তুষার কান্তি বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : গত কয় দিনির ঝড় ও বাতাসে ক্ষ্যাতের ধান শুয়ে (হেলে) পড়ছে। ক্ষ্যাতের ধানের গোড়ায় জোয়ারের পানি আইছে। তারাতারি ধান কাটতি না পারলি ধান গ্যাজায় (গজায়) নষ্ট হয়ে যাবে। এ ধান মেসিনে কাটা যাচ্ছে না। লোক দিয়ে কাটতি হবে। ধান কাটার লোক পাচ্ছিনে। ধান কাটার  লোকরা ১ হাজার টাকা চাচ্ছে। কিন্তু প্রতিমন ধান  বেচছি মাত্র ৭শ’ টাকা দরে। ধানের চেয়ে জোনের দাম বেশি। এ আবস্থায় আমাগে দুশ্চিন্তার শেষ নাই। কথাগুলো বললেন গোপালগঞ্জ সদর উপজেলার বোড়াশী ইউনিয়নের পাথালিয়া গ্রামের কৃষক নজরুল ইসলাম মোল্লা (৫৬)।

ওই কৃষক আরো বলেন, দুই বিঘে বিলের জমিতে বোরো ধান লাগাই ছিলাম। ফলন ভালই হইছে। এ ধান দিয়েই আমাগে সারা বছর চলে। ধান ঘরে তুলতি না পারলি আমাগে কষ্টের সীমা থাকপে না। এরমধ্যে ঝড়-বিষ্টি শুরু হইছে। শ্যাষ পর্যন্ত কি হয় তা নিয়ে চোখে-মুখে শষ্যের ফুল দেখতিছি।

গোপালগঞ্জ কৃষি সম্প্রসারণের উপ-পরিচালক ড. অরবিন্দু কুমার রায় বলেন, গোপালগঞ্জ জেলার ৫ উপজেলায় এ বছর ৮০ হাজার ৫ শ’ ২০ হেক্টর জমিতে বোরো ধানের আবাদ হয়েছে। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার মেট্রিক টন। এ বছর জেলায় ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ইতিমধ্যে জেলার ৪০ ভাগ ধান কাটা হয়েছে। গত কয়েক দিনের ঝড় ও বৃষ্টিতে জেলার অন্তত ১০ হাজার হেক্টর জমির ধান হেলে পড়েছে। এতে ক্ষতির মুখে পড়েছে ৫০ হাজার টন ধান। হেলেপড়া ধান মেসিন দিয়ে কাটা যায় না। এ ধান শ্রমিক দিয়ে কাটতে হয়। তাই শ্রমিক সংকটে কৃষক ধান নিয়ে বিপাকে পড়েছেন। আমরা ধান কাটতে অন্য জেলা থেকে শ্রমিক আনতে কৃষককে সহায়তা করছি। কৃষকদের দ্রæত ধান কেটে নিতে বলছি। এছাড়া ভর্তুকিমূল্যে আমরা কৃষকদের ধানকাটা মেসিন সরবরাহ করেছি। আসানির প্রভাবে সোমবার থেকে বৃষ্টি শুরু হয়েছে। এর প্রভাব থেকে ফসল রক্ষার জন্য আমরা পরামর্শ দিচ্ছি। পাশাপাশি আমাদের কর্মীরা কৃষকের মাঠে রয়েছে। তারপরও আসানির প্রভাবে ধানের ক্ষতির আশংকা করছেন এ কৃষি কর্মকর্তা।

কোটালীপাড়া উপজেলার দীঘলিয়া গ্রামের কৃষক মৃনাল কান্তি হালদার (৫২) বলেন, আমাগো জমি নিচে প্রকৃতির। এইহানে বছরে মাত্রর একটি ধান হয়। এইহায়ে হাইব্রিড ধান মোরা বেশি চাষ হরি। এ ধান ঝড়ে হুইয়া পড়ছে। এ্যাহন কিভাবে ধান ক্যাইটা ঘরে তোলবো এ নিয়ে দিশেহারা।

কোটালীপাড়া উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা নিটুল রায় বলেন, এ বছর কোটালীপাড়া উপজেলায় মোটা ধান বেশি আবাদ হয়েছে। এ ধানের বাম্পার ফলন হয়েছে। ১৫দিন আগেই ধান পাকতে শুরু করে। আমরা দ্রুত ধান কাটার জন্য কৃষককে সব ধরণের সহায়তা করছি। আসানিকে সামনে রেখে আমরা ধান কাটতে কৃষককে উদ্বুদ্ধ করতে মাইকিং করেছি। আমাদের অফিসের সবার ছুটি বাতিল করা হয়েছে। কর্মরত সবাই কৃষকের পাশে রয়েছেন। এখানে ১৩টি কম্বাইন্ড হারবেস্টার, ৩৩ টি রিপার দিয়ে ধান কাটা হচ্ছে। হেলেপড়া ধান কাটতে উত্তর ও দক্ষিণ অঞ্চল থেকে শ্রমিক এনেছি। তাদের দিয়ে ধান কেটে দেয়া হচ্ছে।

(টিকেবি/এএস/মে ১০, ২০২২)