আড়াইহাজার (নারায়ণগঞ্জ) প্রতিনিধি : নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজারের বিশনন্দী ফেরীঘাটে জোরপূর্বক অতিরিক্ত টোল আদায়ে ব্যাপক অনিয়মের অভিযোগ উঠেছে ঠিকাদার মাহাবুব ও সামছুল হকের বিরুদ্ধে। মাহাবুব উপজেলার বিশনন্দী ইউনিয়নের টেটিয়া গ্রামের মৃত সুন্দর আলীর ছেলে।

জানা যায়, বিশনন্দী টু বাঞ্চারামপুর ফেরীঘাটের ইজারা পান মের্সাস ফাহাদ এন্টারপ্রাইজ নামের একটি প্রতিষ্ঠান। ওই প্রতিষ্ঠানের মালিক সামসুল হক এবং তার ব্যবসায়িক পার্টনার মাহাবুব, ২০২১-২০২৩ সাল প্রর্যন্ত তিন বছরের মেয়াদে ফেরীঘাটের ইজারা নেন। প্রতিদিন ওই ফেরী দিয়ে শত শত গাড়ী পারাপার করা হয়। গাড়ি থেকে টোল আদায়ে সরকারী নির্ধারণ করা চার্ট অনুযায়ী ফি তোলার কথা থাকলেও তা মানছেনা ইজারাদার প্রতিষ্ঠান। তারা সরকারি চার্ট উপেক্ষা করে নিজেদের মনগড়া চার্ট বানিয়ে গাড়ির ড্রাইভারদের কাছ থেকে জোরপুর্বক অতিরিক্ত টোল আদায় করছে। অতিরিক্ত টোল আদায়ের প্রতিবাদ করলে ইজারাদার মাহাবুবের শ্যালক জাহাঙ্গির এবং ভাতিজা সেলিম গাড়ির ড্রাইভারদের মারধর করে বলে একাধিক সূত্রে জানা যায়।

সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, ফেরীর মধ্যে টোল আদায়ের সরকারী চার্ট টানানোর কথা থাকলেও সেখানে কোন চার্ট টানানো নেই। টোল আদায়ের জন্য সড়ক ও জনপদ বিভাগের নির্ধারণ করা নামে মাত্র লোক থাকলেও তাদের জায়গায় কাজ করেন জাহাঙ্গির,হালিম এবং সেলিম নামের তিন ব্যক্তি। ফেরী দিয়ে পারাপারের সময় একটি ৫ টন ওজনের খালি ট্রাকের( ঢাকা মেট্রো-নং ১৪-৯৭১৯) চালক লিটনের সাথে কথা বলে জানা যায়, তার কাছ থেকে কোন রশিদ ছাড়াই টোল বাবদ মাহাবুবের লোকজন ৪০০টাকার পরিবর্তে ৮০০ টাকা নিয়েছে।

এছাড়া ঢাকা মেট্রো-ট- ১৩-৬০৪১ নং ট্রাকের চালক অহিদ জানান,তার ট্রাক থেকে ৪০০ টাকার পরিবর্তে ৬০০ টাকা নিয়েছে। সরকারী চার্ট অনুযায়ী কন্টেইনার/ভারীযন্ত্রপাতি পরিবহনে সক্ষম যানবাহন থেকে ৬২৫ টাকার পরিবর্তে তারা আদায় করছেন ১০০০/১৫০০ টাকা, মিনিবাস থেকে ২০০ টাকার পরিবর্তে ৫০০টাকা,৩টন পে লোড ধারন সক্ষম যানবাহন থেকে ১০০ টাকার পরিবর্তে ২০০/৩০০ টাকা, মাইক্রোবাস থেকে ৮০ টাকার পরিবর্তে নিচ্ছেন ১০০/১৫০টাকা, ফোর হুইল যানবাহন থেকে ৮০ টাকার পরিবর্তে ১৫০ টাকা আদায় করছে। সিডান কার থেকে ৫০ টাকার পরিবর্তে ১০০ টাকা, ৩/৪ চাকার মোটরাইজড থেকে ২৫ টাকার পরিবর্তে ৫০ টাকা,মটরসাইকেল থেকে ১৫ টাকার স্থলে নিচ্ছেন ২০/৩০ টাকা। রিক্সা, বাইসাইকেল, ঠেলাগাড়ি থেকে ৫ টাকার পরিবর্তে ১৫/২০ টাকা আদায় করছে।

বিশ্বস্ত সূত্রে জানা যায়,এছাড়াও মাহাবুব ফেরীঘাটের একটি পল্টুন ৩ বছর যাবত অন্যত্র ভাড়া দিয়ে হাতিয়ে নিচ্ছেন লক্ষ লক্ষ টাকা। এবং সে ফেরীর স্টাফদের থাকার জন্য সড়ক ও জনপদ বিভাগের জায়গায় বিল্ডিং উঠিয়ে নিজস্ব অফিস হিসেবে ব্যবহার করছে, আর ফেরীর স্টাফরা ঘাটের উত্তর পাশে লতিফের বাড়িতে ভাড়া থাকে। অপর দিকে সে সওজ এর জায়গায় অবৈধ ৫/৭ টি দোকান উঠিয়ে ভাড়া তুলে পকেট ভারী করছে। এভাবে মাহাবুব অবৈধ ভাবে টোল আদায় করে ২ বছরে কোটি কোটি টাকার মালিক বনে গেছে এবং একসময়ে ফেরিতে (ইজারা নেওয়ার পূর্বে) মাত্র ৬ হাজার টাকা বেতনের মাহাবুব এখন নিজস্ব ২টি হাইচ গাড়ী ও নারায়নগঞ্জ রূপায়ণ এবং ঢাকায় একাধিক ফ্লাটসহ পূর্বাচলে প্লটের মালিক।

অভিযোগের ব্যপারে ইজারাদার সামছুল হকের সাথে আলাপাকালে তিনি জানান, ফেরী ঘাটের ব্যপারটি মাহাবুবেব কাছে দায়িত্ব দেওয়া।

মাহাবুব বলেন, জ্বালানি তেলের দাম বেড়ে যাওয়ায় আমরা টোলের টাকা বাড়িয়ে নিচ্ছি।

এ ব্যপারে সড়ক ও জনপদ বিভাগের সাব-ডিভিশনাল ইঞ্জিনিয়ার সাখাওয়াত হোসেন জানান, অতিরিক্ত টোল আদায় এবং সওজ এর জায়গায় কেউ যদি কোন অবৈধ স্থাপনা করে থাকে তাহলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। বিষয়টি আগে আমার জানা ছিলনা।

(বিএস/এএস/মার্চ ২২, ২০২২)