কলাপাড়া প্রতিনিধি : পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় প্রেমের ফাঁদে ফেলে রোগীর স্বজন সেজে হাসপাতালে নিয়ে এক কিশোরীকে (১৩) ধর্ষণের অভিযোগ উঠেছে। পুলিশ এ ঘটনায় মূল অভিযুক্ত এক সন্তানের জননী মাসুমসহ সহযোগী গোপাল মিস্ত্রী ও শাকিলকে গ্রেপ্তার করেছে। 

পুলিশ জানায়, হাসপাতালে ধর্ষণের পর বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে গত ১১ দিন ধরে ওই কিশোরীকে বিভিন্ন স্থানে একাধিকবার ধর্ষণ করে। সোমবার রাতে পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে কিশোরীকে উদ্ধারের পর তার উপর চলা এ নির্যাতনের কথা পুলিশ ও তার অভিভাবককে জানালে পুলিশ অভিযুক্ত ওই তিনজনকে গ্রেপ্তার করে।

এ ঘটনায় মঙ্গলবার কিশোরীর মা বাদী হয়ে মাসুমসহ ওই তিনজনকে আসামী করে নারী ও শিশু নির্যাতন আইনে মামলা দায়ের করেন

কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. জসীম জানান, কলাপাড়ার বালিকা মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে অষ্টম শ্রেণিতে পড়ুয়া ওই কিশোরী তার বাবা,মা ও দুই ভাই-বোনের সাথে পৌর শহরের মাদ্রাসা সড়কে একটি ভাড়া বাসায় বসবাস করে। গত ২৩ ফেব্রুয়ারি ওই কিশোরী কলাপাড়া হাসপাতালে করোনার ভ্যাকসিন টিকা দিতে গেলে উপজেলার মকিমপুর গ্রামের সেরাজল মোল্লার ছেলে মাসুমের মাথে পরিচয় হয়। পেশায় মোটরসাইকেল চালক হলেও মাসুম নিজেকে হাসপাতালে চাকুরী করে বলে কিশোরীকে পরিচয় দেয়।

এ পরিচয়ের সূত্রধরে স্কুলে আসা যাওয়ার পথে মাসুম ওই কিশোরীর সাথে দেখা করতো। একপর্যায়ে প্রেমের সম্পর্ক গড়ে তুলে।

গত ৮ মার্চ বিকালে পরিবারের অজান্তে কিশোরীকে মোটরসাইকেলে তুলে ঘুরতে নিয়ে যায় মাসুম। রাত ৯টার দিকে মাসুমের সহযোগী গোপালের সহায়তায় ইটবাড়িয়া গ্রামের একটি বাড়ির ফষলের ক্ষেতে নিয়ে মাসুম ও শাকিল কিশোরীকে ধর্ষণ করে।

এরপর কিশোরীকে বাসায় না পৌছে দিয়ে রাত ১১টার দিকে তাকে কলাপাড়া হাসপাতালে নিয়ে যায়। হাসপাতালের প্রসূতি ওয়ার্ডের ২০৬ নং কক্ষে মাসুমের এক পরিচিত রোগীর কক্ষে নিয়ে যায়। হাসপাতালের নিরাপত্তা ব্যবস্থা না থাকায় সবার অগোচরে ওই রাতে আবার কিশোরীকে সারারাত ধর্ষণ করে মাসুম।

পরদিন সকালে কিশোরীকে ওই কক্ষে রেখেই মাসুম চলে যায়। যাওয়ার সময় এ ঘটনা কাউকে বলতে নিষেধ করে।

মেয়েকে না পেয়ে ৯ মার্চ সকালে হাসপাতালে গেলে তাকে বিধ্বস্ত অবস্থায় থানা পুলিশসহ কাউকে কিছু না জানিয়ে লোকলজ্জার ভয়ে মেয়েকে নিয়ে বাসায় চলে যায় কিশোরীর মা।

কিন্তু ১১ মার্চ দুপুরে কৌশলে কিশোরীকে বিয়ের প্রলোভন দেখিয়ে মোটরসাইকেলে তুলে অপহরন করে নিয়ে যায় মাসুম। এরপর থেকে তার কোন খোঁজ পায়নি।

পুলিশ কর্মকর্তা জানান, দীর্ঘ ১১দিন মেয়েকে না পেয়ে গত সোমবার রাতে বিষয়টি থানায় জানান কিশোরীর মা। রাতেই পুলিশ বিশেষ অভিযান চালিয়ে পৌর শহরের রহমতপুর থেকে কিশোরীকে উদ্ধার করেন। পরে তার দেয়া তথ্যের ভিত্তিতে রাতভর অভিযান চালিয়ে ওই তিন বখাটেকে গ্রেপ্তার করেন। এ ১১দিন তাকে বিভিন্ন স্থানে নিয়ে একাধিকবার ধর্ষণ করা হয়েছে বলে পুলিশকে কিশোরী জানায়। পুলিশের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেপ্তারকৃত মাসুম ও শাকিল কিশোরীকে ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে।

কলাপাড়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা আরও জানান, কিশোরীর মায়ের মামলার প্রেক্ষিতে গ্রেপ্তার তিনজনকে মঙ্গলবার দুপুরে আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে এবং কিশোরীকে ডাক্তারী পরীক্ষার জন্য পটুয়াখালী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে প্রেরণ করা হয়েছে।

এদিকে হাসপাতালে প্রসূতি ওয়ার্ডে নিয়ে বহিরাগত যুবক এক কিশোরীকে রাতভর ধর্ষণ করার বিষয়টি মঙ্গলবার দুপুরে হাসপাতালের চিকিৎসকসহ কর্মচারীরা পুলিশের মাধ্যমে জানতে পারলে তোলপাড় সৃষ্টি হয়। কে, কিভাবে ওই মাসুমকে হাসপাতালে প্রবেশের সুযোগ করে দিয়েছে এ বিষয়টি কেউই অবগত না বলে জানান কর্তব্যরতরা। এমনকি ক্যামেরার মামনে এ বিষয়ে কেউ কথা বলতেও অপরাগত প্রকাশ করে।

এ ব্যাপারে কলাপাড়া হাসপাতালের স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. চিন্ময় হাওলাদার বলেন, পুলিশ তাদের এ বিষয়টি জানিয়েছে। তারা বিষয়টি খতিয়ে দেখছেন।

(এমকে/এসপি/মার্চ ২৩, ২০২২)