গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু, ব্রাহ্মণবাড়িয়া : ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনে অগ্রণী ভূমিকা পালনকারী সেসময়ের অন্যতম নারীযোদ্ধা, অগ্নিকন্যা খ্যাত সুনীতি রায় চৌধুরীর স্মৃতি সংরক্ষণ করার জোর দাবী তুলেছেন বিশিষ্ট জনেরা। 

রবিবার রাতে অগ্নিকন্যা সুনীতি রায় চৌধুরীর ১০৬-তম জন্মদিন উপলক্ষে তাঁর স্মরণে এই প্রথমবারের মতো ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত একটি বিশেষ স্মরণ অনুষ্ঠানে বক্তারা এ দাবি তুলেন। ব্রাহ্মণবাড়িয়ার নবীনগর উপজেলার ইব্রাহিমপুর গ্রামের অগ্নিকন্যা খ্যাত সুনীতি রায় চৌধুরী কুমিল্লার ফৈজুন্নেছা গার্লস স্কুলে অষ্টম শ্রেণিতে অধ্যয়ণরত অবস্থায় মাত্র ১৪ বছর বয়সে তৎকালীন ব্রিটিশ শাসনামলে ১৯৩২ সালে কুমিল্লার ডিস্ট্রিক্ট ম্যাজিস্ট্রেট স্ট্যালিনকে গুলি করে হত্যা করে চারিদিকে হৈচৈ ফেলে দিয়েছিলেন। পরে সুনীতি ও তাঁর বান্ধবী শান্তি ঘোষকে ব্রিটিশ সরকার তাঁদের বয়স কম থাকায় মৃত্যুদন্ডের পরিবর্তে যাবজ্জীবন কারাদন্ড প্রদান করে।

নবীনগরের সন্তান, সেই বহুল আলোচিত অগ্নিকন্যা সুনীতি রায় চৌধুরী স্মরণে তাঁর ১০৬ তম জন্মদিনে এই প্রথমবারের মতো নবীনগর থেকে প্রচারিত দর্শকনন্দিত জনপ্রিয় নিউজ পোর্টাল নবীনগরের কথার ১৪৬-তম পর্বে এ স্মরণ অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়।

ভার্চ্যুয়ালি ওই লাইভ স্মরণ অনুষ্ঠানে গতকাল রাতে প্রায় দুঘন্টা ধরে বিশিষ্ট আলোচকেরা অগ্নিকন্যা সুনীতি রায় চৌধুরীর জীবনের নানা দিক তুলে ধরে ন এবং আয়োজনটির জন্য নবীনগরের কথার ভূয়সী প্রশংসা করেন।
দৈনিক বাংলা ৭১ এর বিশেষ প্রতিনিধি ও নবীনগরের কথার সম্পাদক গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপুর পরিকল্পনা ও সঞ্চালনায় ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত এই স্মরণ অনুষ্ঠানে অগ্নিকন্যার জীবনের বিভিন্ন দিক তুলে ধরে সারগর্ভ আলোচনা করেন নবীনগর পৌরসভার মেয়র ও ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা আওয়ামীলীগের সাংস্কৃতিক বিষয়ক সম্পাদক এডভোকেট শিব শংকর দাস, নবীনগর প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক ও নবীনগর মহিলা কলেজের অধ্যক্ষ কান্তি কুমার ভট্টাচার্য, কুমিল্লা আদর্শ সদর উপজেলা ভাইস চেয়ারম্যান ও সদর আওয়ামীলীগের সাধারণ সম্পাদক, নবীনগরের কৃতি সন্তান, সাবেক ছাত্রনেতা তারিকুর রহমান জুয়েল ও নারয়ণগঞ্জ থেকে প্রচারিত জনপ্রিয় নিউজ২৪ বিডির কর্ণধার, নবীনগরের সন্তান সিনিয়র সাংবাদিক সুভাষ সাহা।

ভার্চুয়াল এ স্মরণ অনুষ্ঠানে এক পর্যায়ে সঞ্চালক গৌরাঙ্গ দেবনাথ অপু ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম মহিয়সী এ নারীনেত্রী অগ্নিকন্যা সুনীতি রায় চৌধুরীসহ নবীনগরে জন্মনেয়া ক্ষণজন্মা প্রয়াত সকল কৃতী মানুষগুলোর জন্ম ও মৃত্যুদিনে তাঁদের স্মরণে আগামি দিনে মেয়রের উদ্যোগে 'স্মরণ অনুষ্ঠান' ও পৌর কার্যালয়ে তাঁদের প্রতীকি প্রতিকৃতি রেখে সেখানে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর প্রস্তাব তুলে ধরেন। এ সময় সঞ্চালকের এ দাবিটিকে সমর্থন করে অন্যান্য আলোচকেরাও জোরালো বক্তব্য রাখেন। পরে অনুষ্ঠানের অন্যতম আলোচক নবীনগর পৌরসভার মেয়র এডভোকেট শিব শংকর দাস নিজেও এ দাবির প্রতি শতভাগ সমর্থন জানিয়ে আগামি দিনে নবীনগরের সকল ক্ষণজন্মা কৃতি মানুষদের স্মরণে পৌর কার্যালয়ে তাঁদের প্রতিকৃতিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানানোসহ স্মরণ অনুষ্ঠান আয়োজন করা হবে বলে আনুষ্ঠানিক ঘোষণা দেন।

প্রসঙ্গত, 'ইংরেজ খেদাও' তথা স্বদেশী আন্দোলনের এই অন্যতম নারীযোদ্ধার পৈত্রিক বাড়ি নবীনগরের ইব্রাহিমপুরে থাকা তাঁর বংশের একমাত্র উত্তরসুরী মেঘু রায় চৌধুরীকে দেশ স্বাধীনের পর কে বা কারা হত্যা করে লাশটি পর্যন্ত গুম করে । এরপর অগ্নিকন্যার সেই বাড়িটি পরিত্যাক্ত অবস্থায় ইব্রাহিমপুরে এখনও পড়ে রয়েছে। বাড়িটি রক্ষা কিংবা তাঁর স্মৃতি রক্ষায় এখনও কোন উদ্যোগ নেয়া হয়নি।

সবচেয়ে আশ্চর্যের বিষয় হলো, ব্রিটিশ বিরোধী আন্দোলনের অন্যতম এই অগ্নিকন্যা সুনীতি রায় চৌধুরী ১৯৮৮ সালে মারা যাবার পর তাঁর স্মরণে এই প্রথম নবীনগরে কোন স্মরণ অনুষ্ঠান ভার্চুয়ালি অনুষ্ঠিত হল।

(জিডি/এসপি/মে ২৩, ২০২২)