মাহবুবুর রহমান, ঝালকাঠি : ঝালকাঠির নলছিটি পৌরসভায় বিভিন্ন প্রকল্পের অনুকুলে বরাদ্দকৃত সরকারী টাকা খরচে ব্যাপক লুটপাটের অভিযোগ পাওয়া গেছে। পৌর মেয়র মো: ওয়াহেদ কবির খান, সাবেক পৌর সচিব রাশেদ ইকবাল, প্রকৌশলী আবু সায়েম এবং পৌর কর্মচারী গোলাম মোস্তফা ও মিরাজুল ইসলাম প্রিন্সের বিরুদ্ধে এ অভিযোগ আনা হয়েছে। পৌরসভার ৬ জন কাউন্সিলর ও স্থানীয়রা এ অভিযোগ করেছেন। এছাড়া পৌরসভার নাগরিকদের পক্ষে স্থানীয় সরকার মন্ত্রনালয়সহ ১২টি দপ্তরে পৌর মেয়রের বিরুদ্ধে অর্থ আত্বসাতের লিখিত অভিযোগ দেয়া হয়েছে।  

লিখিত অভিযোগে নলছিটি পৌরসভার নাগরিক সাইদুর রহমান উল্লেখ করেন, নলছিটি পৌরসভায় ২০২০-২১ অর্থ বছরের বিভিন্ন সময়ে ডেঙ্গু নিধনে বরাদ্দ ২ লাখ ৮৮ হাজার টাকা, আয়লায় ক্ষতিগ্রস্তদের জন্য বরাদ্দ ৮ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, করোনার স্বাস্থ্য সামগ্রী বিতরনের জন্য ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকা, ৯টি প্রকল্পে বিশেষ বরাদ্দের ২৫ লাখ টাকা, উন্নয়ন বাজেটের ২৭ লাখ ৩০ হাজার টাকা।

পৌরসভার বিশেষ বরাদ্দ ২০ লাখ টাকা, নগর উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ২ কোটি ৭৫ লাখ টাকা উত্তোলন, জলবায়ু প্রকল্পে ৫০ লাখ টাকা এবং করোনার দ্বিতীয় বরাদ্দের ১ লাখ ৭৫ হাজার টাকার নামমাত্র কাজ করে অর্থ আত্বসাৎ করা হয়েছে। এছাড়া কাউন্সিলররা জানান, সাবেক মেয়রের রেখে যাওয়া ৪৩ লাখ টাকা ব্যাংক তহবিল থেকে উত্তোলন করা হলেও, তা কোন খাতে খরচ করা হয়েছে তার কোন হিসেব দেখাতে পারেনি পৌর মেয়র। পৌরসভার কাউন্সিলর ও স্থানীয়রা জানান, যেসব প্রকল্পে টাকা দেয়া হয়েছে, তার কোন বাস্তব প্রতিফলন তারা দেখতে পায়নি। করোনার স্বাস্থ্য সুরক্ষা সামগ্রী বিতরন ও ডেঙ্গু নিধনে ওষুধ বিতরন করা হয়েছে নামমাত্র।

এখানে বরাদ্দের অধিকাংশ টাকা আত্বসাৎ করা হয়েছে। নগর উন্নয়ন প্রকল্পে ৭টি রাস্তা নির্মানের জন্য ২ কোটি ৭৫ লাখ উত্তোলন করা হলেও ৩টি রাস্তার মাত্র শতকরা ২০ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। বাকী ৪টি রাস্তার আদৌ কোন কাজ না করে বিল উত্তোলন করে আত্বসাৎ করা হয়েছে। জলবায়ু প্রকল্পে বরাদ্দ ২ কোটি টাকার অনকুলে ১৫০টি ষ্ট্রিট লাইট ও ৫০টি গভীর নলকুপ বরাদ্দ ছিলো। এখানে ৮ টি গভীর নলকুপ ও ১৫টি স্ট্রিট লাইট স্থাপন করে বরাদ্দকৃত বাকী অর্থ আত্বসাৎ করা হয়েছে। সবমিলিয়ে ২০২০-২১ অর্থ বছরে বিভিন্ন প্রকল্পে বরাদ্দ ৪ কোটি টাকার কোন কাজ না করেই অর্থ আত্বসাৎ করা হয়েছে।

অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে নলছিটি পৌরসভার কাউন্সলর পলাশ তালুকদার, তাজুল ইসলাম দুলাল চৌধুরী, ফিরোজ আলম খান, রেজাউল চৌধুরী, দিলরুবা বেগম ও শহিদুল ইসলাম টিটু বলেন, সাইদুল ইসলামের অভিযোগ সম্পূর্ন সঠিক। ২০২০-২১ অর্থবছরে বিভিন্ন প্রকল্পের অনুকুলে আসা ৪ কোটি ৮ লাখ ৩৭ হাজার টাকার অধিকাংশ কাজই না করে অর্থ আত্বসাৎ করা হয়েছে। শুধু তাই নয় সাবেক মেয়রের রেখে যাওয়া ৪৩ লাখ টাকা উত্তোলন করে আত্বসাৎ করা হয়েছে। এই টাকা কোন খাতে খরচ করা হয়েছে তার কোন হিসেব দিতে পারেনি মেয়র। ৭ নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর শহিদুল ইসলাম টিটু বলেন, আমার ওয়ার্ডে রাস্তার কাজ না করায় আমি মেয়রকে উকিল নোটিশও করেছি।

পৌরসভার টেন্ডার কমিটির আহবায়ক ও ১নং প্যানেল মেয়র পলাশ তালুকদার বলেন, আমি টেন্ডার কমিটির আহবায়ক হওয়া সত্যেও মেয়র টেন্ডার কমিটির সাথে কোন ধরনের আলোচনা না করেই সবগুলো টেন্ডার সম্পন্ন করেছে। আমি ব্যাংক ষ্টেটমেন্ট উত্তোলন করে দেখতে পাই, তারা কাজ না করেই বরাদ্দকৃত সকল টাকা উত্তোলন করে নিয়েছে।

অভিযোগের বিষয় জানতে চাইলে নলছিটি পৌরসভার মেয়র মো: ওয়াহেদ কবির খানের বক্তব্য নিতে দুই দিন ধরে পৌরসভা ও তার বাসায় গিয়েও তাকে পাওয়া যায়নি। পরে মুঠোফোনে তিনি বলেন, কিছু কাউন্সিলর আমার বিরুদ্ধে মিথ্যে অভিযোগ করেছে। তাদের স্বার্থের জন্য আমার বিরুদ্ধে ষরযন্ত্র করছে। উন্নয়ন কার্যক্রম চলমান রয়েছে। তারা ভুয়া কাগজে আমার বিরুদ্ধে অভিযোগ করেছে।

(এমআর/এসপি/মার্চ ২৮, ২০২২)