বাগেরহাট প্রতিনিধি : শারদীয় দুর্গা উৎসব ও ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে ওয়ার্ল্ড হেরিটেজ সুন্দরবন-ষাটগম্বুজ মসজিদ ও হযরত খানহাজান আলী’র (র.) মাজারে এখন পর্যটকের উপচে পড়া ভিড় । দেশি-বিদেশি পর্যটকদের ভিড়ে উৎসবের আমেজ সৃষ্টি হয় বাগেরহাটের বিশ্ব ঐতিহ্য সুন্দরবন, ষাটগম্বুজ ও খানজাহান আলীর মাজার এলাকায়।

শারদীয় দুর্গা উৎসব ও ঈদের দীর্ঘ ছুটি শুরুর সাথে সাথেই এই তিনটি স্পটে আসতে শুরু করেছে দেশি-বিদেশি পর্যটক। এখন পর্যটকদের পদচারনায় মুখরিত হয়ে ওঠেছে বাগেরহাটের পূর্ব সুন্দরবন। হাজার হাজর দেশি-বিদেশি পর্যটকের ভিড় সামলাতে বনরক্ষীদের রীতি মতো হিমশিম খেতে হচ্ছে। ভ্রমণপিপাসু দর্শনার্থীরা মাতিয়ে তুলেছে পর্ব সুন্দবনের পর্যটন কেন্দ্র করমজলসহ কটকা,কচিখালী হিরন পয়েন্ট-টাইগার পয়েন্টের বঙ্গোপসাগর উপকূল। এক সময়ে প্রায় এক লাখ পর্যটকের আগমন ঘটবে বলে সুন্দরবন পূর্ব বিভাগ ও ষাটগম্বুজে অবস্থিত প্রত্নতত্ত্ব বিভাগ আশা করছে।


ওয়ার্ল্ড হ্যারিটেজ ষাটগম্বুজ মসজিদ ও হযরত খানজাহান আলী মাজারে এবারের শারদীয় দুর্গা উৎসব ও ঈদের ছুটিতে ব্যাপক পর্যটকের আগমন ঘটেছে। এ দুটি স্পটে দেশের বিভিন্ন প্রান্ত ও বিদেশের বহু সংখ্যক মানুষ ভ্রমণে আসেছে। মাজারের দীঘিতে মিঠা পানির কুমির ছুয়ে আনন্দ উপভোগ করছেন দর্শানার্থীরা। তবে বেশি আনন্দ করছেন পিতা-মাতার সাথে আসা শিশুরা। কিশোরগঞ্জের কটিয়াদী থেকে হযরত খানজাহান আলী মাজারে আসা প্রবাসি মকবুর হোসেন জানান,‘দেশে এসে পূজা ও ঈদের ছুটিতে এখানে এসে খুব আনন্দ পাচ্ছি, যা বলার অপেক্ষা রাখে না। কক্সবাজারের উখিয়া থেকে স্বপরিবারে আসা আবু তালহা মিন্টু বলেন, ‘মাজারের দিঘির কুমিরের মাথায় হাত দিয়ে খুব আনন্দ পেলাম। এর আগে একবার এসে কুমির দেখার সুযোগ হয়নি। এবার স্বপরিবারে বিনোদন স্পটগুলো ঘুরে অন্য রকম আনন্দ পাচ্ছি। ষাটগম্বুজ মসজিদ ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের জাদুঘরে রাখা বহু বছর আগের পুরাকীর্তির নিদর্শন দেখে অনেকেই অবাক হন। সেখানে দিনাজপুর থেকে আসা পর্যটক সাবিনা ইযাসমিন বলেন,‘ চাকুরী করার কারণে ইচ্ছা থাকলেও অনেক কিছু দেখতে পারি না। এবার দীর্ঘ ছুটিতে এখানে এসে অনেক মজা করলাম। প্রায় ৬শ বছর আগে খানজাহানের পুরাকীর্তির নিদর্শন দেখে খুব ভাল লাগল।

