এস এম মুকুল : বইমেলা এখন আমাদের প্রাণের মেলা। এই বইমেলার সঙ্গে আমাদের ভাষা ও বর্ণমালার যোগসূত্র। বইয়ের সাথে মানুষের প্রীতিময় সম্পর্র্ক অত্যন্ত নিবির এবং প্রাচীন। বই পড়ার অভ্যাস সারা বছরের বিষয় হলেও বই পড়ার আকাক্সক্ষা পূর্ণতা পায়  যেন বইমেলায় এসে।

 

আমাদের সাহিত্য-সংস্কৃতিচর্চার সর্বোত্তম জায়গা পরিবার। সেখান থেকেই তৈরি হবার কথা বই পড়ুয়া প্রজন্ম। সময়ের সাথে আমরা যেন সংস্কৃতি চর্চা থেকে দূরে সরে যাচ্ছি। অপসংস্কৃতির ভর আমাদের মনে বাসা বাঁধতে শুরু করেছে। একারণে সমাজে ফুলে ফেঁপে উঠছে অস্থিরতা। শূন্যতা, হাহাকার ধ্বংস করতে বসেছে আমাদের সৃজনী ক্ষমতা আর মানবিক মূল্যবোধকে। তবুও একথা সত্য যে স্বাধীনতা অর্জনের ৪০ বছরে এইসব জরাজীর্ণতার মধ্য দিয়েই তৈরি হয়েছে লাখো লাখো তরুণ পাঠক। বইয়ের মাধ্যমে বোধ পরিবর্তনের এই আন্দোলনে ভুমিকা রেখেছে আমাদের বাংলা একাডেমী, লেখক, প্রকাশক সর্বোপরি প্রাণের প্রিয় এই বইমেলা। বইমেলার মধ্যে দিয়ে বই কেনা, উপহার দেয়া এবং বই পড়ার অভ্যাস বাড়ে। এই ধারাবাহিকতা আমাদের এগিয়ে নিচ্ছে এতে কোনো সন্দেহ নেই। তবে পাঠক ধরে রাখা এবং নতু পাঠক শ্রেণী সৃষ্টির ক্ষেত্রে প্রকাশক, লেখক ও বাংলা একাডেমীকে নতুন যুগোপযোগি উদ্যোগ নিতে হবে।

