স্টাফ রিপোর্টার : গত দুই বছর করোনার কারণে ঈদের বাজার তেমন জমে ওঠেনি। এবার বিধিনিষেধ না থাকায় কেনাকাটা ভালো হওয়ার আশা করছেন ব্যবসায়ীরা। ফলে রাজধানীর ফুটপাতের ব্যবসায়ীরা নতুন পোশাকের পসরা নিয়ে বসেছেন। তবে এখনো জমে ওঠেনি এখানের কেনাকাটা। যদিও অভিজাত বিপণী বিতানগুলোতে এরই মধ্যে ক্রেতাদের উপস্থিতি বেড়েছে।

রবিবার (১৭ এপ্রিল) রাজধানীর গুলিস্তান ও বায়তুল মোকাররম জাতীয় মসজিদ সংলগ্ন ফুটপাত ঘুরে দেখা যায়, কোনো কোনো ব্যবসায়ী বাচ্চাদের বিভিন্ন পোশাকের পসরা সাজিয়ে বসেছেন। কেউ দোকান সাজিয়েছেন নতুন পাঞ্জাবি দিয়ে। এসব দোকানে প্যান্ট, শার্ট, টি-শার্টও রয়েছে। ব্যবসায়ীরা তাদের দোকানে নতুন পোশাক নিয়ে বসলেও ক্রেতাদের আনাগোনা কম।

ব্যবসায়ীরা বলছেন, ফুটপাত থেকে সাধারণত নিম্ন আয়ের মানুষ কেনাকাটা করে থাকেন। তাদের কথা চিন্তা করেই পোশাক তোলা হয়। গেল দুই বছর করোনার কারণে মানুষ ঈদ উদযাপন করতে পারেনি। তাই এবার ঈদে নতুন পোশাকের বাড়তি চাহিদা থাকবে এটাই স্বাভাবিক।

তারা আরও বলছেন, রিকশা-ভ্যানচালকসহ বিভিন্ন নিম্ন আয়ের মানুষ ফুটপাত থেকে ঈদের পোশাক কেনেন। এ মানুষগুলো সাধারণত শেষ মুহূর্তে এসে করেন কেনাকাটা। বিশেষ করে চাঁদরাত এবং তার আগের দুদিন ফুটপাতে বেশি বিক্রি হয়। তবে কিছু ক্রেতা একটু আগেভাগে কেনাকাটা করেন। তাদের কথা চিন্তা করেই দোকানে ঈদের নতুন পোশাক তোলা হয়েছে।

গুলিস্তানে বাচ্চাদের পোশাক নিয়ে বসা মো. সুমন বলেন, করোনার কারণে গত দুই বছর আমরা ব্যবসা করতে পারিনি। দুইটা বছর আমাদের খুব কষ্টে কেটেছে। আশা করি এবার ভালো বিক্রি হবে। সেই আশায় ২০ হাজার টাকা ধার করে দোকানে মাল তুলেছি। আমাদের ঈদের বিক্রি এখনো শুরু হয়নি। এখন মাঝে মধ্যে এক-দুজন ক্রেতা আসছেন। আমাদের মূল বিক্রি হবে ঈদের আগের এক সপ্তাহ।

তিনি বলেন, করোনার কারণে গত দুই বছর মানুষের অনেক ক্ষতি হয়েছে। আয় কমে গেছে অনেকের। মানুষ এখনো ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে পারেনি। তারপরও এবার ঈদের পোশাক বিক্রি ভালো হবে বলে আশা করছি। কারণ গত দুই বছর বেশিরভাগ নিম্ন আয়ের মানুষ নতুন পোশাক কেনেনি। এবার তারা কষ্ট হলেও নতুন পোশাক কিনবেন।

বাইতুল মোকাররম মার্কেট সংলগ্ন ফুটপাতে পাঞ্জাবির পসরা নিয়ে বসা ফিরোজ বলেন, এখন আমাদের বিক্রি পরিস্থিতি মন্দের ভালো। আমাদের মূল বিক্রি হবে ঈদের আগের চার-পাঁচদিন।

আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের পাশের ফুটপাতে পোশাক নিয়ে বসা মো. রুবেল বলেন, এখন ঈদ কেন্দ্রিক বিক্রি হচ্ছে বড় বড় মার্কেটে। যাদের টাকা আছে তারা প্রতিদিন এসব মার্কেটে ভিড় করে পোশাক কিনছেন। ফুটপাতে আমাদের কাছ থেকে পোশাক কেনেন গরিবরা। আর গরিবের ঈদ কেনাকাটা এখনো শুরু হয়নি। সব খরচ যোগাড় করার পর তারা ঈদের পোশাক কিনবেন।

গুলিস্তান থেকে মেয়ের জন্য একটা ফ্রক কেনেন রিকশাচালক জামাল হোসেন। তিনি বলেন, ভাড়া নিয়ে গুলিস্তানে এসেছিলাম। দোকানে ঝোলানো এই ফ্রকটি ভালো লেগেছে। গত দুই বছরের ঈদে মেয়েকে কিছু দেয়নি। তাই ৪০০ টাকা দিয়ে মেয়ের জন্য এই ফ্রক কিনলাম। ২৯ রোজায় গ্রামের বাড়ি ময়মনসিংহ যাবো। সে সময় মেয়ের জন্য নিয়ে যাবো এই ফ্রক। আর সম্ভব হলে মেয়ের মায়ের জন্য শাড়ি নেবো একটা।

এই রিকশাচালক বলেন, ঢাকায় ছয় বছর ধরে রিকশা চালাচ্ছি। এক সময় পরিবার নিয়ে ঢাকায় থাকতাম। কিন্তু করোনার কারণে আয় অনেক কমে গেছে। অনেকদিন বেকার ছিলাম। দেড় বছরের বেশি হয়ে গেছে বৌ-মেয়ে গ্রামের বাড়ি থাকে। এখন আল্লাহর রহমতে পরিস্থিতি ভালো হচ্ছে। পরিস্থিতি এমন থাকলে আগামী কোরবানির ঈদের পর ওদের আবার ঢাকায় নিয়ে আসবো।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ১৭, ২০২২)