রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা : সাতক্ষীরার আশাশুনি উপজেলার গদাইপুর গ্রামের আওয়ামী লীগ নেতা শরবত হোসেন মোল­াকে কুপিয়ে ও পিটিয়ে হত্যার দায়ে রাজাকার মোজাহার সরদারের ছেলে  খাজরা ইউপি চেয়ারম্যান শাহানেওয়াজ ডালিমসহ ৩০ জনের নামে উপস্থাপিত অভিযোগপত্রটি আদালতে গৃহীত হয়েছে। সোমবার দুপুর সাতক্ষীরা  জ্যেষ্ঠ বিচারিক হাকিম দ্বিতীয় আদালতের বিচারক মো. রাকিবুল ইসলাম মামলার বাদি সবুজ হোসেন মোল­ার উপস্থিতিতে ও সম্মতিতে এ অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে বিচারের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠানোর নির্দেশ দেন।

মামলার অন্য আসামীরা হলেন, শাহানেওয়াজ ডালিমের ভাই আব্দুস সালাম বাচ্চু, জুলফিকার আলী ওরফে জুলি, দাউদ আলীর ছেলে সিরাজুল মোল­া, বাবু মোল­ার ছেলে সিরাজুল মোল­া, আনারুল মোল­ার ছেলে মোস্তাকিম মোল­া, জামসেদ মোল­া, জামসেদ মোল­ার ছেলে মোস্তাকিম মোল­া, ইউপি সদস্য অনুপ কুমার সানা, নুরুজ্জামান মোল­া ওরফে ছোটনুনু, ফয়জুল­াহ হোসেন ওরফে হিমু সরদার, ইউসুফ মোল­া, গোলাম রসুল মোল­া ওরফে বাচ্চু, নুর ইসলাম মোল­া, সালাম সরদার, সাইফুল মোল­া, আব্দুল করিম মোল­া ওরফে খোকন, কবির হোসেন সরদার, কামরুল ইসলাম ওরফে পুলিশ, মো. ইউনুছ গাজী, খায়রুল সরদার, জামারুল সরদার, কামরুল ইসলাম মোল­া, রাশেদুল মোল­া, সাব্বির সরদার, স্বপন কুমার মণ্ডল, রিপন হোসেন ওরফে রিপিয়ান, মোস্তফা আলী সরদার ও এবাদুল সানা।

মামলা ও ঘটনার বিবরণে জানা যায়, ২০২০ সালের ৮ এপ্রিল আশাশুনির গদাইপুর বিলে মঞ্জুরুল মোল­ার চিংড়ি ঘেরের দু’ কর্মচারিকে বেঁধে রেখে মাছ লুটের ঘটনায় থানায় অভিযোগ দিলে ক্ষুব্ধ হন গদাইপুর গ্রামের রাজাকার মোজাহার সরদারের ছেলে শাহানেওয়াজ ডালিম ওরফে ডালিম ডাকাত। এরই জের ধরে ডালিমের দু’ ভাই ও তাদের লোকজন ৯ এপ্রিল শবেবরাতের রাতে গদাইপুর ৮নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক শরবত মোল­া ও মঞ্জুরুল মোল­ার চিংড়ি ঘেরে লুটপাট চালায়। ১০ এপ্রিল সকালে ওই মাছ চেয়ারম্যান, তার ভাই আহসান হাবিব টগর গদাইপুর মাছের সেটে বিক্রি করতে গেলে শরবত মোল­ার সঙ্গে বচসা বাঁধে। এ সময় সরকারি ১০ টাকার চাল গরীবদের না দিয়ে তার পকেটের লোকজনদের দেওয়া নিয়ে হাতাহাতিও হয়। পরে সকাল নয়টার দিকে পুরাতন কবরস্থানের পাশে শরবত মোল­া, তার স্ত্রী শরিফা খাতুন, প্রতিবেশি আরিফা খাতুন, তুয়ারডাঙার সুবিমল বিশ্বাসসহ কয়েকজনকে পিটিয়ে ও কুপিয়ে জখম করে ডালিম ও তার সন্ত্রাসী বাহিনীর সদস্যরা। ভাঙচুর করা হয় তাদের বাড়িসহ পাঁচটি বাড়ি। ১০ এপ্রিল দিবাগত রাত একটার দিকে শরবত খুলনা ২৫০ শয্যা হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। মৃত্যুর খবর ছড়িয়ে পড়ায় গ্রামের ক্ষুব্ধ মানুষজন ডালিম ও তার কয় সহযোগীদের বাড়ি ভাঙচুর করে। নিহত শরবতের ছেলে সবজু বাবাকে হত্যার অভিযোগে ১১ এপ্রিল শনিবার রাতেই ডালিমকে প্রধান আসামী করে ৫৭ জনের নাম উলে­খ করে থানায় মামলা করে। এ ছাড়াও টগরকে হত্যার চেষ্টা ও ডালিমের বাড়ি ভাঙচুরের ঘটনায় ভাই ওবায়দুল­াহ ডাবলু বাদি হয়ে দু’টি ও মুক্তিযোদ্ধা শেখ নুরুল এর বাড়ি ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় তার স্ত্রী জামেলা বেগম বাদি হয়ে আরো একটি মামলা করে।

