জে.জাহেদ, চট্টগ্রাম : চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন ইজারাকৃত যাত্রীসেবার একটি নাম ‘জুলধা ডাঙারচর ঘাট’। এই ফেরিঘাটে প্রতিদিন আয় হচ্ছে ২০ থেকে ২৫ হাজার টাকা। মাসে ৬ লাখের উপরে। তবুও ডিজেলের দাম বৃদ্ধির অজুহাত দেখিয়ে একলাফে ভাড়া বৃদ্ধি করে যাত্রী হয়রানির পাঁয়তারা করছেন বলে সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অভিযোগ পাওয়া গেছে। 

যাত্রীরা বলছেন, ঘাটের মানুষদের দুর্ভোগকে পুঁজি করে এসব ইজারাদারদের স্বেচ্ছাচারী আচরণ। যা কখনো মেনে নেওয়া হবে না। কারণ জনগণের মাঝে ক্ষোভের সৃষ্টি হয়েছে। জানা যায়, চট্টগ্রাম কর্ণফুলী উপজেলার জুলধা ডাঙারচর ঘাটে কিছুদিন আগে সাধারণ যাত্রীরা প্রতিবাদ ও মানববন্ধন করেছেন।

তবুও ঘাটের ইজারাদার মোঃ ওসমানের নেতৃত্বে একটি সিন্ডিকেট ক্ষমতাসীন দলের নেতাকর্মীদের বাসায় বাসায় ধর্না দিচ্ছেন বলে খবর পাওয়া যায়। ফলে, সাধারণ জনগণ ও ঘাটের যাত্রীরা ইজারাদার ও নৌকার মাঝিদের রোষানলে পড়ার সম্ভাবনা তৈরি হয়েছে। এমনকি ঘটতে পারে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষও। যদিও সাধারণ মানুষ অতিরিক্ত ভাড়া দিতে রাজি না। তবুও ঘাটের ইজারাদার পক্ষের ওসমান সিন্ডিকেট কর্ণফুলী উপজেলা আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ইউপি চেয়ারম্যানসহ বিভিন্ন নেতাকর্মীদের কাছে তদবির চেষ্টা চালাচ্ছেন অভিযোগ সাধারণের।

অন্যদিকে বিশ্বস্ত সূত্রের তথ্য বলছে, কয়েক দফায় এসব নেতাদের বাসায় বৈঠকে করলেও হতাশ ইজারাদারপক্ষ। কেননা কিছুতেই নেতারা ভাড়া বৃদ্ধির পক্ষে মতামত দেননি। কারণ ঘাটটি সিটি কর্পোরেশন নিয়ন্ত্রণ করেন। অনেকেই আবার বলছেন, সামনে উপজেলা নির্বাচন। সাধারণ মানুষের বিপক্ষে গিয়ে ভাড়াবৃদ্ধির পক্ষে সায় দিলে পরবর্তীতে প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়াও এলাকার বেশির ভাগ মানুষ ভাড়া বৃদ্ধি হোক তা চান না। স্থানীয়রা জানান, গুটিকয়েক ইজারাদারকে খুশি করতে গিয়ে নেতারা যদি এলাকার পালস নষ্ট করেন। তাহলে সেটা বোকামী ছাড়া কিছুই হবে না।

জানা গেছে, কর্ণফুলী উপজেলার ওপাড়ে চট্টগ্রাম শহরের সল্টগোলা ঘাট। উপজেলার জুলধা ইউনিয়নের প্রায় বেশির ভাগ মানুষেরই ব্যবসা-বানিজ্য, চাকরি, স্কুল-কলেজ, চিকিৎসা সব শহর কেন্দ্রীক। তাই কর্ণফুলী নদী হয়ে নৌকায় তাদের শহরে পার হতে হয়। কিন্তু প্রতি বছরে ১/২ টাকা ভাড়াতে গিয়ে ৬ টাকার ভাড়া এখন ১০ টাকা দাঁড়িয়েছে। ১৫ লাখ টাকার ঘাট এখন ৩২ লাখ টাকায় ওঠেছে।