বইমেলার প্রাণ কেন্দ্র বাংলা একডেমী

বাংলা একাডেমী অমর একুশে বইমেলার প্রাণকেন্দ্র হিসেবে পরিণত। একটি ঐতিহাসিক প্রেক্ষাপটের সূত্রে এই স্থানটির প্রতি মানুষের আবেগ-অনুভুতি কাজ করে। বইমেলা বলতে এখন দোয়েল চত্বর সংলগ্ন বাংলা একাডেমীকেই বোঝায়। রিক্সা চালক থেকে শুরু করে সবাই স্থানটিকে চেনেন এই পরিচয়ে। নিরাপত্তার দিক দিয়েও জায়গাটি ভালো। নানান কারণে জাতির কাছে এই জায়গাটির অন্যরকম এক গুরুত্ব এবং আবেদন আছে। কয়েক বছর ধরে বইমেলার জন্য বিকল্প স্থানের কথা বলাবলি হচ্ছে। পক্ষে বিপক্ষে যুক্তিযুক্ত মতান্তরও রয়েছে। একথা সত্যি যে, আমাদের বইমেলার পরিসর অনেক বড় হয়েছে। পক্ষান্তরে বাংলা একাডেমীর এই ক্ষুদ্রায়তনে ভবিষ্যৎ মেলার আয়োজন কতটা সম্ভব- এটা ভাবনীয় বিষয় হয়ে দাঁড়িয়েছে। সে বিবেচনায় বইমেলার বিকল্প জায়গা নির্ধারণ আবশ্যিক হয়ে পড়েছে। আবার অনেকে বলছেন- অন্য জায়গায় হলে বইমেলায় এ রকম লোক সমাগম হবে কিনা সন্দেহ রয়েছে। কারণ এই জায়গাটির সঙ্গে বাঙালির হৃদয়ের একটা অন্যরকম টান আছে। এক বিবেচনায় কালের ধারাবাহিকতা এবং জায়গাটির সম্মান রক্ষায় এখানেই মেলার আয়োজন করতে হবে। এক্ষেত্রে ভবিষ্যতে হয়তোবা দোতলা স্টল তৈরির কথাও ভাবতে হবে। অন্য বিবেচনায়- দেখা যাচ্ছে আমাদের প্রকাশনা শিল্প দিনকে দিন সমৃদ্ধ হচ্ছে। বাড়ছে প্রকাশনা সংস্থা। বাড়ছে তরুন পাঠক, বাড়ছে তাদের আগ্রহ। তাহলে এই জায়গায় কি করে মেলার আয়োজন সম্ভব হবে? বিভিন্ন সময় প্রস্তাব এসেছে টিএসটি চত্বও বা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় অথবা একাডেমির পাশের উদ্যোনের ভেতর খালি জায়গার কথা। সব কিছুই ভাবনীয় বিষয়। আরো বিস্তর ভাবনা চিন্তা, মতবিনিময় করে একটি জনমত তৈরি করা দরকার। আরেকটি কথা বলতে চাইÑ বইমেলায় প্রবেশের জন্য প্রকাশক বা সংস্থার সদস্যদের প্রবেশপত্র দেয়া হয়। ফলে তারা ইচ্ছেমতো যাওয়া-আসা করতে পারেন। কিন্তু লেখক বা প্রচ্ছদ শিল্পীদের জন্য তেমন কোনো ব্যবস্থা না থাকায় যথেষ্ট সময় নস্ট করে এবং অনেক ঝক্কি পার হয়ে মেলায় আসা-যাওয়া করতে হয়। আশাকরি পরবর্তী মেলা থেকে বাংলা একাডেমী এসব বিষয় বিবেচনায় আনবে।

লেখক-প্রকাশকের সম্মিলনী

বই প্রকাশ, বইমেলা ইত্যাদিকে কেন্দ্র করে প্রকাশনা শিল্পটি লেখক-প্রকাশকদের মিলনমেলায় পরিণত। ইতিহাসের ধারাবাহিকতা পর্যালোচনা করলে দেখা যাবে- প্রকাশনা শিল্পকে আজকের অবস্থানে নিয়ে আসা, বইমেলার সফল আয়োজন এবং লেখক সৃষ্টিতে প্রকাশকদের বিরাট ভুমিকা রয়েছে। সে হিসেবে প্রকাশকেরা সমাজ এবং রাষ্ট্রের কাছ থেকে কি মূল্যায়ন পাচ্ছে? এই বাংলাবাজারের প্রকাশনালয়ে এমনসব প্রকাশক রয়েছেন যারা একজীবনে এই শিল্পের পৃষ্ঠপোষকতার পাশাপাশি অসংখ্য জনপ্রিয় লেখক তৈরি করেছেন। সেইসব প্রকাশকদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি চাই। একজন সংগীত শিল্পীর যেমন সন্মান আছে, তেমনি আছে একজন গীতিকারে। তাহলে লেখকের স্বিকৃতির পাশাপাশি প্রকাশকের স্বীকৃতি সময়ের দাবি। তবে বলতে অসংকোচে বলতে চাই- এই বাংলাবাজারে কিছু অপেশাদার প্রকাশকের অনুপ্রবেশ ঘটেছে। যারা অজ্ঞানতা আর সৃজনশীল দৃষ্টিভঙ্গীর অভাবে এই শিল্পটিকে প্রশ্নবিদ্ধ করছে। এজন্য প্রকাশনা সংস্থার গ্রেডিং পদ্ধতির প্রবর্তন করা দরকার। গ্রেডিং পদ্ধতি কয়েকটি ধাপে হতে পারে, যেমন- সৃজনশীল, শিশু সাহিত্য, কিশোর সাহিত্য, গবেষণা-প্রবন্ধ ও তাত্বিক, সংস্কৃতি ও মুক্তিযুদ্ধ, বিজ্ঞান, শিল্পকলা প্রভৃতি। এই পদ্ধতির প্রবর্তন হলে পাঠক লেখকরাও উপকৃত হবেন। বলা প্রয়োজন, অনেক প্রকাশকের বিরুদ্ধে অভিযোগ আছে যে- তারা বই প্রকাশের ক্ষেত্রে লেখকের সাথে কোনো চুক্তিপত্র করেন না। বই প্রকাশের প্রকৃত সংখ্যার তথ্য গোপন করেন। লেখককে তার প্রাপ্য সম্মান ও সম্মানী দিতে চান না। লেখকের অনুমতি ছাড়া পুণঃমুদ্রণ বা সংস্করণ প্রকাশ করেন। আবার এমন অভিযোগও আছে যে- লেখকের অনুমতি ছাড়া গ্রন্থস্বত্ব প্রকাশকের নামে নিয়ে যান। অধিকাংশ ক্ষেত্রে নবীন লেখকের বেলায় এমনটি ঘটে। শিল্পের স্বার্থে প্রকাশকদের এমন হীন মানসিকতার পরিবর্তন করা অত্যন্ত মানবিক দাবি।

