাজে কোন অনিয়ম নেই এবং ঠিকাদার কাজে কোন গাফিলতিও করছে না। বিভাগ সার্বক্ষণিক কাজের তদারকি করছে।

গত রমজানের ঈদের পর থেকে সড়কটি অতিমাত্রায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। ফলে দূরপাল্লার পণ্য ও যাত্রীবাহী যান চলাচলে মারাত্মক ভোগান্তির সৃষ্টি হয়েছে। ভুল করে কোন যানবাহন এই সড়কে ঢুকে পড়লে তাদের গাড়িগুলো ফেঁসে ও দেবে যাচ্ছে । সড়কের এ বেহাল দশার কারণে প্রতিদিনই ঘটছে দুর্ঘটনা। গাড়ি চলতে না পারায় স্থানীয় ছোট যানবাহন চালকদেরও আয় কমে গেছে ।

সাতক্ষীরার ভোমরা স্থলবন্দরের ট্রাকচালক রফিকুল ইসলাম বলেন, আমি ভোমরা থেকে চালভর্তি একটি ট্রাক নিয়ে শরীয়তপুরে যাওয়ার পথে এখানে এসে গত রবিবার থেকে আটকে রয়েছি। সময়মত মাল খালাস করতে না পারলে অনেক ক্ষতি হবে।

স্থানীয় আরো এক চালক আব্দুস সালাম জানান, এ সড়ক দিয়ে প্রতিদিন ৩ থেকে ৪শত পণ্যবাহী ট্রাক চলাচল করে। রাস্তা খারাপ হয়ে যাওয়ায় ২ সপ্তাহ যাবৎ তেমন গাড়ি আসছে না। সামনে কোরবানির ঈদ। এ পথে কোরবানির পশু বহন করে অনেক গাড়ি চলাচল করে। রাস্তা ভাল না হলে এদিক দিয়েও সমস্যা সৃষ্টি হবে।

স্থানীয় বাসিন্দা চিতলিয়া ইউপির সাবেক মেম্বার মো. নান্নু মাল বলেন, ঠিকাদারের গাফিলতির কারণেই রাস্তার এই করুন চিত্র। আমরা চাই ঈদ ও পূজার আগে রাস্তাটির মেরামত সম্পন্ন করা হোক।

(কেএনআই/এনডি/সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৪)