রঘুনাথ খাঁ, সাতক্ষীরা :  ১১ বছরের দু’ শিশুর বিরুদ্ধে দায়েরকৃত দ্বিতীয় শ্রেণীর স্কুল ছাত্রী ধর্ষণ চেষ্টার মামলার বাস্তবতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। পঞ্চম শ্রেণীর দু’ শিক্ষার্থীর বরাত দিয়ে যে ধর্ষণ চেষ্টার ঘটনার কথা বলা হয়েছে তার মধ্যে মূল সাক্ষী ঘটনার কথা অস্বীকার করেছে।

এদিকে ধর্ষণের চেষ্টার ঘটনায় দায়েরকৃত মামলার ভিকটিমকে আদালতের নির্দেশে সোমবার সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ডাক্তারি পরীক্ষা শেষে জ্যেষ্ট বিচারিক হাকিম ইয়াসমিন নাহার ২২ ধারায় তার জবানবন্দি রেকর্ড করেছেন।

সরেজমিনে সোমবার দুপুরে হাওয়ালখালি গ্রামে গেলে ধর্ষণের চেষ্টা হওয়া দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রীর বাবা ও সৎ মা বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। নির্যাতিতা ওই ছাত্রীর বাবা বলেন, কাওনডাঙা মীর্জানগর সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের পঞ্চম শ্রেণীর স্কুল ছাত্রী স্কুল ছাত্রী ও ওই গ্রামের শাহজামালের মেয়ে আাঁখি একই গ্রামের ও একই স্কুলের সহপাঠী আরিফার দেওয়া তথ্য মতে আসিফ ও রফিকুল তার মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টার করার বিষয়টি জানতে পারেন। প্রতিবাদ করতে গেলে রফিকুলের মা রফিকুলকে চড় থাপ্পড় মারলেও টুটুল বিশ্বাসের বাড়িতে যেয়ে ছেলে রফিকুলের বিরুদ্ধে অভিযোগ করা মাত্র তাদের উপর হামলা চালায় রওশানারা ও সুককুল বেগম। এ সময় তার মা গুরুতর জখম হলে তাকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। যদিও স্থানীয়রা জানান, মেয়েকে ধর্ষণের চেষ্টার প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে উভয়পক্ষের কথা কাটাকাটির একপর্যায়ে মারপিটের ঘটনা ঘটে।

এদিকে প্রত্যক্ষদর্শী আরিফা খাতুন জানায়, সে কিছু জানে না । সে কিছুই দেখেনি ও আঁখিকে কিছুই বলেনি।
তবে শাহজামালের বাড়িতে গেলে তার মেয়ে আখি জানায়ম সে শুক্রবার বিকেল ৫টার দিকে আব্দুস সবুরের দোকান থেকে খাবার কিনে বাড়ি ফেরার সময় আরিফা তাকে ডেকে বলে যে, কয়েকজন খেলাধুলার একপর্যায়ে কিসলুর নির্মানাধীন বাড়ির মধ্যে ডেকে নিয়ে খেলার একপর্যায়ে রফিকুল ও আসিফ ভাটা শ্রমিকের মেয়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টা করেছে। এ ছাড়া মামলায় বর্ণিত সাক্ষী রাবি, সাবিনা ও খালেক কিছুই জানে না বলে সাংবাদিকদের জানান।

এদিকে স্থানীয়ভাবে জানা গেছে নির্যাতিতা ৮ বছরের ছাত্রীর বাবা একজন ভাটা শ্রমিক। এ পর্যন্ত তিনি ভাটায় কাজ করতে যেয়ে একের পর এক বিয়ে করেছেন। এক এক স্ত্র কে একটি সন্তানসহ তালাক দিয়েছেন। নির্যাতিতা ওই ছাত্রীর মা ওই ভাটা শ্রমিকের দ্বিতীয় স্ত্রী। এ ছাড়াও সর্বশেষ ওই ভাটা শ্রমিক সিলেট জেলার সুনামগঞ্জ উপজেলার হরিনাকাটি গ্রামের এক স্বামী পরিত্যক্তা নারীকে বিয়ে করেছেন। বিয়ের পর তাদের আট মাসের এক শিশু পুত্র আছে।

তবে স্থানীয়রা মনে করেন, যে মেয়েটির বরাত দিয়ে অপর মেয়ে ওই দ্বিতীয় শ্রেণীর ছাত্রীকে ধর্ষণের চেষ্টার কথা বলেছে সেটা যথাযথ যাঁচাই না করে ওই মেয়ের স্বজনদের রফিকুল ও কাশেমের বাড়িতে প্রতিবাদ করতে যাওয়ার নামে চড়াও হওয়া সঠিক হয়নি। স্থানীয়ভাবে বাস্তব ঘটনা জানার পর মামলা করা উচিত ছিল। তা ছাড়া যারা ওই সময় খেলা করছিল তাদের কোন ছেলে বা মেয়েই এ ধরণের ঘটনা জানে না। শুধুমাত্র মারপিটের ঘটনা সম্পর্কে যারা জানে তাদেরকেই সাক্ষী করা হয়েছে। তবে একটি তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে ধর্ষণের চেষ্টার মামলা হওয়া দু’ শিশুর জন্য ক্ষতিকারক।

প্রসঙ্গত, ড়ত ১৩ মে বিকেলে খেলা করার একপর্যায়ে দ্বিতীয় শ্রেণীর এক স্কুল ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে পরদিন হাওয়ালখালি গ্রামেরজ এক ভাটা শ্রমিকের দায়েরকৃত মামলায়(জিআর-৩৭৭/২২ নং) পুলিশ রফিকুল ও আসিফ নামেকেজন পঞ্চমস শ্রেণীর ছাত্র ও একই সাথে পড়াশুনাকারি দিনমজুর শিশুকে পুলিশ গ্রেপ্তার করে আদালতের মাধ্যমে যশোর পোলেরহাট শিশু- কিশোর সংশোধনাগারে পাঠায়। নির্যাতিত মেয়েটির পরিবারের সদস্যদের উপর হামলার অভিযোগে আসিফের মা রওশানারাকে জেলখানায় পাঠানো হয়েছে।

(আরকে/এসপি/মে ১৭, ২০২২)