আওয়ামী লীগের দু’ গ্রুপের সংঘর্ষে শরবৎ হত্যা, উভয়পক্ষের ১০ জন আহত ও কমপক্ষে ১০টি বাড়িতে ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনায় চারটি মামলায় ১৩৮ জন আসামী করা হয়। মামলাটি ৭ মে থানা পুলিশ থেকে গোয়েন্দা পুলিশে স্থানান্তর করা হয়। মামলার তদন্ত ভার পান গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক জহিরুল হক। ওই বছরের ২৮ সেপ্টেম্বর সোমবার দিবাগত রাত একটার দিকে শরবৎ হত্যা মামলার প্রধান আসামী ডালিমকে ঢাকার খিলখেত এলাকার নিজস্ব বাসা থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। ৩০ সেপ্টেম্বর তাকে আদালতের মাধ্যমে জেল হাজতে পাঠানো হয়। মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা ২ অক্টোবর তাকে জিজ্ঞাসাবাদের জন্য আদালতে ১০ দিনের রিমাণ্ড আবেদন জানালে তিন দিন মঞ্জুর হয়। রিমাণ্ড চলাকালিন জিজ্ঞাসাবাদে শরবত হত্যাসহ টুম্পা খাতুনকে ধর্ষণের পর গায়ে পেট্রোল ঢেলে আগুন লাগিয়ে হত্যা, মহিলা ইউপি সদস্য নাছিমা খাতুনকে ধর্ষণ চেষ্টা, আশাশুনি উপজেলা হিন্দু মহাজোটের সাধারণ সম্পাদক ফটিকখালি গ্রামের সুজন সানাকে ২০১৯ সালের ২২ মার্চ কুপিয়ে জখম করাসহ তার বিরুদ্ধে থাকা প্রায় এক ডজন মামলা সম্পর্কে চাঞ্চল্য তথ্য দেন শাহানেওয়াজ ডালিম। টুম্পা হত্যা মামলাটি বর্তমানে সাতক্ষীরা পিবিআই এর পুলিশ পরিদর্শক সঞ্জয় কুমার দত্ত তদন্ত করছেন। অবশেষে গত বছরের ১৭ ফেব্রুয়ারি শরবত মোল­া হত্যা মামলার তদন্তকারি কর্মকর্তা গোয়েন্দা পুলিশের পরিদর্শক জহুরুল হক আদালতে ডালিমসহ ৩০ জনের নাম উলে­খ করে ২৭ জনকে অব্যহতি দিয়ে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করেন। অভিযোগপত্রে পিসিপিআর হিসেবে আশাশুনি ও সাতক্ষীরায় ডালিমের বিরুদ্ধে দায়ের হওয়া এক ডজন মামলার জিআর নাম্বার উল্লেখ করা হয়। পরবর্তী ধার্য দিনে আদালত অভিযোগপত্র দাখিলের বিষয়টি বাদিকে অবহিত করতে নির্দেশ দিয়ে ১৬ মে দিন ধার্য করেন। সে অনুযায়ি বাদি সবুজ হোসেন মোল­া সোমবার আদালতে হাজির হয়ে অভিযোগপত্র আমলে নিতে তার কোন আপত্তি নেই বলে আদালতকে অবহিত করেন।

শরবত হত্যা মামলাটির (জিআর ১০৮/২০ আশাশুনি) অভিযোগপত্র আমলে নিয়ে বিচারের জন্য জেলা ও দায়রা জজ আদালতে পাঠানোর আদেশ সম্পর্কে নিশ্চিত করেছেন সাতক্ষীরার আদালত পুলিশ পরিদর্শক মাহবুবর রহমান।

(আরকে/এএস/মে ১৬, ২০২২)