স্টাফ রিপোর্টার : শূন্য টাকায় শেয়ার বিক্রির আদেশ দেওয়ায় ১৫ ট্রেডারকে বহিষ্কার করেছে পুঁজিবাজারের নিয়ন্ত্রক সংস্থা বাংলাদেশ সিকিউরিটিজ অ্যান্ড এক্সচেঞ্জ কমিশন (বিএসইসি)। সোমবার (১৮ এপ্রিল) নয়টি ব্রোকারেজ হাউজের ওয়ার্ক স্টেশন থেকে এসব ট্রেডার নয়টি কোম্পানির শেয়ার শূন্য টাকায় বিক্রির আদেশ দেন।

শূন্য টাকায় শেয়ার বিক্রির আদেশ আসা কোম্পানিগুলোর মধ্যে রয়েছে- বেক্সিমকো ফার্মাসিউটিক্যালস, স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালস, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স, নিটল ইন্স্যুরেন্স, আইসিবি, ব্রিটিশ আমেরিকান টোব্যাকো, বিকন ফার্মা ও অলিম্পিক ইন্ডাস্ট্রিজ।

বিএসইসির একটি সূত্র জানিয়েছে, বর্তমানে শেয়ারবাজার জটিল সময়ের মধ্য দিয়ে যাচ্ছে। টানা দরপতন হওয়ায় নিয়ন্ত্রক সংস্থা বিএসইসি বিব্রতকর অবস্থায় রয়েছে। বাজার ভালো করতে কমিশন নানামুখী প্রচেষ্টা চালাচ্ছে।

এ পরিস্থিতিতে ভালো ভালো কোম্পানির শেয়ার শূন্য টাকায় বিক্রির আদেশ দেওয়ায় বিএসইসিকে আরও বিব্রতকর অবস্থায় ফেলেছে। পরিকল্পিতভাবে শেয়ারবাজারে দরপতন ঘটানোর জন্য এমনটা করা হতে পারে বলে সন্দেহ করছে বিএসইসি। এ কারণে শূন্য টাকায় শেয়ার বিক্রির আদেশ দেওয়া ১৫ ওয়ার্ক স্টেশনের ট্রেডারকে বহিষ্কার করা হয়েছে।

এর মধ্যে রয়েছে- পার্কওয়ে সিকিউরিটিজের একটি ওয়ার্ক স্টেশন, আইসিবি সিকিউরিটিজের পাঁচটি, কাইয়ুম সিকিউরিটিজের একটি, রশিদ ইনভেস্টমেন্টের দুটি, শ্যামল ইকুইটি ম্যানেজমেন্টের দুটি, মার্কেন্টাইল ব্যাংক সিকিউরিটিজের একটি, টিকে খান সিকিউরিটিজের একটি, জেকেসি সিকিউরিটিজের একটি ও কাজী ইকুইটির একটি ওয়ার্ক স্টেশন।

এর মধ্যে পার্কওয়ে সিকিউরিটিজ থেকে বেক্সিমকো ফার্মার শেয়ার শূন্য টাকায় বিক্রির আদেশ দেওয়া হয়। আইসিবির পাঁচটি ওয়ার্ক স্টেশন থেকে শূন্য টাকায় বিক্রির আদেশ আসে স্কয়ার ফার্মা, লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ, গ্রিন ডেল্টা ইন্স্যুরেন্স, নিটল ইন্স্যুরেন্স, আইসিবি ও ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর শেয়ারের।

কাইয়ুম সিকিউরিটিজ থেকে স্কয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের শেয়ার শূন্য টাকায় বিক্রির আদেশ দেওয়া হয়। রশিদ ইনভেস্টমেন্টের দুটি ওয়ার্ক স্টেশন থেকে শূন্য টাকায় বিক্রির আদেশ দেওয়া হয় লাফার্জহোলসিম বাংলাদেশ ও আইসিবির শেয়ারের।

শ্যামল ইকুইটির দুই ওয়ার্ক স্টেশন থেকে আইসিবির শেয়ার শূন্য টাকায় বিক্রির আদেশ দেওয়া হয়। মার্কেন্টাইল ব্যাংক সিকিউরিটিজ ও টিকে খান সিকিউরিটিজ থেকে থেকে ব্রিটিশ আমেরিকান টোবাকোর শেয়ার শূন্য টাকায় বিক্রির আদেশ দেওয়া হয়।

জেকেসি সিকিউরিটিজের ওয়ার্ক স্টেশন থেকে বিকন ফার্মার শেয়ার শূন্য টাকায় বিক্রির আদেশ দেওয়া হয়। আর কাজী ইকুইটির ওয়ার্ক স্টেশন থেকে অলিম্পিকের শেয়ার শূন্য টাকায় বিক্রির আদেশ দেওয়া হয়।

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিএসইসির নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র মোহাম্মদ রেজাউল করিম বলেন, ১৫টি ওয়ার্ক স্টেশন থেকে ৯টি কোম্পানির শেয়ার শূন্য টাকায় বিক্রির আদেশ আসে। এ ধরনের বিক্রয় আদেশ দিয়ে সিকিউরিটিজ আইন লঙ্ঘন করা হয়েছে। এ কারণে এই ১৫ ওয়ার্ক স্টেশনের ট্রেডারকে সাসপেন্ড (বহিষ্কার) করা হয়েছে।

যোগাযোগ করা হলে কাইয়ুম সিকিউরিটিজের ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি) নাইম মো. কাইয়ুম বলেন, বিএসইসি থেকে আমরা এখনো এ ধরনের কোনো তথ্য পায়নি। তবে যদি শূন্য টাকায় শেয়ার বিক্রির আদেশ দেওয়া হয়েও থাকা তবে আমি বলবো সেটা ভুলে হয়েছে। এটা অনিচ্ছাকৃত ভুল।

তিনি বলেন, প্রতিটি সিকিউরিটিজের সার্কিট ব্রেকার দেওয়া আছে, তাহলে ট্রেডার ভুলে শূন্য টাকায় বিক্রির আদেশ দিলে তা সফটওয়্যার নিলো কীভাবে। এ ক্ষেত্রে নিশ্চয় সফটওয়্যারেও সমস্যা আছে। এ বিষয়টিও দেখা উচিত।

শ্যামল ইকুইটি ম্যানেজমেন্টের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মো. সাজিদুল ইসলাম বলেন, বিএসইসি থেকে এ বিষয়ে আমাদের এখনো কোনো কিছু জানানো হয়নি। সুতরাং কী হয়েছে সেটা বলতে পারছি না। তবে শূন্য টাকায় বিক্রিয় আদেশ যাওয়ার কথা না। কারণ এখানে তো সার্কিট ব্রেকার আছে। আসলে কী হয়েছে বিষয়টি আমরা জানার চেষ্টা করছি।

(ওএস/এসপি/এপ্রিল ১৮, ২০২২)