বেড়েছে শিল্পের নান্দনিকতা

আমাদের প্রকাশনা শিল্পের নান্দনিকতা বেড়েছে বহুগুণে। বই প্রকাশের মান, বিষয় নির্বাচনে এসেছে বৈচিত্র। বইয়ের নামকরণেও আধুনিকতা এবং শিল্পমাত্রায় যোগ হয়েছে নতুন আঙ্গিক। বই বাঁধাইয়ের মান অনেক উন্নত হয়েছে। প্রচ্ছদ অঙ্কনে বিরাট পরিবর্তন এসেছে গত এক দশকে। তরুণ প্রচ্ছদ শিল্পীরা বিষয়-সাহিত্য এবং ভাবনাজগতের চমৎকার সমন্বয় করছেন। এখনকার প্রচ্ছদগুলোতে রঙের বৈচিত্রময় খেলা পাঠকদের কাছে টানছে। লেখকরা তাদের লেখায় সময়কে ধরে রাখার এবং সময়ের সাথে চলার প্রত্যয় নিয়ে কাজ করছেন- এতে কোনো সন্দেহ নেই। তরুণ, উদীয়মান নবীন লেখকরা তাদের সাহিত্য রচনায় প্রযুক্তির অগ্রগতিকে যোগসূত্র হিসেবে নতুন নতুন আঙ্গিকে প্রকাশ করছেন। তরুণ প্রকাশকের সংখ্যা বাড়ছে। চিন্তায়-চেতনায় তরুণ প্রকাশকেরা প্রকাশনার শিল্পকে অনেকদূর এগিয়ে নিয়ে এসেছেন। সর্বোপরি শিল্পের নান্দনিকতাকে সঙ্গী করে এগিয়ে যাচ্ছে আমাদের প্রকাশনা শিল্প।