লোকমান হাকিম নামে এক যাত্রী বলেন, ‘নদী পার হওয়াটা এখন অনেক মুশকিল হয়ে গেছে। ঘাটে দুটি জরাজীর্ণ নৌকা। ঘাটের এক কূলে গেলে আসতে অনেক বেশি সময় লাগে। সেবা বলতে কিছু নেই ঘাটে। সেখানে আবার ভাড়া বৃদ্ধি করতে চায়। আমরা উপায়ন্তর না পেয়ে পেটের দায়ে নদী পার হয়ে কাজ করতে আসি। সে কথা কেউ খেয়াল রাখেন! তাঁরা বলেন, ‘তেলের দাম বৃদ্ধির কথা বলে এখন ভাড়া বাড়াতে চান। কিন্তু তেলের দাম দু’দফায় কমলে ভাড়া কি কমে। তাছাড়া ঘাটের ইজারাদারদের নিজস্ব নৌকা থাকার কথা থাকলেও তাদের কোন নৌকাই নেই। যে কারণে বিভিন্ন মাঝিদের উপর তাঁরা নির্ভরশীল।

সাব্বির নামে আরেক যাত্রী বলেন, ‘সিটি কর্পোরেশন ঘাট ইজারা দিয়ে চলে যায়। তাঁদের কখনো ঘাট সংস্কার করতে দেখিনি। চসিকের নীরবতায় ইজারাদারগণ বেপরোয়া ভাব দেখায়। মূলত নৌকার মাঝি ও ইজারাদারদের নৈরাজ্যগুলো স্থানীয় প্রশাসন দেখার কথা থাকলেও তাঁরাও আছে চুপচাপ। যে কারণে ইজারাদার সিন্ডিকেট অতিরিক্তি ভাড়া বাড়াতে সাহস করতেছে। কিন্তু জনগণ ক্ষেপে রয়েছে।’

নৌকার মাঝিরা বলছেন, ‘আগে জোয়ারের সময় নৌকা চালাতে হত। এখন ভাড়ার টানে উল্টো দিকে নৌকা নিয়ে যেতে হয়। স্রোতের বিপরীতে নৌকা বাইতে কষ্ট হয়। তেলও খরচ হয় বেশি। ভাড়া বেশি না নিলে আমরা চলবো কিভাবে? একই কথা বলেন, সল্টগোলার আরেক নৌকার মাঝি।’

ঘাটের ইজারাদার মোঃ ওসমান বলেন, ‘ আমরা ৩২ লাখ টাকায় ঘাটটি সিটি কর্পোরেশন থেকে ইজারা নিয়েছি। প্রতি বছর চসিক ১০ শতাংশ ভ্যাট বৃদ্ধি করে। এরমধ্যে তেলের দাম বৃদ্ধি। তাই দুই টাকা ভাড়া বাড়াতে চেয়েছিলাম। কিন্তু যারা টেন্ডারে ঘাট পায়নি তাঁরা বারবার ষড়যন্ত্র করছেন।’ প্রতিবেদক জানতে চাইলেন, চসিক কি ভাড়া বৃদ্ধি করতে কোন অনুমোদন দিয়েছে কিনা? তখন তিনি কোন সদৃত্তর দিতে পারেননি।

কর্ণফুলী উপজেলা নির্বাহী অফিসার শাহিনা সুলতানা জানান, ‘অতিরিক্ত ভাড়া নেওয়ার কোন সুযোগ নাই। কেন নিচ্ছে? কে নিচ্ছে এ ব্যাপারে খোঁজ নিয়ে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। আর পাশাপাশি চেষ্টা করবো বিষয়টি সিটি কর্পোরেশনকে জানাতে। যেহেতু ঘাটটি ইজারা প্রদান করে থাকে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন।’ একই কথা তিনি গত দু’বছর ধরে বলে আসলেও কোন পদক্ষেপ নিতে দেখেননি স্থানীয়রা।

চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা (সিআরও) মোঃ নজরুল ইসলাম বলেন, ‘জুলধা ডাঙারচর ঘাটের পক্ষে বিপক্ষে নানা অভিযোগ পাচ্ছি। বিষয়টি মিটিং এ কয়েকবার তোলা হয়েছে। এখন প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ জোরদার করা হবে।

(জেজে/এসপি/মে ২০, ২০২২)