গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রাহ্মণবাড়িয়া-৫ (নবীনগর) আসন থেকে নির্বাচিত আওয়ামীলীগ দলীয় সংসদ সদস্য মোহাম্মদ এবাদুল করিম বুলবুল বলেছেন, নবীনগর উপজেলা আওয়ামীলীগের আসন্ন সম্মেলনকে কেন্দ্র করে গঠিত কমিটিকে যেভাবে ‘সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি’ বলে পত্রপত্রিকায় প্রচার প্রচারণায় মানুষকে বিভ্রান্ত করা হচ্ছে, সেটি মূলত সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি নয়। আমার পরিষ্কার কথা, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি বলে কিছু নেই। ‘দিস ইজ ইনডিভিজিওলি রেসপন্সিবিলিটি!' আর ইতিমধ্যেই আমাদের দলের সিনিয়র নেতা শ্রদ্ধেয় নিয়াজ ভাইয়ের সাথে আমার ফোনে কথা হয়েছে।

আগামী রবিবারই (আজ) আমরা সবাই এ নিয়ে বৈঠকে বসবো। আশা করছি, রবিবারের ওই বৈঠকের পরই আমাদের মধ্যে থাকা সব ভুলবুঝির অবসান ঘটবে। পাশাপাশি, এবার সকলে মিলে সুন্দর আয়োজনে একটি শান্তিপূর্ণ গ্রহণযোগ্য সম্মেলনের মাধ্যমে আসাদের নেত্রীকে একটি ডেলিকেটেড, স্মার্ট, কোয়ালিফাইড সর্বোপরি ভালো লোকের নেতৃত্বে নতুন কমিটি উপহার দিতে পারবো।

তিনি শুক্রবার বিকেলে উত্তরাধিকার ৭১ নিউজকে দেয়া তাঁর একটি একান্ত সাক্ষাৎকারে আসন্ন আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে উপরোক্ত কথাগুলো বলেন। প্রায় ১৪ মিনিটের এ সাক্ষাৎকারে সদ্য ঘোষিত বিতর্কিত ছাত্রলীগের আহবায়ক কমিটি ও আওয়ামী লীগের সম্মেলন নিয়ে কথা বলেন।

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ : বুলবুল ভাই, আপনি বলছিলেন, ছাত্রলীগের কমিটি গঠনতন্ত্রের আলোকে করা না হলে সেটি মেনে নেয়া হবেনা। তাহলে প্রশ্ন ওঠেছে, আওয়ামীলীগের সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি কি আদৌ গঠনতন্ত্র অনুযায়ি করা হয়েছে?

এমপি বুলবুল: দেখুন, সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি বলে আমরা কোন কিছু করিনি। নয় সদস্যের গঠিত কমিটিকে কোনভাবেই সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি বলা যাবে না। সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি বলতে কিছু নেই। দিস ইজ ইনডিভিজিওলি রেসপন্সিবিলিটি! এটি মূলত দায়িত্ব ভাগ করে দেয়ার একটি কমিটি। যেই কমিটিতে দলের সেক্রেটারী হালিম ভাইয়ের নেতৃত্বে এঁরা সবাইকে নিয়ে সুন্দরভাবে কমিটিগুলো গঠন করবে। আর এক্ষেত্রে যাকে প্রয়োজন মনে করবে, তারা তাদেরকে তাদের সঙ্গে সময়মত যুক্ত করে নিবে। এটি সম্প্রতি আমি, দলের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক একত্রে বসেই করে দিয়েছি।

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ : তাহলে নয় সদস্যের গঠিত এই কমিটিকে 'প্রশ্নবিদ্ধ' ও বিতর্কিত বলা হচ্ছে কেন?

এমপি বুলবুল : আসলে দায়িত্ব পাওয়া এই নয়জনের ভিতরে আমাদের সিনিয়র নেতা শ্রদ্ধেয় নিয়াজ ভাইকে বাদ রাখায়, এ নিয়ে বিতর্কটা একটু বেশী হচ্ছে। মূলত আমাদের ধারণা ছিল, তিনি মুরুব্বী মানুষ। বয়সও হয়ে গেছে। হয়তো এই বয়সে বিভিন্ন ইউনয়নে তাঁর যাওয়াটা ডিফিকাল্ট হবে। এটি উনার জন্য সম্মানজনকও হবেনা। তবে একটা সত্য, সম্মেলনের এই কমিটির বিষয়ে এই সিনিয়র নেতার সঙ্গে আমরা হয়তো সেইভাবে যোগাযোগ রাখতে পারিনি। যেটি আমাদের সবচেয়ে ভুল ছিল। তবে তিনিও (নিয়াজ) কিন্তু আমাকে একটা ফোন করে তার মনোকষ্টের কথাটা জানাতে পারতেন। অথচ,তিনি সেটি না করে পাল্টা আরো একটি কমিটি করে বসলেন।

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ : কিন্তু একজন এমপি হিসেবে আপনি কি নিয়াজ ভাইকে এ নিয়ে কখনও ফোন দিয়েছিলেন?