প্রশ্ন আছে শিশুতোষ প্রকাশনা নিয়ে

আমি একটি সেমিনারে অংশ নিয়েছিলাম। আয়োজকরা শিশুদের প্রকাশনার ধরণ পাল্টানোর মিশন গ্রহণ করেছেন বলে মনে হলো। দশ লাইনের একটি লেখা আড়াই পৃষ্ঠার বুক সাইজ ছবি দিয়ে তিন পৃষ্ঠার দৃষ্টিনন্দন ষ্টোরি বানিয়ে তারা এই শিল্পের নয়া দিকপাল হতে চান। দৃষ্টিভঙ্গীর অমিল থাকায় তাদের সাথে আমার কাজ করা হয়নি, দুর্ভাগ্য আমার। বিদেশি ডোনারের টাকা খরচের খাত দেখানোর ক্ষেত্রে তাদের পদ্ধতিটির উপযোগিতা ঠিক আছে। কিন্তু আমাদের প্রকাশনা শিল্পের জন্য এটি উপযোগি নয়। কারণ এখানে বিদেশি ডোনেশন নেই। প্রকাশকেরা নিজেদের বিনিয়োগে বই প্রকাশ করেন। তাদেরকে মাথায় রাখতে হয়-দেশের ক্রেতা পাঠকের আর্থিক সামর্থ্যরে বিষয়টি। তারপরও বলব, আমাদের দেশে শিশুদের উপযোগি মানসম্পন্ন বই খুব বেশি প্রকাশিত হচ্ছেনা। শিশুতোষ প্রকাশনাগুলোর বিষয় নির্বাচন, মান, লেখার দৈর্ঘ্য, অলঙ্করণ, কালার প্রভৃতি বিষয়ে প্রকাশনা শিল্পের মনোযোগ কম লক্ষ্যণীয়। ডরিমন, পকিমনের ছবি দিয়ে যেসব বই প্রকাশিত হতে দেখা গেছে সেগুলোতে কাটপিসের প্রমাণ যেন ষ্পষ্টভাবে ফোটে উঠেছে। কেন জানিনা, আমাদের দেশে শিশুতোষ বইগুলো তেমন চাকচিক্য হয়না। শিশুতোষ বই হওয়া উচিত উন্নত কাগজের রঙিন অঙ্কন চিত্র সম্বলিত চকচকা রঙময়। প্রকাশের খরচ বেড়ে যাওয়াটা অবশ্য এক্ষেত্রে একটা বড় বিষয়। তবু ব্যাপারটি নিয়ে আরো আরো ভাবতে হবে। প্রজন্মের মেধা, মননশীলতা বিকাশের জন্য সুন্দর সুন্দর বৈচিত্রময় বিষয়ে তথ্যমূলক, ছবি সমৃদ্ধ কালারফুল ঝকঝকে বই প্রকাশ করা উচিত।

আমাদের বাংলাবাজার

বাংলাদশেরে বইয়রে বৃহত্তম র্মাকটে বাংলাবাজার। বাংলাদশেরে প্রকাশনা ব্যবসা আর্বতীত হচ্ছে এই বাংলাবাজারকে কেন্দ্র করে। ত্রিশ দশকে ১০-১২টি বইয়ের দোকান দিয়ে যাত্রা শুরু হলওে বাংলাবাজারে এখন এ সংখ্যা প্রায় তিন হাজার। দশেরে সাত হাজার ছাপাখানায় ছাপা হওয়া বই দশেরে বভিন্নি স্থানে ছড়িয়ে যায় এই বাংলাবাজার থকেইে। প্রকাশনা শিল্পের ভিত্তিভূমি এই বাংলাবাজার। এখান থেকেই এত এত সুন্দর, সৃজনশীল, ঐতিহ্যবাহী, নান্দনিক বই প্রকাশ এবং বাজারজাত করা হয়। কিন্তু এই বাংলাবাজরের পরিবেশ, অবকাঠামো এত অসুন্দর যে দুটি বিষয়কে পরস্পর বিরোধী মনে হয়।

বাংলাবাজারে সিংহভাগ প্রকাশনা সংস্থার অফিস ও বিক্রয়কেন্দ্র। সেখানে প্রকাশক ব্যতিত অন্যান্য যারা কাজ করেন তাদের অনেক ক্ষেত্রেই বেমানান মনে হয়। ব্যবহার, সৌজন্যবোধ, শিষ্টাচার এসব কিছু এই সৃজনশীল অফিসগুলোর অনেক জায়গাতেই নেই। একটি সমৃদ্ধ সৃজনশীল জায়গার মানুষগুলো সুন্দর হওয়া কাম্য নয় কি?