সুন্দরবন পূর্ব বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, শারদীয় দূর্গা উৎসব ও ঈদের ছুটিতে দেশি-বিদেশি পর্যটকের এখন উপচে পড়া ভিড়। সুন্দরবনের করমজলসহ কটকা,কচিখালী হিরন পয়েন্ট-টাইগার পয়েন্টের বঙ্গোপসাগর উপকূলের পর্যটন স্পট গুলোতে রবিবার থেকে ব্যাপক সংখ্যক পর্যটকের আগমন ঘটেছে। মংলায় অবস্থিত পর্যটন করপোরেশনের মোটেলসহ সকল হোটেলে আসন পরিপূর্ন হয়ে গেছে। বন বিভাগের নির্ধারিত রাজস্ব পরিশোধসহ পাস পারমিট নিয়ে দর্শনার্থীদের সুন্দরবনে ভ্রমন করতে হয়। সুন্দরবনের বাঘ, কুমির, ডলফিন, বানর, বিষধর সাপ, হিংস্র প্রাণীর দর্শনলাভের প্রত্যাশায় সুন্দরবনে ভ্রমণে আসেন হাজার হাজার পর্যটক। দর্শনার্থীদের পদচারণায় প্রাকৃতিক লীলাভূমি ২৪ ঘন্টায় ৬ বার রূপ বদলানো সুন্দরবন কোলাহলমুখর হয়ে ওঠে। কচিখালীর সীবিচ থেকে সূর্যোদয়-সূর্যাস্ত দেখার অপূর্ব সুযোগ টানে পর্যটকদের। সুন্দরবনের পর্যটন স্পট করমজলে পর্যটকদের ভিড় সবচেয়ে বেশি।


সুন্দরবন পূর্ব বিভাগের করমজল পর্যটন কেন্দ্রের ডেপুটি রেঞ্জ কর্মকর্তা মো. আব্দুর রব জানান, শারদীয় দুর্গা উৎসব ও ঈদের ছুটিতে গত বছরের তুলনায় এবার বেশি পর্যটকের আগমন ঘটেছে। এখানে হাজার হাজার দেশি-বিদেশি পর্যটক সুন্দরবন ভ্রমণে আসছে। তবে পিতা-মাতার সাথে শিশুদের আগমন বেশি। সুন্দরবনে বেড়াতে আসা দর্শনার্থীদের নিয়ন্ত্রণ করতে বনরক্ষীদের হিমশিম খেতে হয় বলে তিনি উল্লেখ করেন।

সুন্দরবন পূর্ব বন বিভাগের বিভাগীয় কর্মকর্তা আমির হোসাইন চৌধুরী জানান, এবার শারদীয় দুর্গা উৎসব ও ঈদের ছুটিতে সার্বিক পরিবেশ ও আবহাওয়া মোটামুটি ভালো থাকায় পর্যটকদের আগমন বেড়েছে। বন বিভাগ পর্যটকদের জন্য বাড়তি নিরাপত্তা নিশ্চিত করেছে।

বাগেরহাটের ষাটগম্বুজ প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের কাষ্টডিয়ান গোলাম ফেরদাউস জানান, বিশ্ব ঐতিহ্য ষাটগম্বুজ মসজিদ ইসলাম ধর্মের মানুষের কাছে পবিত্র স্থান ছাড়াও বিভিন্ন ধর্মেও দেশি-বিদেশি পর্যটকরা এখানে সারা বছরই পরিদর্শনে আসেন। তবে এবছর শারদীয় দুর্গা উৎসব ও ঈদের দীর্ঘ ছুটিতে দেশি-বিদেশি পর্যটকের আগমন আরও বেশি বেড়েছে। রবিবার থেকে হাজার হাজার পর্যটক ষাটগম্বুজ মসজিদ, জাদুঘর ও খানজাহান মাজার পরিদর্শন করছে।

(একে/এএস/সেপ্টেম্বর ২৯, ২০১৪)