এমপি বুলবুল: হ্যাঁ, আমি উনাকে ২ দিন ফোন করেছি। কিন্তু তিনি আমার ফোন ধরেন নি। হয়তো তাঁর মনোকষ্ট, অভিমান কিংবা রাগ থেকে তিনি আমার ফোনটি রিসিভ করেন নি। তবে গতকাল সাবেক চেয়ারম্যান জামালের মাধ্যমে ফোনে নিয়াজ ভাইয়ের সাথে আমার দীর্ঘ সময় কথা হয়েছে।

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ : দুজনের মধ্যে কি কথা হল? কথা বলে উনার রাগ অভিমান কি কমাতে পেরেছেন?

এমপি বুলবুল: হ্যাঁ, ফোনে কথা বলার পর নিয়াজ ভাইয়ের ভুল ভেঙ্গেছে বলে আমার মনে হয়েছে। কারণ আমার আমন্ত্রণে আগামি রবিবার (আজ) তিনি আমার অফিসে বৈঠকে বসতে রাজী হয়েছেন। আশা করছি, রবিবার অনুষ্ঠিতব্য বৈঠকের পর আমাদের মধ্যে থাকা সব ভুলবুঝির অবসান ঘটবে ইনশাল্লাহ।

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ : নিয়াজ ভাই কি একাই আপনার সঙ্গে বৈঠকে বসতে রাজী হয়েছেন?

এমপি বুলবুল : দেখুন, নিয়াজ ভাই সরল মানুষ। আমরা তাঁকে শ্রদ্ধা করি। তিনি তাঁর সঙ্গে কয়েকজন 'সহযোদ্ধা'কে আনবেন বলেছেন আমি তাঁকে বলেছি, অবশ্যই নিয়ে আসবেন। তারাতো কেউ বিএনপি জামাত করে না। আমরাতো সবাই আওয়ামীলীগই করি। দলের স্বার্থে আমাদের মধ্যে তাহলে কেন ভুল বুঝাবুঝি থাকবে?

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ : নিয়াজ ভাইকে আর কি কি কথা বললেন?

এমপি বুলবুল: উনাকে বলেছি, আওয়ামীলীগ একটি বড় দল। সেখানে মাঝে মাঝে নিজেদের মধ্যে ভুলবুঝাবুঝি হতেই পারে। তবে সেটির সমাধানও আমাদেরকেই করতে হবে। দেখুন, আমার পরিষ্কার কথা, কারও বিরুদ্ধে কোন অভিযোগ থাকলে, সেটি জানাতে হবে। একজন এমপি হিসেবে প্রথমে সেটি আমাকে জানাতে পারেন। আমি সমাধান দিতে না পারলে জেলার নেতৃবৃন্দকে জানাবেন। জেলা ব্যার্থ হলে কেন্দ্রীয় নেতৃবৃন্দকে জানাবেন। কেন্দ্র ব্যার্থ হলে সরাসরি নেত্রীকে জানাতে হবে। কিন্তু দলের অভ্যন্তরীণ ভুল বুঝাবুঝির বিষয় নিয়ে যদি রাজপথে মিছিল মিটিং কিংবা মিডায়ায় সেটি প্রকাশ করা হয়, সেটি কি ঠিক? এটিরতো কোন দরকার নেই। এতে বরং দলের ভাবমূর্তি ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ : আপনাকে এর জবাবে নিয়াজ ভাই কি বললেন?

এমপি বুলবুল : আমারতো মনে হল, তিনি মনযোগ দিয়েই আমার কথাগুলো শুনেছেন। আসলে তিনিতো সহজ সরল মানুষ। যার কারণে তিনি সঙ্গে সঙ্গেই আমাকে বলেছেন, আপনার (এমপি) সঙ্গেতো আমাদের কোন বিরোধ নেই, কোন ক্ষোভ নেই। আমি তখন বললাম, ক্ষোভ যার বা যাদের বিরুদ্ধেই থাকুক, ক্ষোভটাতো আমাকে জানাতে হবে। আমি প্রতিকার করতে না পালে, তবেইতো আপনারা উপর লেভেলে যাবেন।

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ : আপনি প্রায়ই দলীয় গঠনতন্ত্রের আলোকে সবকিছু করার কথা বলেন। এটি কি আজকাল কোন দলে প্র্যাক্টিস হয়?