প্রকাশনা শিল্পের বিকাশে সরকারের দায়িত্ব

সরকারের বিবেচনায় আনা উচিত যে, আমাদের দেশে সৃজনশীল ও একাডেমিক প্রকাশনা শিল্পের কেন্দ্রবিন্দু বাংলাবাজার। এই বাংলাবাজারে ৫০ হাজারের বেশি লোকের কর্মসংস্থান। সারাদেশে প্রকাশনা শিল্পের সাথে জড়িত জনশক্তি ৫ লাখের বেশি। গত ৬০ বছর ধরে সদরঘাট সংলগ্ন বাংলাবাজারে বাংলা বইয়ের প্রকাশনা ঐতিহ্য গড়ে উঠেছে। এই বাংলাবাজারে প্রায় ২ হাজারের বেশি প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান এবং ৪ হাজারের বেশি বই বিক্রির দোকান রয়েছে। এছাড়া সারা দেশে পাইকারি পুস্তক বিক্রেতার সংখ্যা ১০ হাজারের বেশি এবং খুচরা ১৫ হাজারের বেশি পুস্তক বিক্রেতা রয়েছেন। শুধু এরা নন, প্রকাশনার সাথে জড়িত লেখক, প্রকাশক, সম্পাদক, প্রুফ রিডার, কম্পোজিটর এবং ডিজাইনার। যাদের অক্লান্ত পরিশ্রমে চলছে এই প্রকাশনার বৃহৎ কার্যক্রম। সারাদেশে পাওয়া যাচ্ছে বই। অথচ এ নিয়ে সরকারের কোনো মাথাব্যাথা নেই। নেই সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা। প্রকাশকদের দাবি কম দামে পাঠকরে হাতে বই তুলে দিতে দেশে প্রকাশিত বইয়রে ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার করতে হবে।

দেখা গেছে, বাংলাদশেরে জলো-উপজলোর পাঠাগার ও স্কুল-কলজেরে লাইব্ররেগিুলি জরার্জীণ হয়ে অচলাবস্থায় পড়ে আছে। সরকার চাইলেই এই লাইব্রেরী ও পাঠাগারগুলোকে জাগিয়ে তুলতে পারে। এই একটি উদ্যোগ নিলে বাংলাবাজারের প্রকাশনা শিল্প প্রাণ ফিরে পাবে বলে অনেকের অভিমত। প্রকাশনা শিল্পের বিকাশে প্রকাশকের জন্য সহজশর্তে নামমাত্র সুদে ব্যাংক লোন সুবিধা দেয়া যেতে পারে। এক্ষেত্রে বাংলা একাডেমী সমন্বয়কের ভুমিকা নিতে পারে। সরকার তার বিভিন্ন প্রকল্পের মাধ্যমে বই কিনতে পারে। সরকারের মন্ত্রণালয়ের পক্ষেও বই কিনতে পারে। সাহত্যিগ্রন্থের পাশাপাশি নানান স্বাদ ও রুচরি বিচিত্র বইয়ের সরকারি উদ্যোগে সরকারের সংশ্লিষ্ট অফিসগুলোর জন্য কিনতে পারে।

প্রকাশনাকে শুধুমাত্র একটি শিল্প হিসেবে দেখলে ভুল হবে। জাতি গঠনে এবং সৃজনশীল সংস্কৃতির সম্প্রীতি ঘটাতে এই শিল্পে ভুমিকা অগ্রগণ্য। এমন একটি শিল্পের প্রতি সরকারের উদাসীনতা কাম্য হতে পারেনা। সৃজনশীল প্রকাশনার প্রথম ক্রেতা হতে হবে সরকারকে। সরকার ক্রেতা হয়ে বই পঠনকে জনপ্রিয় করে তুললে প্রজন্মের মাঝে সৃষ্টিশীল নেতৃত্ব তৈরি হবে। সামাজিক অসঙ্গতি ও সংঘাত কমবে। এ কাজে সরকারেরই লাভ বেশি। একটি সরকার তার পাঁচ বছর ক্ষমতার মেয়াদে দশ কোটি করে পঞ্চাশ কোটি টাকার বই কিনলে পাল্টে যাবে প্রকাশনা শিল্পের অবয়ব। লেখক, পাঠক তৈরি হবে লাখো কোটি। এগিয়ে যাবে দেশ এবং জাতি। তবে সরকারের ক্রয় নীতিতে রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করতে হবে। তা না হলে প্রকাশনার মান ধরে রাখা সম্ভব হবেনা। সরকার পৃষ্ঠপোষক হলে দ্রুততম সময়ে বিকশিত হবে এই সম্ভাবনাময় শিল্পটি। প্রতিষ্ঠিত হবেন লেখক এবং বাড়বে বইয়ের বাজার।

লেখক : প্রাবন্ধিক ও কলাম লেখক