| বাবুল হোসেইন |

চক্ষুহাসপাতাল


বহুবর্ণীল চোখগুলো হাসপাতালের লম্বা লনে পায়চারি করতে করতে জিজ্ঞাসু দৃষ্টিতে– আমার মাইনাস, আপনার? আমার ক্ষীণদৃষ্টি ক্ষীণতরো হতে হতে সাদাএপ্রোন ক্রিমসনরঙাঠোঁটের সিস্টারের উপর পড়লে, মাথাটা সামান্য দুলিয়েই কিছু একটা বলার অদ্ভুত জেসচারে ভ্রুকুচকে সরে পড়ে আরো ক্ষীণতরো দৃষ্টির ছায়া ধরে
এক্সকিউজ মি, আমার সিরিয়াল নাম্বারটা। সরি বলে অয়ার্ডবয় ছেলেটা এমনভাবে সটকে পড়ে–দীর্ঘমেয়াদী প্রস্তুতিতে এমন সাবলীল প্রত্যাখ্যান। আর ঘোলাটে দৃষ্টির সামনে আরো বেশী প্রত্যাখিত হবার বাসনা নিয়ে ইনফোডেস্কের রাশভারী লোকটি; জগতের সকল ব্যস্ততা যার কিছুই যায় আসে না।
চোখবিষয়ক সব উদ্বেগ মুখস্ত করতে করতে মেয়েটি কাঁদছিলো স্কারলেটচোখ দিয়ে–ডাক্তার যাদেরকে ছুরির নীচে ফেলে কাঁটাছেঁড়া করবেন। নির্ভরতার কিছুটা আমাকে দিতে দিতে মেয়েটি বলছিলো তার শিল্পজীবন; তার নিখুঁত বুননশিল্পী হবার গল্প। কটা টাকা কামাতে পুরো জীবনটাকেই যে বেঁচে দিয়েছি ইউরোপ আমেরিকার কুত্তাদের কাছে আর এদেশের পাচাটা বণিকদালাল আরো নিবিড়ভাবে তাকে চুষেছে হাড্ডিমজ্জাসমেত।
দুচোখভর্তি জবাকুসুম নিয়ে যে মেয়েটি ইশারা করছে পাশের কালোচশমাকে সেও একটা জবাকুসুম, এই চিন্তা আমাকে ক্রমশ প্রতীক্ষারত চোখের গভীরে নিয়ে যাচ্ছে।
অবশেষে, আমিও মুখোমুখি লালকটকটে শার্টপরা মোটো ডাক্তারের–আদতে যে একজন শোষক; চমৎকার শোষণপ্রনালী বিনিময় করা যার কাজ। টেস্টরিপোর্ট ক্যাশমেমোসহ দেখে স্বস্তিতে ঘটঘট করে লিখলেন মহার্ঘওষুধপত্তর– আর ক্ষীণতরো দৃষ্টিকে দীর্ঘতরো করার বিবিধফর্মুলা।
করিডোর ধরে বেরুতে বেরুতে দীর্ঘদুইঘন্টাব্যাপী বহুরঙা চোখের উত্তাপে পুড়ে যাওয়া ক্ষতে তা দিতেই ইনফোডেস্কের রাশভারী লোকটি– আবার আসবেন।

কৃষ্ণকলি

কৃষ্ণকলি জানতো না আমার চশমার ফ্রেমটা আনকোরা
দৃষ্টির ঝাপসা কাটিয়ে সদ্য বেরুনো চোখবিশেষজ্ঞের তীক্ষ্ণনজরদারি
আই স্যানিটরিয়ামের লনে দীর্ঘ প্রতিক্ষা শেষে
ক্লান্তশ্রান্ত ডাক্তারের বিভ্রতকর প্রশ্নে লীন ছিলাম

বোঝাতে পারিনি, ভালোবাসা সস্তাকাচের ফ্রেম ভেদ করে
উড়ে যাওয়া দৃষ্টির ভিতরও আনকোরা থাকে। আর
মন ও মননশীলতার দায় এড়িয়ে কাউকে হুট করেই
ভালোবাসা যায়। কৃষ্ণকলি জানতো না!

অসুখের নাম নেই কোন

শরীর ছেনেছি ঢের—মৃদুলবণ আর কাচামাংশের ঘ্রাণই সার, অন্যকিছু; নন্দনচর্চা, কাঠামোবাদ সবি লোকায়াত প্রাচীণ পুরাণ। শরীরে কাম ছাড়া অন্যকিছু অন্যকিছুই, কোনোকিছুই নয়।

খাঁজ আর খাদের কিনারে যেতে যেতে চূড়ান্ত আরোহণ শেষে একঝাক ক্লান্তিশ্রান্তি অবসাদ, আর নেই স্বাদ, সাধ ও স্বপ্নের ঘোরটোপ ঐ খাঁজে ঐ খাদে, চূড়ান্ত মিনার ছুঁয়ে জন্মেছে লতাগুল্মফুলপাতা—শিসতোলা মূনিয়াঋষির ঘুমভাঙা পদ্মপুকুর থেকে তুলেছে নীলকমল, খাঁজকাটাপাতা; পুকুরের গোপনতম অসুখ।

অসুখের নাম নেই কোন—তিরতির বয়ে যাওয়া বৃষ্টিকণা ধীরে হারিয়ে যায় সূর্যস্নানে, রৌদ্রগানে। অসুখের নাম নেই কোন—মানবী যা চেয়েছিলো, মানবী তা পেয়েছিলো কিনা—অসুখের নামই হলো তা!

বৃষ্টিগান

বৃষ্টিগানে জোনাকদুপুর গলে
দুপুর তুমি কার আরোহণ
বৃষ্টিগানে ঘরে আমার অগ্নিশিখা জ্বলে
মোহর তুমি লুকিয়েছিলে কার অনুরাগে

সারাদুপুর তন্ন তন্ন খোঁজে
পাইনি কোন বৃষ্টিঝাপি মোহনসুরী
গন্ধগোলাপ, হাসনাহেনা, ঝিঝিডাকা
সমস্তঘর সবকিছুতে আগুণ আগুণ লাগে

কুসুমউষ্ণচুমু

বিশ্বাসঘাতক ছুরি আত্মহত্যাপ্রবণ করে দিলো
নির্ভেজাল আপেলের পেলব শরীর
আর প্ররোচকভিলেইন লাঞ্চের ঢেকুরে
অনেকটা প্রশস্থ শ্বাসবায়ু ফেলে
শীতাতপকক্ষে ভাতঘুম নিতে নিতে
সুন্দরী স্বপ্নগুলো সাবলীল হয়ে উঠলে
নাচঘরে ঝলসানো আলোর জাগরে
ভুলে যায় আপেলের আত্মদান

স্বৈরিণী ছুরি আমাদের পকেটেই থাকে
কখনো হন্তারক, কখনো প্রেমিকার লালজিভে কুসুমউষ্ণচুমু