আবীর আহাদ


মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্ব প্রদানকারী বর্তমান দোর্দণ্ড ক্ষমতার অধিকারী আওয়ামী লীগ এখন সম্পূর্ণভাবে আপোসের চোরাবালিতে আটকে গেছে বলে মনে হয়! রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ও আর্থিক লিপ্সায় সে হারিয়ে ফেলেছে তার আদর্শিক, সংগ্রামী, চৈতনিক ও নৈতিক শক্তি। তাইতো তার শাসনামলে স্বাধীনতাবিরোধী ধর্মান্ধ সাম্প্রদায়িক অপশক্তি কর্তৃক উপর্যুপরি জাতির পিতাকে অপমান করা হলেও সে নীরব! জাতীয় চার মূলনীতিমালাকে কুফরি মতবাদ ও জাতীয় সংবিধানকে অবমাননা করা  হলেও সে নীরব! জাতীয় পতাকার প্রতি অসম্মান  ও জাতীয় সঙ্গীতকে অস্বীকার করা হলেও সে নীরব! স্বাধীনতার রূপকার বীর মুক্তিযোদ্ধাদের অসম্মান করা হলেও সে নীরব!

বিশেষ করে সাম্প্রতিক জনৈক আলেম নামধারী একাত্তরের রাজাকার শাবক, উগ্রবাদী ও ধর্ষক হেফাজতি মাওলানা মামুনুল হকের ভগ্নিপতি, একই উগ্রবাদী অপচেতনার ধারক-বাহক তথাকথিত মাওলানা এনায়েতউল্লাহ আব্বাসী দেশের মধ্যে অস্হিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি করে দেশকে গৃহযুদ্ধের মধ্যে নিক্ষেপ করার লক্ষ্য নিয়ে বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জঙ্গি বলে অভিহিত করলেও আওয়ামী লীগ নীরব।

সবকিছু দেখেশুনেবুঝে এটাই প্রতীয়মান হচ্ছে যে, আওয়ামী লীগ এখন সম্পূর্ণভাবে চেতনাহীনতার অন্ধতিমিরে হারিয়ে গেছে! ফলে এতসব দেখেও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার ধারক-বাহক আওয়ামী লীগ সরকারের কোনোই প্রতিক্রিয়া নেই! মূলত: নেতৃত্বের অপরিসীম লোভ-লালসার কারণে সে তার আদর্শিক চৈতনিক ও নৈতিক চেতনা হারিয়ে ফেলেছে যা আগেই বলেছি। দলটির ইউনিয়ন, উপজেলা, জেলা ও কেন্দ্রীয় অধিকাংশ পদগুলোতে স্থান করে নিয়েছে বিএনপি জামায়াত হেফাজত শিবির ফ্রিভমপার্টি তথা রাজাকার আলবদরদের পোলাপানসহ সমাজবিরোধী, নানান অপরাধ মামলার আসামি, দুর্নীতিবাজ ও লুটেরাদের থেকে আগত লোকজন। আর এদেরকে দলে ঢুকিয়েছে দলের হাইকমান্ডসহ তাদেরই প্রিয়ভাজন নিম্নস্তরের নেতৃবৃন্দ। ফলে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ ও মুক্তিযুদ্ধের চেতনার আওয়ামী লীগাররা উক্ত হাইব্রিড নেতৃত্বের কনুইয়ের ধাক্কায় ছিটকে পড়ে গেছে! শুধু দলেই নয়, তার সরকারের এমপি মন্ত্রী ও উপদেষ্টা পরিষদের দিকে তাকালে দেখা যায়, সেখানে মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধীদের অবস্থান বেশ রমরমা!

অতএব সঙ্গত কারণে প্রশ্ন আসে, আসলে এটা কোন আওয়ামী লীগ যে, তার কাছে বঙ্গবন্ধুর আদর্শ, মুক্তিযুদ্ধের চেতনা, বীর মুক্তিযোদ্ধাদের মর্যাদা ও জাতীয় সংবিধানের অবমাননা তার কাছে এখন মুখ্য নয়? তার মূল লক্ষ্য স্বাধীনতাবিরোধী মৌলবাদী সাম্প্রদায়িক অপশক্তিসহ দুর্নীতিবাজ লুটেরা ও মাফিয়াদের সাথে আপোস করে যেনতেনভাবে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় টিকে থাকা? এসব সন্দেহ ও প্রশ্ন দেশের সচেতন মানুষের মনে উদয় হলেও আওয়ামী লীগ গভীর নীরবতা পালন করে আসছে! সুতরাং দেশের মানুষের মনের এসব চিন্তা দূরীভূত করার লক্ষ্যে আওয়ামী লীগকে আত্মসমালোচনা আত্মোপলব্ধি ও আত্মশুদ্ধি করতে হবে।

লেখক :মুক্তিযোদ্ধা লেখক গবেষক।