একে আজাদ ও মিঠুন গোস্বামী, রাজবাড়ী : কৃষি প্রধান রাজবাড়ী জেলাতে এ বছর ঘুর্ণিঝর অশণির কারনে কয়েকদিন ধরে অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে পানিতে তলিয়ে গেছে বেশিরভাগ পাট ক্ষেত ৷ সেই সাথে পাট ক্ষেতে পোকার আক্রমণ। ফলে এবছর জেলার পাট চাষিরা অনেকটাই ঝুঁকিতে পরেছে। তবে কৃষি বিভাগ বলছে তেমন কোন ক্ষতি হয়নি। 

সরেজমিনে জেলার বিভিন্ন এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, কয়েক দিনের অতিরিক্ত বৃষ্টিতে নিম্ন অঞ্চলের পাট ক্ষেতে পানি জমে আছে।এছাড়াও কিছু কিছু পাট ক্ষেতে পাটের পাতায় পোকার আক্রমণ ও লক্ষ করা গেছে। আবার এখনো তেমন পাট বড় না হওয়ায় পানিতে তলিয়ে গেছে কিছু কিছু পাট ক্ষেত।

রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর সুত্রে জানা যায়, রাজবাড়ীতে এবছর ৪৮ হাজার হেক্টর জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। গত বছরের তুলনায় এবছর এক হাজার হেক্টর জমিতে পাট আবাদ বেশি হয়েছে। মুলত পেঁয়াজ, মসুর ও গম উত্তোলন করে সেই সব জমিতে পাটের আবাদ হয়েছে। জেলায় সব থেকে বেশি পাটের আবাদ হয় বালিয়াকান্দি, পাংশা ও কালুখালি উপজেলাতে।

এপ্রিল মাসের শুরু থেকে মাঝামঝি সময় পর্যন্ত পাট বীজ বোপন করেছে কৃষক। মুলত জেলায় সেচের মাধ্যমে পাট বীজ বোপন করে কৃষক। তবে এবছর পাট চাষে সমস্যা তৈরি করেছে অতিরিক্ত বৃষ্টি। ঈদের দিন থেকে শুরু হয়েছে বৃষ্টি পাত। দুই দিন বৃষ্টি চলার পর তিনদিন কিছুটা বন্ধ ছিল। এরপর ঘুর্ণিঝর অশণির প্রভাবে গত কয়েকদিন ভারি বৃষ্টি হচ্ছে রাজবাড়ীতে। অতিরিক্ত বৃষ্টির ফলে অধিকাংশ পাট ক্ষেতে পানি জমেছে। এছাড়া নিচু এলাকার জমি তলিয়ে গিয়েছে। ফলে পাট আবাদ নিয়ে শঙ্কায় রয়েছে চাষিরা।

কৃষকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, পাট আবাদের জন্য বৃষ্টির পাশাপাশি নিয়মিত প্রচুর রোদের প্রয়োজন। কোন অবস্থাথেই পাট ক্ষেতে পানি জমে থাকা যাবে না। সব সময় জমির মাটি শুকনো থাকলে ফলন ভালো হয়। গত কয়েক দিনের বৃষ্টি পাতে অধিকাংশ পাট ক্ষেতে পানি জমেছে। পানি জমার ফলে ছোট ছোট পাটের মাটির উপরের অংশে শিকর গজিয়েছে। এ জন্য সকল গাছ আর বড় হবে না। আবার পানি জমি থেকে সরে গেলে তখন এই পাট রোদে মারা যাবে। এছাড়া বৃষ্টির কারনে জমিতে আগাছার পরিমান বৃদ্ধি পেয়েছে। মাটি নরম থাকায় আগাছাও পরিস্কার করতে পারছে না কৃষকেরা। বাড়তি উপদ্রব হিসেবে পাট ক্ষেতে দেখা দিয়েছে পোকার আক্রমণ। অনেক ক্ষেতে পাটের পাতা খেয়ে সাবার করছে পোকা। পাট চাষিরা বলছে এবছর পানি জমে থাকা জমিগুলোতে পাট আর বড় হবে না।

পাংশা উপজেলার এক জন পাট চাষি বলেন, পাটের জমিতে সেচ দেবার পরপরই শুরু হয়েছে বৃষ্টি। দুই বাদ দিয়ে আবার টানা বৃষ্টি চলছে। পাটের বয়স একমাসও হয়নি। পানি জমে থাকায় পাট বড় হবে কিনা সন্দেহ আছে। রাজবাড়ী সদর উপজেলার চন্দনী ইউনিয়রে কৃষক মোহন শেখ বলেন, পেঁয়াজ তুলে আমি পাঁচ বিঘা জমিতে পাট চাষ করেছি। তার তিন বিঘাতেই পানি বেধে আছে। পানি বের হচ্ছে না। এই পাটও আর হবে না। কেটে ফেলে অন্য কিছুর আবাদ করা লাগবে।

রাজবাড়ীর সদর উপজেলার এক জন পাট চাষি বলেন, আমরা বিল এলাকায় পাটের আবাদ করি। কিন্তু এই অসময়ের লাগাতার বৃষ্টিতে পাটের জমিতে পানি। আবার উচু জমির পানি গড়িয়ে নিচে আসছে। ফলে নিচু জমির পাট আর হবে না। রাজবাড়ী কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপপরিচালক এসএম শহীদ নূর আকবর বলেছেন অন্য কথা। এই কর্মকর্তা জানান, বর্তমান বৃষ্টিপাতের ফলে পাটের ফলন ভালো হবে। পাটের জন্য এই বৃষ্টি দরকার। পাটের বেড়ে ওঠায় সাহায্য করবে এই বৃষ্টি।

(একেএমজি/এসপি/মে ১৩, ২০২২)