তুষার কান্তি বিশ্বাস, গোপালগঞ্জ : গোপালগঞ্জের কাশিয়ানীতে বাস-প্রাভেটকার ও মটর সাইকেলের সংঘর্ষে ৩ পরিবারের ৮ জন নিহত হয়েছেন। এতে আহত হয়েছে আরো অন্তত ২৫ জন। 

আজ শনিবার সকাল ১১ টার দিকে ঢাকা-খুলনা মহাসড়কের কাশিয়ানী উপজেলার মিল্টন বাজার (দক্ষিণ ফুকরা) এলাকায় এ মর্মান্তিক সড়ক দূর্ঘনাটি ঘটে।

নিহতরা হলেন, গোপালগঞ্জ শহরের উদয়ন রোর্ডের বাসিন্দা সাবেক কাউন্সিলর প্রফুল্ল কুমার সাহার ছেলে বার্ডেম হাসপাতালের চিকিৎসক বাসুদেব সাহা (৫৪), স্ত্রী শিবানী রানী সাহা (৪৬), ছেলে আহসানাউল্লাহ বিশ্ববিদ্যালয়ের ত্রিপলী বিভাগের দ্বিতীয় বর্ষের ছাত্র স্বপ্নীল সাহা, প্রাইভেটকার চালক ঢাকার আদাবর থানার দোয়ারী এলাকার আঃ রশিদ মিয়ার ছেলে মোঃ আজিজ মিয়া (৩৫), কাশিয়ানী উপজেলার ফুকরা গ্রামের ফিরোজ মোল্লা (৫০) ও তাঁর স্ত্রী রুমা বেগম (৪০), অনিক মিয়া (২৮) তার স্ত্রী জেসমিন আক্তার (২৭)।

এ ঘটনায় গুরুতর আহত কলি খানম, দিদার শরীফ, বদর মিয়া, সোবাহান, বায়েজীদ, আর্জু বেগম, কালাম মিয়া, মাহফুজ, কামরুল, ফারুক, মাসুম মোল্লা, হীরা, হাওয়া বেগম, হোসাইন, আঃ রহমান, জোহরা, ইসমোতারা, আলিফ, সিফাতকে গোপালগঞ্জ সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এদের মধ্যে দু’জনের অবস্থা আশংকাজনক বলে চিকিৎসকরা জানিয়েছেন। বাকী আহতরা প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়ে হাসপাতাল ছেড়েছেন।

স্থানীয়রা জানিয়েছেন, সকালে ব্যক্তিগত প্রাইভেটকারে করে বারডেম হাসপাতালের চিকিৎসক গোপালগঞ্জের প্রফুল্ল কুমার সাহার ছেলে বাসুদেব সাহা স্ত্রী ও সন্তানকে নিয়ে ঢাকা থেকে অসুস্থ মাকে দেখতে গোপালগঞ্জ আসছিলেন। অপরদিকে, কাশিয়ানীর ফুকরা থেকে একটি মটর সাইকেল নিয়ে অনিক মিয়া ও জেসমিন আক্তার গোপালগঞ্জ শহরের দিকে আসছিলো। ঘটনাস্থলে প্রাইভেটকার ও ওই মটর সাইকেলের সংঘর্ষ হয়। এ সময় বরগুনার পাথরঘাটা থেকে ঢাকাগামী রাজিব পরিবহনের একটি দ্রুতগামী যাত্রীবাহী বাস অপর একটি নসিমনকে সাইড দিতে গেলে প্রাইভেটকারের সাথে বাসের সংঘর্ষ ঘটে। তখন প্রাইভেটকারটি দূমড়ে মুচড়ে মহাসড়কের পাশে ধান মাড়াইরত মেশিনের ওপর ছিটকে পড়ে এবং যাত্রীবাহী বাসটি গাছের সাথে ধাক্কা লেগে রাস্তার উপর উল্টে পড়ে। এতে ঘটনাস্থলে ডাক্তার বাসুদেব সাহা, তার স্ত্রী ও সন্তান ও ধান মাড়াইরত ফিরোজ মোল্লা ও তার স্ত্রীসহ ৭ জন ঘটনাস্থলে নিহত হন। দ্রুতগতি ও মহাসড়কের উপর ধান মাড়াই করার কারনে এ দূর্ঘটনা ঘটেছে বলে জানায় প্রত্যক্ষদর্শীরা।

রাজিব পরিবহনের যাত্রী মোঃ শহিদুল আলম বলেন, তিনি বরগুনার পাথরঘাটা থেকে ছেলেকে নিয়ে ঢাকা যাচ্ছিলেন। দূর্ঘটনায় পতিত বাসটির পিছনের দিকের সিটে তিনি ছিলেন। বাসটির গতি অনেক বেশি থাকায় চালক বাসটির নিয়ন্ত্রণ রাখতে পারেননি। মুহুর্তের মধ্যে বাসটি রাস্তার উপর উল্টে যায়। এতে তার শিশু সন্তান খুব ভয় পেয়েছে। বাসের অনেক যাত্রী আহত হয়েছেন।

মোঃ এনামুল হক বলেছেন, যত্রতত্র মহাসড়কের উপর মাড়াইকল দিয়ে ধান মাড়াই করার কারণে প্রায় দূর্ঘটনা ঘটছে। আজকের দূর্ঘটনাও সড়কের উপর ধান মাড়াই করার কারণে ঘটেছে। কারণ যেখানে ধান মাড়াই করা হয় এর আশপাশের বেশ কিছু জায়গায় ধানের খড় ও অবশিষ্টাংশ যানবাহন ও পথচারীদের ভোগান্তীর মধ্যে ফেলে ও দূর্ঘটনা ঘটে।

গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা, পুলিশ সুপার আয়েশা সিদ্দীকা, কাশিয়ানী উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মেহেদি হাসান, জেলা ও পুলিশ প্রশাসনের উদ্ধর্তন কর্মকর্তারা দূর্ঘটনাস্থল ও হাসপাতাল পরিদর্শন করে নিহত ও আহতদের খোঁজখবর নিয়েছেন।

জেলা প্রশাসক শাহিদা সুলতানা বলেছেন, মহাসড়কে ধান মাড়াই ও দ্রুত গতির কারণে এই দূর্ঘটনা ঘটেছে। আহতদের গুরুত্বের সাথে চিকিৎসা দেওয়ার নির্দেশ দেয়া হয়েছে। নিহতদের পরিবার প্রতি ১০ হাজার টাকা ও আহতদের প্রত্যেককে চিকিৎসার জন্য ৫ হাজার টাকা করে জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে দেয়া হবে।

এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত নিহতেদের লাশ পুলিশ হেফাজতে গোপালগঞ্জ জেনারেল হাসপাতালে রয়েছে।

(টিকেবি/এসপি/মে ১৪, ২০২২)