মিলন কর্মকার রাজু, কলাপাড়া : দখল, দূষণে মৃতপ্রায় আন্ধারমানিক নদী ফিরে পাক তার হারানো স্রোত এ দাবি তুলে কলাপাতায় ফুল ভাসিয়ে নদীর প্রতি সন্মান জানিয়ে পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় উদযাপন হলো বিশ্ব ধরিত্রী দিবস। আমাদের পৃথিবীর জন্য বিনিয়োগ করুন এ শ্লোগান নিয়ে এ দিবসে সবার একই দাবি রক্ষা করা হোক পরিবেশ। বর্জণ করা হোক পলিথিন,প্লাষ্টিক। এ উপলক্ষ্যে শহরে বর্ণাঢ্য শোভাযাত্রা ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গণে বৃক্ষরোপন করা হয়। জনপ্রতিনিধি ও পরিবেশবিদরা বলেন, পরিবেশ রক্ষায় সবাই এগিয়ে আসলেই সুন্দর হবে আগামী ভবিষত। সুন্দর পরিবেশে বেড়ে উঠতে পারবে নতুন প্রজন্ম। 

পটুয়াখালীর কলাপাড়ায় এবারই প্রথম উদযাপন হলো বিশ্ব ধরিত্রী দিবস। বেঁচে থাকার জন্য খাদ্য,পানীয়সহ যাবতীয় উপাদান আমরা পরিবেশ থেকেই পাই। কিন্তু পরিবেশকে ক্রমশ পিষ্টে পিষ্টে ক্ষতবিক্ষত করে বিষাক্ত পৃথিবীর দিকে ধাবিত করছে ক্ষতিকর প্রযুক্তি। দখল করে নদীর গতিপথ পরিবর্তন করছে। অবাধে ধ্বংস হচ্ছে বনাঞ্চল, পাহাড় ও প্রাকৃতিক জলাধার। তাইতো ক্রমশ রোগাক্রান্ত হয়ে পড়ছে পৃথিবী।

তাই এই পৃথিবী ও পরিবেশ রক্ষায় একজোট হয়ে শিক্ষার্থীরা নদীতে ফুল ভাসিয়ে তার প্রতি সন্মান জানালো। অঙ্গীকার করলো পরিবারের মতো পরিবেশ রক্ষায় তারা একজোট হবেন।

শুক্রবার এ দিবসটি আয়োজন করে আন্তর্জাতিক গবেষণা প্রতিষ্ঠান ওয়ার্ল্ডফিস ও ইকোফিস-২ প্রকল্প। সকালে আন্ধারমানিক নদীতে ফুল ভাসিয়ে নদীর প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে শিক্ষার্থী, জনপ্রতিনিধি ও পরিবেশকর্মীদের অংশগ্রহনে শোভাযাত্রা বের হয়। নদীর তীর থেকে শোভাযাত্রাটি মূল সড়ক প্রদক্ষিণ করে খেপুপাড়া সরকারি মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে গিয়ে শেষ হয়। এ সময় বিদ্যালয় মাঠে রোপন করা হয় বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ।

বিশ্ব ধরিত্রী দিবসে অংশ নিয়ে শিক্ষার্থীরা বলেন, এ আন্ধারমানিক নদী হলো কলাপাড়ার হৃদস্পন্দন। এ নদী না বাঁচলে পরিবেশে বিরূপ প্রতিক্রিয়া দেখা দিবে। একইসাথে তারা এখন থেকে সব ধরণের প্লাষ্টিক পণ্য বর্জণ করবেন বলে অঙ্গীকার করেন।

আর মডেল মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক আব্দুর রহিম বলেন, পরিবেশ রক্ষায় তারা এখন থেকে শিক্ষার্থীদের সচেতন করতে কাজ করবেন।

প্রানী ও পরিবেশ গবেষক সাগরিকা স্মৃতি বলেন, কেবল সচেতনতাই পারে আগামীর পৃথিবীকে বাসযোগ্য করে তুলতে। এজন্য সবাইকে পরিবেশ, নদী ও প্রানীসম্পদ রক্ষায় কাজ করতে হবে।

কলাপাড়া পৌর মেয়র বিপুল চন্দ্র হাওলাদার বলেন, আজ একটি শুভদিনের যাত্রা শুরু হলো। সবুজে ঘেরা পৌরশহর গড়তে তারা কাজ শুরু করবেন। নদী,খাল ও পরিবেশ না বাঁচলে একটি শহর বাসযোগ্যের অনুপযুক্ত হয়ে পড়ে।

কলাপাড়া উপজেলা চেয়ারম্যান এস এম রাকিবুল আহসান বলেন, প্রান,প্রকৃতি রক্ষায় তারা কাজ করবেন। আজ ছোট্র শিশুরা নদীর প্রতি যেভাবে সন্মান জানিয়েছে, প্রতিটি মানু্ষ যদি পরিবেশ রক্ষায় এগিয়ে আসে কেবল তাহলে বাঁচবে এ পৃথিবী।

উল্লেখ্য, ১৯৭০ সালে জলবায়ু সম্পর্কে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে রাস্তায় নেমে এসেছিলো যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় দুই কোটি মানুষ। সেই থেকেই দিবসটির সূত্রপাত। সে বছরই মার্কিন সিনেটর গেলর্ড নেলসন দিবসটির প্রচলন করেন। পৃথিবীকে ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করাই এ দিবসটি পালনের উদ্দেশ্য।

(এমকে/এসপি/এপ্রিল ২২, ২০২২)