এমপি বুলবুল: দেখুন, আমার সাফ কথা, সবকিছু হতে হবে দলের গঠনতন্ত্রের আলোকে। সেটি আমি ছাত্রলীগের বেলায়ও বলেছি আওয়ামীলীগের বেলায়ও আমার একই কথা। আমি গঠনতন্ত্রের বাইরে যাবো না। আর সেজন্যই বলেছি, এটি সম্মেলন প্রস্তুতি কমিটি নয়। এটি হল রেসপন্সিবিলিটি। দায়িত্ব ভাগ করে নেয়া। নিয়াজ ভাইকে ফোনে বলেছি, আপনি সিনিয়র নেতা হিসেবে গঠিত নয় সদস্যের ব্যক্তিগুলোকে তদারকি করবেন আপনি। আর আপনি তাদের সঙ্গে যেখানেই যাবেন, আপনি সবসময়ই থাকবেন সেখানে প্রধান অতিথি।

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ : এ বিষয়ে আপনার সঙ্গে দলের সভাপতি ও সেক্রেটারীর কি কোন কথা হয়েছে?

এমপি বুলবুল: হ্যাঁ, আমি সভাপতি বাদল ভাই ও সেক্রেটারী হালিম ভাই দুজনের সঙ্গে এ নিয়ে কথা বলেছি। এঁরা দুজনের আমার কথার সঙ্গে এগ্রি করেছেন। তারা বলেছেন, এতে আমাদের কোন অসুবিধা নেই। আপনার (এমপি) পাশে আমরাও আছি।

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ : শুনা যাচ্ছে- এবারের সম্মেলন থেকে আপনাকে নাকি দলের 'সভাপতি' করা হতে পারে?

এমপি বুলবুল: দেখুন, সম্মেলনে মূলত দলের কাউন্সিলরা সভাপতি কিংবা সেক্রেটারী বানায়। সুতরাং সভাপতি পদে তাঁরা যাদেরকে বানাবে, তারাই সভাপতি ও সেক্রেটারী হবেন। কাজেই এখানে কে সভাপতি হবেন, সেটিতো তৃণমূলের নেতাকর্মীরাই ভালো বলতে পারবেন।

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ: তার মানে, এবার কি ভোটাভুটির মাধ্যমে নতুন কমিটি হবে?

এমপি বুলবুল: যদি কণ্ঠভোটে কোন সমাধান না হয়, তাহলে গঠনতন্ত্র,অনুযায়ি অবশ্যই ভোটের মাধ্যমে নতুন কমিটি গঠিত হবে। এতেতো কোন অসুবিধা নেই। আমি চাই একটি গ্রহণযোগ্য ফেয়ার সম্মেলন। তবে এ পর্যন্ত যতটুকু খবর পাচ্ছি, এবার যে প্রক্রিয়ায় ওয়ার্ড কমিটিগুলো হচ্ছে, গত ৪০ বছরেও এমন সুন্দরভাবে আওয়ামীলীগের কোন কমিটি নাকি গঠিত হয়নি।

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ: সম্মেলনে শেষ পর্যন্ত যদি আপনাকেই 'সভাপতি'র দায়িত্ব নিতে বলা হয়, তখন কি করবেন?

এমপি বুলবুল: দেখুন, এর আগেও ২০০৪ সালে আমাকে নবীনগরে দলের সভাপতি করতে চেয়েছিলেন আমার প্রাণপ্রিয় নেতাকর্মীরা। আমি তখনও রাজী হইনি। পদের প্রতি আমার অতীতেও কোন লোভ ছিলনা, এখনও নেই ইনশাল্লাহ ভবিষ্যতেও থাকবে না।

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ : সবাই মিলে সর্বসম্মতভাবে যদি 'সভাপতি' পদ আপনাকে দেয়া হয়, তখনও নিবেন না?

এমপি বুলবুল : হ্যাঁ এটি ঠিক, যদি সকলে মিলে সর্বসম্মতভাবেঐক্যমতের ভিত্তিতে আমাকে সভাপতি পদে দেখতে চায়, সেক্ষেত্রে অবশ্যই আমি দলের স্বার্থে, উন্নয়নের স্বার্থে সেটি গুরুত্ব দিয়ে বিবেচনা করবো।

উত্তরাধিকার ৭১ নিউজ : আগামি ২১ মে অনুষ্ঠিতব্য আসন্ন সম্মেলন নিয়ে আপনার শেষ বার্তা কি?

এমপি বুলবুল: আমি চাই, একটি সুন্দুর, সুষ্ঠু ও গ্রহণযোগ্য সম্মেলনের মাধ্যমে দলীয় প্রধান, বঙ্গবন্ধু কন্যা মাননীয় প্রধানমন্ত্রী জননেত্রী শেখ হাসিনাকে একটি শক্তিশালী কমিটি উপহার দিতে। যেই নতুন কমিটিতে স্মার্ট, ডেলিকেটেড, কোয়ালিফাইড সর্বোপরি ভালো মানুষ নেতৃত্ব দিবে। যেটি হবে সারাদেশের জন্য অনুকরণীয়, মডেল।

(জিডি/এসপি/এপ্রিল ০২, ২০২২)