চৌধুরী আবদুল হান্নান


খন্দকার মোশতাক একটা কালো টুপি পরতেন । শেখ মুজিব একবার বলেছিলেন, “তোরা জানিস না, ওর কত বুদ্ধি । এই টুপি দিয়েই ঢেকে রাখে।” — বেলা-অবেলা, বাংলাদেশ ১৯৭২-১৯৭৫ মহিউদ্দিন আহমেদ ।

পলাশীর যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয় আর মৃত্যু মীর জাফরের বিশ্বাসঘাতকতার ফল। যুদ্ধটাছিল ছোট কিন্ত এর ফল ছিল বড়, দুইশত বছরের ব্রিটিশ রাজত্বের সূচনা হয়েছিল আর ইংরেজরা বুঝেগিয়েছিল এই বাংলা লুটে নিতে চাইলে মীর জাফরের মতো লোকই তাদের দরকার হবে ।

বাংলার আরেক বিশ্বাসঘাতক খন্দকার মোশতাক আহমেদ যে মীর জাফরের মতোই বাংলার মানুষেরকাছে বেইমানের প্রতিশব্দ ।

একবার মোশতাক বঙ্গবন্ধুকে একটি সোনার বটগাছ উপহার দিয়ে বলেছিল— মুজিব তুমি সত্যিকারঅর্থেই বাংলার বটবৃক্ষ, আমরা হলাম ডালপালা মাত্র ।

বঙ্গবন্ধুর মা সায়রা খাতুনের মৃত্যুতে মোশতাক মাটিতে গড়াগড়ি করে কান্নায় চোখমুখ ভাসিয়ে ফেলেছিল।

নির্মম হত্যাকাণ্ড ঘটনার আগের দিন অর্থাৎ ১৯৭৫ সালের ১৪ আগস্ট বাসায় রান্না করা হাঁসের মাংসনিয়ে বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে উপস্হিত মোশতাক। বঙ্গবন্ধুর সঙ্গে কথপোকথনকালে শেখ রাসেলের আগমনঘটে। মোশতাক শিশু রাসেলকে আদর করে মাথায় চুমো খেলেন, এর পর নিজের টুপি খুলে রাসেলেরমাথায় পরিয়ে দিয়ে বঙ্গবন্ধুর দৃষ্টি আকর্ষণ করে বলেছিল — দ্যাখো ওকে কেমন মানিয়েছে ।

স্বাধীনতার ৫১ বছরে এসে বঙ্গবন্ধু হত্যার মূল পরিকল্পনাকারীদের অন্যতম হিসেবে পরিচিত খন্দকারমোশতাকের প্রতি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক মো রহমত উল্লাহর শ্রদ্ধাজানানো বড় বিস্ময় সৃষ্টি করেছে । আসলে তিনি কে ?

আমরা বিশ্বাস করি, তিনি এটা মুখ ফসকে বলে ফেলেননি, মননে এমন ধারন করেন তিনি। আজন্মলালিত বিশ্বাস কখনো চেপে রাখা যায় না, বেরিয়ে আসে । তিনি কি তাহলে ১৯৭৫ পরবর্তী মানসিকতারপ্রতিনিধিত্ব করেন ? তবে জানা যাবে, এ বিষয়ে গঠিত তদন্ত কমিটির রিপোর্ট পাওয়ার পর ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নকালে ১৯৭৫ এর শেষের দিকে (তখন বৈরী সময়) জগন্নাত হলের বন্ধুসুনীলকে সঙ্গে নিয়ে একবার পুরান ঢাকার আগামশি লেনে গিয়েছিলাম মোশতাকের বাড়ির আঙ্গিনায়থুতু ফেলতে, যেমন মুর্শিদাবাদে মীর জাফরের বসবাসের বাড়িটিকে এখনও মানুষ নিমক হারামের দেউড়ীনামেই চেনে ।

ঐতিহাসিক মুজিব নগর দিবসের আলোচনায় ভুলক্রমে হোক বা অনিচ্ছাকৃত হোক বাংলার ঘরে ঘরেমীর জাফর হিসেবে চিহ্নিত খন্দকার মোশতাককে অধ্যাপক রহমত উল্লাহর শ্রদ্ধা জানানোর ঘটনাকেসহজভাবে মেনে নেওয়া যায় না ।

লেখক : অবসরপ্রাপ্ত ডিজিএম, সোনালী ব্যাংক।